Ali Akhtar Golam Kibria
ফেসবুক থেকে…………..
হাতীবান্ধায় শিরকের উৎসব
আগামী রোববার,কার্যক্রম শুরু
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে শাহ্ গরীবুল্যাহর মাজার প্রাঙ্গণে প্রতি বছরের মতো এবারও ইসালে সওয়াবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার, আগামী রোববার অর্থাৎ ২২শে জানুয়ারি এই ইসালে সওয়াব অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে মেলার পর্ব শুরু হয়ে গেছে। প্রধান সড়কের দুপাশে এবং হাতীবান্ধা এসএস সরকারি হাইস্কুলের মাঠে ব্যাপক পরিসরে দোকানপাট বসতে শুরু করেছে, বেচাকেনা চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। ইসালে সওয়াবে তাফসির মাহফিল থাকলেও সাধারণত দোকানপাটের মেলা প্রধান হয়ে ওঠে। এই মেলায় অগণিত মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়, মাঝে মাঝে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। কখনও কখনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে।
শাহ্ গরীবুল্যাহর মাজারে টাকাপয়সা, চাল, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন মানত সংগ্রহ করা হয়। মাজারের ভেতরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ সেজদা ও প্রার্থনা করার জন্য ভক্তগণ সমবেত হয়। অথচ যাকে ঘিরে এতকিছু, সেই শাহ্ গরীবুল্যাহ সাহেবের দরবেশ হওয়ার ইতিহাস, ধর্মীয় প্রচার ও ভূমিকা সম্পর্কে কেউই কিছু বলতে পারেন না। কেউ কেউ বলেন, তিনি ভালো মানুষ ছিলেন এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন নির্বাহ করতেন। তিনি নাকি একদিন সূর্যের আলো দিয়ে বিড়ি ধরিয়েছিলেন। সত্য হোক মিথ্যা হোক, এই বিড়ি ধরার কেরামতি ধীরে ধীরে এক কান থেকে লক্ষ কান হয়ে গেল। এরপর চলতে থাকে তাঁর কবরকে কেন্দ্র করে শিরক ও বিদাতের নানা কর্মকাণ্ড।
সাধারণত স্থানীয় সুশীল ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি এই আয়োজন পরিচালনা করেন। কমিটিতে শিক্ষিত ব্যক্তিরাই নেতৃত্ব দেন। আমার বিশ্বাস, কমিটির কর্তাব্যক্তিরা ইসালে সওয়াবের নামে কবরপূজার পাপ ও দায় এড়াতে পারবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পাকড়াও করবেন। মাজারপূজা বা কবরপূজা সম্পর্কে ইসলামে কী বলা হয়েছে – সে সম্পর্কে সামান্য কিছু উপস্থাপন করতে চাই।
ইসলামে বলা হয়েছে, মৃত অলি-আউলিয়া বা নবি মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অছিলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা বা বিশ্বাস করা শিরক। শিরক হচ্ছে সরাসরি আল্লাহকে জুলুম করা। এটা এমন এক মহা পাপ – যা আল্লাহ কখনই ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কোরানে ঘোষণা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ তোমার প্রভু চূড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করবে না। [বনী ইসরাইল – ২৩]। তাই শাফায়াতের জন্য কিংবা বালামুসিবত থেকে মুক্তির জন্য মৃত নবি বা অলির নিকট দোয়া করা শিরক।
আল্লাহ বলেন, أَمَّنْ يُّجِيْبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوْءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ أَإِلَهٌ مَّعَ اللهِ- কে অসহায়ের প্রার্থনায় সাড়া দেন এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহ ব্যতীত কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? [নামল – ৬২]
অনেকেই উঠতেবসতে, বিপদে-আপদে পির-মুরশিদ, অলি-আউলিয়া, নবি-রাসুলদের নাম নেন। অথচ আল্লাহ বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাকো, তারা তোমাদেরই মতো দাস। [আরাফ – ১৯৪]
কিছু কবরপূজারী রয়েছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি গায়ে মাখে, কবরকে সিজদা করে, কবরের সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। তারা সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায়, অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, বাবা, আমি অনেক দূর থেকে হাজির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না।
অথচ আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَّ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُوْنَ- তাদের থেকে অধিকতর দিকভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। [আহক্বাফ – ৫]
রাসুল সা. বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাঁর সমকক্ষ বা অংশীদার মনে করে, তার নিকট প্রার্থনা করে আর ওই অবস্থায় মারা যায় – সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [বুখারী – ৪৪৯৭।]
কবরপূজারীরা অনেকেই বিশ্বাস করে, অলি-আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের উপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন, উপকারও করেন।
অথচ আল্লাহ বলেন, وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَآدَّ لِفَضْلِهِ- আর যদি আপনার প্রতিপালক আপনাকে কোনো অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অমঙ্গলের বিমোচক নন। আর যদি তিনি আপনার মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে রুখবার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। [ইউনুস – ১০৭]।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. অভিসম্পাত করেছেন সেসব লোকদের যারা কবরকে সেজদা করে এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলন করে। [তিরমিযি -২/১৩৬]
নিউজ বিজয়ের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন।
একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করা, অন্য কারও কাছে প্রার্থনা করা, অন্য কারও নামে মানত করা শিরক। কবরে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে অনেকেই শিরকে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে ইসালে সওয়াবের নামে চলছে শিরকের সেই মহা উৎসব। শিরকের এই উৎসব শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিরোধ করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি। আমি হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে থাকি। আমার ধারণা, আমার এই লেখা অনেককে ক্ষুব্ধ করবে। তবুও লিখলাম। কারণ একজন মুসলমান হিসেবে ধর্মীয় দায়িত্ববোধ থেকেই কথাগুলো বলতে হলো। কে মানবেন না মানবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার। প্রার্থনা করি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সৎকাজ ও সৎপথে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য হেদায়েত দান করুন।
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন