বইয়ের সঙ্গে বাঙালির সখ্য পুরনো হলেও পছন্দের বইয়ের সরবরাহ নিয়ে কমবেশি সব পাঠক-পাঠিকাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। নীলক্ষেত, আজিজ মার্কেট এলাকাতে পছন্দের সব বই পাওয়া গেলেও ঢাকার বাইরে নিজেদের চাহিদানুযায়ী বই সংগ্রহ করা বেশ দুষ্কর। আর সেসব পাঠকের চাহিদা মিটাতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ। আর বাংলাদেশের ভোলা জেলার বুকশপের মধ্যে সর্বপ্রথম বৃহৎ আকারে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের কথা বললে চলে আসে ‘পাঠশালা বুক সেন্টার’-এর নাম। বর্তমানে ভোলা জেলায় বুকশপ অনেকগুলো থাকলেও সবচেয়ে বড় সংগ্রহ পাঠশালাতেই। নতুন আর পুরনো লেখক বা লেখিকা হোক, নতুন বই প্রকাশ হলে সে বই পাঠশালাতে থাকবে না সেটা তো হয় না! পাঠক-পাঠিকা যেমন বই কিনতে পাঠশালাতে দ্বারস্থ হচ্ছেন, তেমনি প্রকাশক ও লেখকরা পাঠশালাতে বই প্রদান করে চাহিদা পূরণ করছেন।
পাঠশালা বুক সেন্টার শুরু হয় ২০০৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ভোলা জেলার বাংলা স্কুল মোড়ে ছোট এক দোকানে স্বল্পসংখ্যক বই নিয়ে। যদিও তখন ভোলা জেলায় স্কুল বা মাদ্রাসার বই ছাড়া অন্য কোন বই যেমন কলেজের পাঠ্যবই, গল্প, উপন্যাস, ধর্মীয় বই সহ অন্যান্য বই বিক্রির কোন প্রচলন ছিলো , কিন্তু পাঠশালা বুক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতার পরিকল্পনা ছিল সুদূরপ্রসারি। তবে এর জন্য ঝড়-ঝাপটা কম পোহাতে হয়নি। ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে থেমে যাননি পাঠশালা বুক সেন্টার-এর চেয়ারম্যান মোঃ আল মাসুদ , সিইও মাহামুদুল হাসান মাহিন (বর্তমান) । তাদের লক্ষ্য ছিল দেশের সবখানে বই পৌঁছে দেওয়া এবং চাকরিজীবী না হয়ে নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার। সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান গড়ে তোলার।
প্রথম দিকে সব বই সরবরাহ করা সহজ ছিল না পাঠশালার জন্য। যেসব বই তাদের সংগ্রহে ছিল না, সেগুলো অন্য স্থান থেকে সংগ্রহ করে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে চেষ্টার কমতি ছিল না তাদের। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে পাঠশালার বই বিক্রির সংখ্যা ছিল ৬ লাখের বেশি, যেখানে ২০১৮ সালে বিক্রি হয়েছিল ৪ লাখের বেশি। কোন ধরনের বইয়ের চাহিদা বেশি সেটা জানতে চাইলে পাঠশালা বুক সেন্টার থেকে জানানো হয় কলেজের পাঠ্য বইয়ের কাটতি সবচেয়ে বেশি। এরপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, উপন্যাস আর অনুবাদ তো আছেই। উপন্যাসের মধ্যে বরাবরের মতো এখনো সবচেয়ে বেশি চাহিদা হুমায়ূন আহমেদ আর জাফর ইকবালের লেখা বিভিন্ন সায়েন্স ফিকশনের। এছাড়া উঠতি লেখকের বইয়ের চাহিদারও কমতি নেই।
পাঠশালা বুক সেন্টার এর আরও কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে পাঠশালা জানায়, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য সবার কাছে বই পৌঁছে দেওয়া। তাই অন্য কোন ক্ষেত্রে আমরা আলাদা করে জোর দিচ্ছি না। তবে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী এর পরিবর্তন হতে পারে। আমরা চাই সর্বদা ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে।’
শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা : মানুষের কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা নিজেদের দায়িত্ব মনে করে পাঠশালা। আর সেই লক্ষ্য সামনে রেখে তারা তাদের কালেকশনে রেখেছে বাচ্চাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বই সহ ‘অন্যরকম বিজ্ঞান’ বাক্স নামে ২০ থেকে ৫০ ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করার মতো সায়েন্স কিট তাদের সংগ্রহে রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পেরিস্কোপ আর সোলার সিস্টেম নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক এক্সপেরিমেন্ট কিট। পাঠশালা মনে করে, এ ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট বাচ্চাদের তো বটেই বড়দেরও বিভিন্ন আকর্ষণীয় এক্সপেরিমেন্ট করতে সহায়তা করবে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে উপভোগ্য করে তুলতে আর শিশুদের মনের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করবে।
ইসলামি পণ্য : ধর্মীয় বইয়েরও রয়েছে পাঠশালাতে বিশাল সমাহার।
ছাড় ও সুযোগ-সুবিধা : ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন উপলক্ষে পাঠশালাতে সারা বছর হরেক রকম ছাড় আর সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ২০২৪ বইমেলাতে ৩০ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসছে বলে জানানো হয় পাঠশালা থেকে।
নতুন লেখকদের নিয়ে উদ্যোগ: আমরা ভালো লেখক বলতে হাতেগোনা কয়েকজনকে চিনি। আর সেসব লেখকের বইয়ের কাটতি নিয়ে না বললেও হয়। তবে তাদের বাইরে কোনো নতুন।
নিউজবিজয়/এফএইচএন