লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় মাদক সম্রাট নজরুল ইসলাম নজুর আনন্দ আবাসিকের সকল অপকর্ম বন্ধের দাবিতে গণপিটিশন দিয়েছেন স্থানীয়রা। সেই আবাসিকে প্রকাশ্যে চলে মাদক, জুয়া ও দেহ ব্যবসা। যার ভিডিও ফুটেজ প্রতিনিধির নিকট সংরক্ষণ আছে।
গত সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যার অনুলিপি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রেসক্লাব বরাবরে দেয়া হয়েছে। সেই গণপিটিশনে বিভিন্ন স্তরের প্রায় শতাধিক স্থানীয় স্মাক্ষর করেন।
জানা গেছে, উপজেলার লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের অডিটরিয়াম ও আমতলা বাজারের পাশে নজরুল ইসলাম নজুর আনন্দ আবাসিক নামে দুটি হোটেল রয়েছে। সেই হোটেলে মাদক, জুয়া ও দেহ ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করেন মাদক সম্রাট নজু ও তার ছেলে আনারুল। সেই সকল অপকর্ম বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন গনপিটিশন দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদক সম্রাট নজরুল ইসলাম নজু সকল অপকর্মের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক, জুয়া, দেহ ব্যবসা, নারী পাচার, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের প্রায় ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। মূলত নজুর ছেলে আনারুল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে প্রকাশ্যে এমন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার খান জিহান বলেন, নজু দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে মাদক, জুয়া, দেহ ব্যবসাসহ নান অপকর্ম করে আসছে। এমনকি তার ছেলে আনারুল ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্মে তার বাবাকে সহযোগীতা করে আসছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমিসহ স্থানীয়রা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় আনারুলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। কমিটি গঠন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তারিফ বলেন, নজু ও তার ছেলে আবাসিকে এমন কোন অপকর্ম নাই যে সে করে না। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আশা করি প্রসাশন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
একই কথা বলে আর এক স্থানীয় শিক্ষার্থী নিরু বলেন, নজু ও তার ছেলে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক তুলে দিয়ে সমাজের মেরুদন্ডকে নষ্ট করে ফেলছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই ওই আবাসিকের সকল অপকর্ম বন্ধের পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নিবে প্রসাশন।
এ বিষয়ে আনন্দ আবাসিকের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম নজু বলেন, আমার নামে মাদকের মামলা আছে তাতে সমস্যা কি? অভিযোগ করছে তা কি হয়েছে? আমি সবাইকে টাকা দেই। আপনাদের যা মন চায় লিখে পেপারে দেন।
এ বিষয়ে অডিটরিয়াম চত্বরের আনন্দ আবাসিক-১ এর ঘর মালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে ঘর ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আমতলা বাজারে অবস্থিত আনন্দ আবাসিক-২ এর মালিক রিয়াদ হাসান বলেন, সে যে হোটেলের আড়ালে এসব করে আসছে আমার জানা নেই। কিন্তু গত দু তিনদিন থেকে আমার কানে আসছে। এমনকি আবাসিকের পাশে ফেন্সিডিলের খালি বোতল পেয়েছি। তাই আমি নজরুল ইসলাম নজুকে আবাসিক ছেড়ে দিতে বলেছি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়া পুলিশ খোজ খবর নিচ্ছে। সঠিক তথ্য পেলেই আমরা অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর আমিও সেখানে অভিযান পরিচালনা করবো।