তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা (রংপুর):
রেল স্টেশনে এলামেলো ভাবে ঘুরছিলেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মালেকা বেগম। নিজের নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারছিলেন না। পড়নের কাপড় দেখে চাকচিক্ক্য মনে হলেও বাড়ি ছাড়া মালেকা বেগম এখন বড় অসহায়। দুই যুবকের কল্যাণে তার বাড়ির ঠিকানা
বের করা হলেও তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে চান না তার একমাত্র আদরের সন্তান শামীম মিয়া। মাকে নিতে আসার ভাড়ার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিলেও না আসায় অবশেষে মালেকা বেগমের ঠাই হয়েছে পীরগাছার দেবী চৌধুরাণী বয়স্ক
পূনর্বাসন কেন্দ্র নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ই নভেম্বর সকালে রংপুরের মীরবাগ বাজারে এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করছিলো মালেকা বেগম (৬২)। এসময় তিনি নিজেরনাম মালেকা ছাড়া কিছুই বলতে পারছিলেন না। তার এ অসহায়ত্বের কথা ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে পাওয়া যায় তার ঠিকানা।
তিনি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানার ধানগড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী নেই। একমাত্র আদরের সন্তানের নাম শামীম মিয়া। সে দিনমজুরী করে সংসার চালান। এরপর ছেলে শামীম মিয়ার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে
তার আর্থিক অবস্থা শোচনীয় বলে অসহায়ত্বের কথা এবং মাকে ফিরে নিতে যাওয়ার ভাড়ার টাকাও কাছে নেই বলে জানান। পরে তার মোবাইল নম্বরে যাতায়াত ভাড়া বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হলেও তিনি আর আসেননি। পরে মোবাইল ফোনে
কল দিলে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি মাকে নিবেন না। আপনারা তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দেন। এরপর মোবাইল বন্ধ করে দেন। পরে কোন উপায়কুল না পেয়ে বৃদ্ধা মালেকা বেগমকে দেবী চৌধুরাণী বয়স্ক পূনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে দেয়া হয়। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে ওই বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে মালেকা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আমার ছেলেকে দেখতে চাই। তার কাছে ফিরে যেতে চাই। ওই বৃদ্ধার বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা বেলাল হোসেন ও
ফুয়াদ শাহরিয়ার বলেন, এর আগেও আমরা কয়েকজন হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এবারের ঘটনাটি ব্যতিক্রম। তার ছেলের সন্ধান পেলেও তিনি মাকে নিতে রাজি না। উল্টো আমাদের সাথে প্রতারণা করে
যাতায়াতের টাকা নিয়ে আর আসেনি। স্থানীয় হিতৈষী মানবাধিকার সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান
বলেন, যে মা ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধরে সন্তান জন্ম দিয়ে লালন পালন করে মানুষ করছে, সেই মাকে সন্তানরা বাড়িতে ফিরিয়ে নিলো না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা সমাজে এমন ঘটনা কামনা করিনা। দেবী চৌধুরানী বয়স্ক পূনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রাজেকা বেগম বলেন, মালেকা বেগম মাঝেমধ্যেই তার ছেলেকে দেখতে চায়। এখানে আসার ১৫ দিন
পেরিয়ে গেলেও তার পরিবারের কেউ দেখতে আসেননি।
বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার ছেলে শামীমের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ
না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।