ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ

  • ইসলাম ডেস্ক:-
  • প্রকাশিত সময় :- ০৯:১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
  • ৩৬৫ পড়া হয়েছে। নিউজবিজয় ২৪.কম-১৫ ডিসেম্বরে ৯ বছরে পর্দাপন

মেরাজের কথা কম-বেশি সবারই জানা। মেরাজের সফরে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে হাদিসের বর্ণনায় সে ঘটনা সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠেছে। কীভাবে ফরজ হয়েছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ?

হাদিসের দীর্ঘ বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-

হজরত ইবনে হায্ম ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, …আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। আমি সেটা নিয়ে ফিরে আসি। মুসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান, আপনার উম্মত তো এতটা পালন করতে পারবে না। আমি তখন ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছুটা কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা আলাইহিস সালামকে পার হওয়ার সময় বললাম, কিছুটা অংশ (আল্লাহ) কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটুকুও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।

তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আলাইহিস সালামএর কাছে গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে পারবে না। তখন আমি আবার গেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচটিই (পূণ্যের হিসাবে) ৫০ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি আবার মুসা আলাইহিস সালামএর কাছে গেলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে আরেকবার যান। আমি বললাম, আরেকবার আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে সময় সেটি নানা রঙে রঞ্জিত ছিল। আমি এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।’ (বুখারি ৩৪৯)

এরপর থেকে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ বা অবশ্যক কর্তব্য। এই পাঁচ ওয়াক্ত হলো- ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা।

কীভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলো বুখারির এ বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। হাদিসের পুরো বর্ণনাটি ছিল এমন-

হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা দেন, ‘আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার ঘরের ছাদ খুলে দেওয়া হলো। তারপর জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে দিলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে এসে আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। এরপর আমাকে হাত ধরে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন।

দুনিয়ার আকাশে পৌঁছে জিবরিল আলাইহিস সালাম আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। আসমানের রক্ষক বললেন, আপনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, আমি জিবরিল আলাইহিস সালাম। (আকাশের রক্ষক) বললেন, আপনার সঙ্গে কি কেউ রয়েছেন? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, হ্যাঁ, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন। রক্ষক তখন বললেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, হ্যাঁ।

এরপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমান খুলে দেওয়া হলো, আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম, তখন দেখি সেখানে একজন বসে আছেন যাঁর ডানে এবং বাঁয়ে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে। তিনি ডানদিকে তাকালে হেসে উঠছেন, আর বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন। তিনি বললেন, স্বাগত, হে সৎ নবি ও সৎ সন্তান। আমি জিবরিল আলাইহিস সালাম কে প্রশ্ন করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম আলাইহিস সালাম। তাঁর ডানে-বাঁয়ে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতি, বাঁ দিকের লোকেরা জাহান্নামি। তাই ডানে তাকালে তিনি হাসছেন, বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন।

এরপর জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। তারপর এর রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখন এই রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতোই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেওয়া হলো।’

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু উল্লেখ করেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসমানগুলোতে আদম আলাইহিস সালাম, ইদ্রিস আলাইহিস সালাম, মুসা আলাইহিস সালাম, ঈসা আলাইহিস সালাম ও ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ পান।

তবে আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু সেসব স্থান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। শুধু এটুকু উল্লেখ করেছেন যে তিনি আদম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার আকাশে ও ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছিলেন।’

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিয়ে ইদ্রিস আলাইহিস সালামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ইদ্রিস আলাইহিস সালাম বলেন, বাহ্, ও ভাই, ও পুণ্যবান নবি! আমি (রাসুলুল্লাহ) বললাম, তিনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন ইনি হচ্ছেন ইদ্রিস আলাইহিস সালাম।

এরপর আমি মুসা আলাইহিস সালামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, বাহ্, হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই! আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি মুসা আলাইহিস সালাম।

এরপর আমি ঈসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই! আমি প্রশ্ন করলাম, তিনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, তিনি ঈসা আলাইহিস সালাম। তারপর আমি ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে পেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে পুণ্যবান নবি ও পুণ্যবান সন্তান! আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম।’

ইবনে শিহাব বলেন, ইবনে হায্ম (রহ.) আমাকে বলেছেন যে ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আল-আনসারি উভয়েই বলতেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এরপর আমাকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়া হলো। এমন একটি সমতল স্থানে নেওয়া হলো যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পেলাম।

হজরত ইবনে হায্ম ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। আমি সেটা নিয়ে ফিরে আসি। মুসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান, আপনার উম্মত তো এতটা পালন করতে পারবে না। আমি তখন ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছুটা কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা আলাইহিস সালামকে পার হওয়ার সময় বললাম, কিছুটা অংশ (আল্লাহ) কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটুকুও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।

তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আলাইহিস সালামএর কাছে গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে পারবে না। তখন আমি আবার গেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচটিই (পূণ্যের হিসাবে) ৫০ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি আবার মুসা আলাইহিস সালামের কাছে গেলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে আরেক বার যান। আমি বললাম, আরেক বার আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে সময় সেটি নানা রঙে রঞ্জিত ছিল। আমি এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।’ (বুখারি ৩৪৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উর্ধ্ব জগতের সেই সফরে আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য উপহার স্বরূপ পেয়েছেন ৫ ওয়াক্ত নামাজ। যা প্রতিদিন আদায় করা মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক। মেরাজের প্রস্তুতি ও প্রাপ্তি নিয়ে এভাবে বিশদ বর্ণনা হাদিসের বর্ণনায় এভাবেই ওঠে এসেছে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফরজ হওয়া ৫ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমেই ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সাওয়াব পাওয়ার আমল অব্যাহত রাখা।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। ফরজ হওয়া নামাজগুলো যথাসময়ে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

যেভাবে হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ

প্রকাশিত সময় :- ০৯:১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

মেরাজের কথা কম-বেশি সবারই জানা। মেরাজের সফরে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে হাদিসের বর্ণনায় সে ঘটনা সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠেছে। কীভাবে ফরজ হয়েছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ?

হাদিসের দীর্ঘ বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-

হজরত ইবনে হায্ম ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, …আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। আমি সেটা নিয়ে ফিরে আসি। মুসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান, আপনার উম্মত তো এতটা পালন করতে পারবে না। আমি তখন ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছুটা কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা আলাইহিস সালামকে পার হওয়ার সময় বললাম, কিছুটা অংশ (আল্লাহ) কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটুকুও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।

তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আলাইহিস সালামএর কাছে গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে পারবে না। তখন আমি আবার গেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচটিই (পূণ্যের হিসাবে) ৫০ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি আবার মুসা আলাইহিস সালামএর কাছে গেলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে আরেকবার যান। আমি বললাম, আরেকবার আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে সময় সেটি নানা রঙে রঞ্জিত ছিল। আমি এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।’ (বুখারি ৩৪৯)

এরপর থেকে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ বা অবশ্যক কর্তব্য। এই পাঁচ ওয়াক্ত হলো- ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা।

কীভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলো বুখারির এ বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। হাদিসের পুরো বর্ণনাটি ছিল এমন-

হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা দেন, ‘আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার ঘরের ছাদ খুলে দেওয়া হলো। তারপর জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে দিলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে এসে আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। এরপর আমাকে হাত ধরে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন।

দুনিয়ার আকাশে পৌঁছে জিবরিল আলাইহিস সালাম আসমানের রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। আসমানের রক্ষক বললেন, আপনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, আমি জিবরিল আলাইহিস সালাম। (আকাশের রক্ষক) বললেন, আপনার সঙ্গে কি কেউ রয়েছেন? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, হ্যাঁ, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন। রক্ষক তখন বললেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, হ্যাঁ।

এরপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমান খুলে দেওয়া হলো, আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম, তখন দেখি সেখানে একজন বসে আছেন যাঁর ডানে এবং বাঁয়ে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে। তিনি ডানদিকে তাকালে হেসে উঠছেন, আর বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন। তিনি বললেন, স্বাগত, হে সৎ নবি ও সৎ সন্তান। আমি জিবরিল আলাইহিস সালাম কে প্রশ্ন করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম আলাইহিস সালাম। তাঁর ডানে-বাঁয়ে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতি, বাঁ দিকের লোকেরা জাহান্নামি। তাই ডানে তাকালে তিনি হাসছেন, বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন।

এরপর জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। তারপর এর রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখন এই রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতোই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেওয়া হলো।’

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু উল্লেখ করেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসমানগুলোতে আদম আলাইহিস সালাম, ইদ্রিস আলাইহিস সালাম, মুসা আলাইহিস সালাম, ঈসা আলাইহিস সালাম ও ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ পান।

তবে আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু সেসব স্থান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। শুধু এটুকু উল্লেখ করেছেন যে তিনি আদম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার আকাশে ও ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছিলেন।’

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিয়ে ইদ্রিস আলাইহিস সালামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ইদ্রিস আলাইহিস সালাম বলেন, বাহ্, ও ভাই, ও পুণ্যবান নবি! আমি (রাসুলুল্লাহ) বললাম, তিনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন ইনি হচ্ছেন ইদ্রিস আলাইহিস সালাম।

এরপর আমি মুসা আলাইহিস সালামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, বাহ্, হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই! আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি মুসা আলাইহিস সালাম।

এরপর আমি ঈসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে সৎ নবি ও পুণ্যবান ভাই! আমি প্রশ্ন করলাম, তিনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, তিনি ঈসা আলাইহিস সালাম। তারপর আমি ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে পেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে পুণ্যবান নবি ও পুণ্যবান সন্তান! আমি বললাম, ইনি কে? জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি ইবরাহিম আলাইহিস সালাম।’

ইবনে শিহাব বলেন, ইবনে হায্ম (রহ.) আমাকে বলেছেন যে ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আল-আনসারি উভয়েই বলতেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এরপর আমাকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়া হলো। এমন একটি সমতল স্থানে নেওয়া হলো যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পেলাম।

হজরত ইবনে হায্ম ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। আমি সেটা নিয়ে ফিরে আসি। মুসা আলাইহিস সালামকে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান, আপনার উম্মত তো এতটা পালন করতে পারবে না। আমি তখন ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছুটা কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা আলাইহিস সালামকে পার হওয়ার সময় বললাম, কিছুটা অংশ (আল্লাহ) কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটুকুও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।

তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা আলাইহিস সালামএর কাছে গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে পারবে না। তখন আমি আবার গেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচটিই (পূণ্যের হিসাবে) ৫০ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি আবার মুসা আলাইহিস সালামের কাছে গেলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে আরেক বার যান। আমি বললাম, আরেক বার আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে সময় সেটি নানা রঙে রঞ্জিত ছিল। আমি এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।’ (বুখারি ৩৪৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উর্ধ্ব জগতের সেই সফরে আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য উপহার স্বরূপ পেয়েছেন ৫ ওয়াক্ত নামাজ। যা প্রতিদিন আদায় করা মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক। মেরাজের প্রস্তুতি ও প্রাপ্তি নিয়ে এভাবে বিশদ বর্ণনা হাদিসের বর্ণনায় এভাবেই ওঠে এসেছে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফরজ হওয়া ৫ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমেই ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সাওয়াব পাওয়ার আমল অব্যাহত রাখা।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। ফরজ হওয়া নামাজগুলো যথাসময়ে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন