ঢাকা ০৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে তরুণ-তরুণীর কারাগারেই বিয়ে সম্পন্ন

কারাগারেই বিয়ে দেয়া হয় তরুণ-তরুণীর

আগে থেকেই কারাগারে সেজে বর প্রস্তুত ছিলেন। উভয় পক্ষের স্বজন ও অভিভাবকদের সাথে নিয়ে ৮ লাখ টাকা দেনমোহরে কারাগারেই বিয়ে দেয়া হয় তরুণ-তরুণীর। এমন ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাট কারাগারে।

আর এ উপলক্ষে মেয়ের বাড়িকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় আয়োজন করে কনের পরিবার। কিন্তু আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী ৪ ডিসেম্বর লালমনিরহাট কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও জেল সুপার চিঠি পায়নি। কনের বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও বর আসেনি।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ওই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে একই এলাকার রকিবুজ্জামান রকিবকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠান পুলিশ। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দুইজনকে বিয়ে প্রদানের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। পরে দুই পরিবারের সম্মতি ও আপিল বিভাগের আদেশে ১৭ বছরের তরুণীর সঙ্গে ধর্ষণ মামলার আসামির বিয়ে দিয়েছেন লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে রকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একইদিন অপহরণের শিকার হওয়া তরুণীকে উদ্ধার করে এবং রকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মেডিকেল পরীক্ষায় ওই মেয়ে গর্ভবতী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে ওই গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। মামলায় গত জুন মাসে আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আসামি রকিবুজ্জামান রকিবের জামিন স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগ পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালতে। এর মধ্যে জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষও। শুনানিতে আসামিপক্ষ লিখিতভাবে আদালতকে জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ের ব্যবস্থা করতে উভয়পক্ষ রাজি হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।

এদিকে শুনানিতে উপস্থিত থাকা ভুক্তভোগীর বাবা আপিল বিভাগকে জানান, তার মেয়েও বিয়ে করতে আগ্রহী। পরে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ে সম্পন্ন করেন জেল সুপার উমর ফারুক। পরে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) কারাগারে থাকা আসামির জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘আদালত যে আদেশ দিয়েছে আমি তাতে অনেক খুশি। সেই আদেশে আমি শুক্রবার বিয়ের কার্ড করে শত শত মানুষকে আমন্ত্রণ পত্র দিয়েছি। কিন্তু পরে জানতে পারি আমার মেয়ের জামাই এখনো কারাগার থেকে বের হয়নি।’

লালমনিরহাট জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আমজাদ হুসাইন সরকার জানান, আদালতের আদেশে কারাগারে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা কারাগারে এই প্রথম এ রকম বিয়ের আয়োজন করা হলো।

লালমনিরহাট জেল সুপার উমর ফারুক জানান, দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দেন মোহরানা ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। আপিল বিভাগ থেকে আসামি মুক্তির নির্দেশের কাগজপত্র এলেই সে কারাগার থেকে মুক্তি পাবে।

নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

লালমনিরহাটে তরুণ-তরুণীর কারাগারেই বিয়ে সম্পন্ন

প্রকাশিত সময় :- ০৬:০৩:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

আগে থেকেই কারাগারে সেজে বর প্রস্তুত ছিলেন। উভয় পক্ষের স্বজন ও অভিভাবকদের সাথে নিয়ে ৮ লাখ টাকা দেনমোহরে কারাগারেই বিয়ে দেয়া হয় তরুণ-তরুণীর। এমন ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাট কারাগারে।

আর এ উপলক্ষে মেয়ের বাড়িকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় আয়োজন করে কনের পরিবার। কিন্তু আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী ৪ ডিসেম্বর লালমনিরহাট কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও জেল সুপার চিঠি পায়নি। কনের বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও বর আসেনি।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ওই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে একই এলাকার রকিবুজ্জামান রকিবকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠান পুলিশ। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দুইজনকে বিয়ে প্রদানের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। পরে দুই পরিবারের সম্মতি ও আপিল বিভাগের আদেশে ১৭ বছরের তরুণীর সঙ্গে ধর্ষণ মামলার আসামির বিয়ে দিয়েছেন লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে রকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একইদিন অপহরণের শিকার হওয়া তরুণীকে উদ্ধার করে এবং রকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মেডিকেল পরীক্ষায় ওই মেয়ে গর্ভবতী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে ওই গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। মামলায় গত জুন মাসে আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আসামি রকিবুজ্জামান রকিবের জামিন স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগ পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালতে। এর মধ্যে জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষও। শুনানিতে আসামিপক্ষ লিখিতভাবে আদালতকে জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ের ব্যবস্থা করতে উভয়পক্ষ রাজি হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।

এদিকে শুনানিতে উপস্থিত থাকা ভুক্তভোগীর বাবা আপিল বিভাগকে জানান, তার মেয়েও বিয়ে করতে আগ্রহী। পরে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ে সম্পন্ন করেন জেল সুপার উমর ফারুক। পরে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) কারাগারে থাকা আসামির জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘আদালত যে আদেশ দিয়েছে আমি তাতে অনেক খুশি। সেই আদেশে আমি শুক্রবার বিয়ের কার্ড করে শত শত মানুষকে আমন্ত্রণ পত্র দিয়েছি। কিন্তু পরে জানতে পারি আমার মেয়ের জামাই এখনো কারাগার থেকে বের হয়নি।’

লালমনিরহাট জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আমজাদ হুসাইন সরকার জানান, আদালতের আদেশে কারাগারে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা কারাগারে এই প্রথম এ রকম বিয়ের আয়োজন করা হলো।

লালমনিরহাট জেল সুপার উমর ফারুক জানান, দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা দেন মোহরানা ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। আপিল বিভাগ থেকে আসামি মুক্তির নির্দেশের কাগজপত্র এলেই সে কারাগার থেকে মুক্তি পাবে।

নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন