ঢাকা ০৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারাগাছে সালিশ বৈঠকে গলায় জুতার মালা পরানো মামলায় একজন গ্রেফতার

রংপুরের কাউনিয়ায় গভীররাতে পুত্রবধুর ঘরে ঢোকার অভিযোগ তুলে প্রকাশ্য সালিশ বৈঠকে ভুট্টু বাবুর্চি নামে এক ব্যক্তিকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ৩০ জুলাই শনিবার মনির হোসেন নামে এক মাতাববরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে ৩১ জুলাই রবিবার তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রংপুর আদালতে পাঠিয়ে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের ধুমগড়া গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত ২২ জুলাই শুক্রবার রাতে ভুট্টু মিয়া তার পুত্রবধূর ঘরে ঢুকেছেন বলে অভিযোগ তোলেন ধুমগড়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মনির হোসেন (৩৫) বাবুর্চিসহ কয়েকজন ব্যক্তি। গত ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে এ নিয়ে ধুমগড়া গ্রামে একটি খোলা মাঠে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন মনির হোসেন। একপর্যায়ে মনির হোসেন ও রাসেলসহ আরও এক যুবক বিচারের নামে সালিশ বৈঠকে ভুট্টুকে জুতার মালা পরিয়ে বাজারে ঘোরায় এবং তাকে মারপিট করে। পরে স্থানীয় কয়েকজন এর প্রতিবাদ করে জুতার মালা ছিড়ে ফেলে দেয়। এনিয়ে লোকজনের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটন্থাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত মাতাব্বররা পুলিশ জানায় ভুট্টু ও তার পুত্রবধুর একটি বিষয় নিয়ে সালিসের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু তারা জুতার মালা পরানো বিষয়টি পুলিশের কাছে গোপন রাখে এবং উপস্থিত লোকজনকে মানা করে।


ধুমগড়া গ্রামের নাজু মিয়া জানান, ওইদিন বিচারের নামে সালিশ বৈঠকে ভুট্টুকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর নির্দেশ দেন হারাগাছ পৌরসভার টাংরির বাজার এলাকার আব্দুর রউফ নামে এক ব্যক্তি। এরপর মনির ও রাসেলসহ কয়েকজন যুবক ভুট্টুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে বাজারে ঘোরাতে শুরু করেন। এসময় সালিশের নামে জুতার মালা পরানো হলে ভুট্টু কান্নায় ভেঙে পরেন। তিনি সহ আরো কয়েকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার গলা থেকে জুতার মালা ছিঁড়ে ফেলে দেন।
আরেকজন বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, মাতাব্বর মনির হোসেনের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ভুট্টু মিয়া পূর্ব বিরোধ ছিল। এরই জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য মনিরসহ আরও কয়েকজন সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, স্থানীয় মাতব্বর মনির বাবুর্চিসহ আরও কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মিথ্যে অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মানুষকে সালিশ বৈঠকের নামে হয়রানি করে আসছেন।
ভুট্টুর পুত্রবধূ বলেন, ওইদিন গভীররাতে অন্ধকারে কেউ একজন আমার ঘরে ঢুকেছিলেন। এসময় আমার স্বামী ঘরে ছিলেন না। তখন চিৎকার দিলে ওই লোক পালিয়ে যান। ঘর অন্ধকার থাকায় ঢুকেছিলেন তা চেনতে পারেন নাই। তবে আমার শ্বশুর এসর কাজ করতে পারে না।
ভুট্টু মিয়া বলেন, মিথ্যা অপবাদ তুলে আমাকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে বিচারের নামে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এরপর শনিবার বিকালে মাতাব্বর মনির বাড়ীতে এসে আমাকে ও পুত্রবধুকে মারপিট করে। এ বিষয়ে শনিবার হারাগাছ থানায় অভিযোগ করেছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, গত ২৯ জুলাই বিকেলে ধুমগড়া এলাকায় পারিবারিক বিষয় নিয়ে সেখানে স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠকে উত্তেজনার খবর আসে পুলিশের কাছে। এরপর সেখানে পুলিশ সেখানে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। কিন্তু ঘটনার সময় ভুট্টু মিয়া ও তার পরিবার জুতার মালা পরানোর বিষয়টি পুলিশকে বলে নাই। শনিবার বিষয়টি গোপনে তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে পুুলিশ। পরে ভুট্টুকে থানায় ডেকে আনা হয় এবং তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ নেয়া হয়। রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত মাতাব্বর মনির হোসেনকে আটক করা হয়। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে। মনিরকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৩১ জুলাই রবিবার রংপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারেনর চেষ্ঠা চলছে।

নিউজবিজয়/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

হারাগাছে সালিশ বৈঠকে গলায় জুতার মালা পরানো মামলায় একজন গ্রেফতার

প্রকাশিত সময় :- ০৪:৫৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২

রংপুরের কাউনিয়ায় গভীররাতে পুত্রবধুর ঘরে ঢোকার অভিযোগ তুলে প্রকাশ্য সালিশ বৈঠকে ভুট্টু বাবুর্চি নামে এক ব্যক্তিকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ৩০ জুলাই শনিবার মনির হোসেন নামে এক মাতাববরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে ৩১ জুলাই রবিবার তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রংপুর আদালতে পাঠিয়ে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের ধুমগড়া গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত ২২ জুলাই শুক্রবার রাতে ভুট্টু মিয়া তার পুত্রবধূর ঘরে ঢুকেছেন বলে অভিযোগ তোলেন ধুমগড়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মনির হোসেন (৩৫) বাবুর্চিসহ কয়েকজন ব্যক্তি। গত ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে এ নিয়ে ধুমগড়া গ্রামে একটি খোলা মাঠে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন মনির হোসেন। একপর্যায়ে মনির হোসেন ও রাসেলসহ আরও এক যুবক বিচারের নামে সালিশ বৈঠকে ভুট্টুকে জুতার মালা পরিয়ে বাজারে ঘোরায় এবং তাকে মারপিট করে। পরে স্থানীয় কয়েকজন এর প্রতিবাদ করে জুতার মালা ছিড়ে ফেলে দেয়। এনিয়ে লোকজনের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটন্থাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত মাতাব্বররা পুলিশ জানায় ভুট্টু ও তার পুত্রবধুর একটি বিষয় নিয়ে সালিসের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু তারা জুতার মালা পরানো বিষয়টি পুলিশের কাছে গোপন রাখে এবং উপস্থিত লোকজনকে মানা করে।


ধুমগড়া গ্রামের নাজু মিয়া জানান, ওইদিন বিচারের নামে সালিশ বৈঠকে ভুট্টুকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর নির্দেশ দেন হারাগাছ পৌরসভার টাংরির বাজার এলাকার আব্দুর রউফ নামে এক ব্যক্তি। এরপর মনির ও রাসেলসহ কয়েকজন যুবক ভুট্টুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে বাজারে ঘোরাতে শুরু করেন। এসময় সালিশের নামে জুতার মালা পরানো হলে ভুট্টু কান্নায় ভেঙে পরেন। তিনি সহ আরো কয়েকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার গলা থেকে জুতার মালা ছিঁড়ে ফেলে দেন।
আরেকজন বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, মাতাব্বর মনির হোসেনের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ভুট্টু মিয়া পূর্ব বিরোধ ছিল। এরই জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য মনিরসহ আরও কয়েকজন সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, স্থানীয় মাতব্বর মনির বাবুর্চিসহ আরও কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মিথ্যে অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মানুষকে সালিশ বৈঠকের নামে হয়রানি করে আসছেন।
ভুট্টুর পুত্রবধূ বলেন, ওইদিন গভীররাতে অন্ধকারে কেউ একজন আমার ঘরে ঢুকেছিলেন। এসময় আমার স্বামী ঘরে ছিলেন না। তখন চিৎকার দিলে ওই লোক পালিয়ে যান। ঘর অন্ধকার থাকায় ঢুকেছিলেন তা চেনতে পারেন নাই। তবে আমার শ্বশুর এসর কাজ করতে পারে না।
ভুট্টু মিয়া বলেন, মিথ্যা অপবাদ তুলে আমাকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে বিচারের নামে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এরপর শনিবার বিকালে মাতাব্বর মনির বাড়ীতে এসে আমাকে ও পুত্রবধুকে মারপিট করে। এ বিষয়ে শনিবার হারাগাছ থানায় অভিযোগ করেছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, গত ২৯ জুলাই বিকেলে ধুমগড়া এলাকায় পারিবারিক বিষয় নিয়ে সেখানে স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠকে উত্তেজনার খবর আসে পুলিশের কাছে। এরপর সেখানে পুলিশ সেখানে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। কিন্তু ঘটনার সময় ভুট্টু মিয়া ও তার পরিবার জুতার মালা পরানোর বিষয়টি পুলিশকে বলে নাই। শনিবার বিষয়টি গোপনে তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে পুুলিশ। পরে ভুট্টুকে থানায় ডেকে আনা হয় এবং তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ নেয়া হয়। রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত মাতাব্বর মনির হোসেনকে আটক করা হয়। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে। মনিরকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৩১ জুলাই রবিবার রংপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারেনর চেষ্ঠা চলছে।

নিউজবিজয়/এফএইচএন