ঢাকা ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুলে না গিয়েও বেতন তোলেন সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে যান না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে স্কুলের হাজিরা খাতায় তাকে নিয়মিত উপস্থিত দেখানো হয়। গত ছয় বছর ধরে মাসে দুই-তিন বার স্কুলে গিয়ে পুরো মাসের সই একবারে করেন তিনি। আবার কখনো সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহকারীর মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়েও সই করেন।
আর এভাবেই সরকারি কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে পাপিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহম্মেদ (মিঠু) তার স্বামী। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ. জ. ম. শফি মাহমুদের ছত্রছায়ায় পাপিয়া এ অনিয়মের সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ অন্য শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮৫ জন। এছাড়া শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ জন। গত ২০১৪ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন পাপিয়া সুলতানা। যোগদানের পাঁচ মাস পর কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ ও আর্থিক অনিয়মের কারণে তাকে দেড় বছর স্কুলের বাইরে থাকতে বলা হয়েছিল। পরবর্তী কমিটির সভাপতি পক্ষে থাকায় আবার স্কুলমুখী হন তিনি।
তবে নিয়মিত স্কুলে যান না পাপিয়া। মাসে দুই-তিনদিন স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় পুরো সপ্তাহের সই করে চলে আসেন। স্কুলে নিয়মিত না যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাকে ঠিকমতো চেনেও না। কিন্তু মাস শেষে বেতন বিলের কাগজে পুরো মাসের সই থাকে। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সইয়ে বেতন ওঠে। নিয়মিত স্কুলে না গিয়েও সরকারি কোষাগার থেকে বেতন তোলায় অন্য শিক্ষকসহ এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।
এক মাস আগেও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা মুখ খোলার সাহস পেতেন না। কিন্তু গত ৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহম্মেদ মিঠু ও একই স্কুলের সহকারী আরেক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্যকলাপের অভিযোগে ওই দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর পর থেকেই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়ার অনিয়ম নিয়ে অন্যরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসের ১ আগস্ট পাপিয়া সুলতানা স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করেন। পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে স্কুল থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর তিনি আর স্কুলে যাননি। তার সইয়ের জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। গত জুলাই মাসে ঈদের ছুটি থাকায় ১০ তারিখে স্কুল চালু হয়। তিন দিনের সই একবারে করেছেন তিনি। এরপর ১৩ তারিখ থেকে পরবর্তী তারিখগুলো ফাঁকা রয়েছে। ফাঁকা ঘরে যেন সই করতে না পারেন সেজন্য শিক্ষা অফিসার সেখানে লম্বা করে টান দিয়ে রেখেছেন। বিদ্যালয়ের ষষ্ট শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এ পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে তিনদিন স্কুলে আসতে দেখেছে তারা। তার একটা ক্লাসও করেছে। তারপর আর দেখা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহকারী আবু সাঈদ বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। আবার যখন স্কুলে আসেন পুরো মাসের অনুপস্থিতির জায়গায় একবারে সই করতেন। অনেক সময় আমাকে এবং সহকারী শিক্ষক জামিল হোসেনকে দিয়ে তাদের নওগঁা শহরের বাসায় খাতা নিয়ে সই করতেন। যদি আমাদের বেতন আটকিয়ে দেয় এই ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারতাম না।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুয়েল হোসেন বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষিকার স্বামী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। এ কারণে তার স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। তবে মাঝেমধ্যে আসেন এবং পুরো মাসের হাজিরা খাতায় সই করেন। এভাবে হাজিরা শিটে পুরো মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন তোলেন। স্কুলে না আসলেও তার বেতন বন্ধ থাকে না। কিন্তু আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি স্কুলে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে সভাপতি এখন পর্যন্ত স্কুলে আসেননি। স্কুলে পকেট কমিটি করে এসব অনিয়ম করা হচ্ছে।
এছাড়া বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মিঠুন কুমার, শাহনাজ সুলতানা ও মঞ্জুরুল আলমও একই অভিযোগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে আমরা চাই না। নতুন মুখ দেখতে চাই। এতেকরে স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরিবারসহ নওগঁা শহরে বসবাস করছেন বর্তমান সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আবু সাদাত শামীম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ.জ. ম. শফি মাহমুদের উপড়ও সাধারণ শিক্ষক এবং এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত। প্রায় পাঁচ বছর থেকে স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন তিনি। বর্তমান যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার মেয়াদও ১ বছর পার হয়ে গেছে। এ সময়রে মধ্যে তিনি কখনো স্কুলে যাননি বলে অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি স্কুলে যাননি। এমনকি স্কুল বিষয়ে কোন আলোচনাও করেন না।
এ বিষয়ে বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আ.জ.ম. শফি মাহমুদ বলেন, স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত মিটিং করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা অসুস্থতার কারণে মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতেন না। বিষয়টি সাধারণ শিক্ষকরাও মেনে নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বেতন বিল তৈরি করেন আর আমি সই করি। তবে বেতন শিটে পুরো মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে সই করা হয়। অনুপস্থিত থাকার পরও বেতন শিটে কীভাবে পুরো মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করা হয়, এতে আপনার দায়ভার আছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও এক সহকারী শিক্ষিকার অপ্রীতিকর ঘটনার পর এই অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। এর আগে এ রকম কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা জানি সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে যান। স্কুলের হাজিরা খাতায় তার প্রমাণও রয়েছে। স্কুলের হাজিরা খাতায় তার সই থাকায় আমরা বুঝবো তিনি নিয়মিত স্কুলে যান। এছাড়া বেতনের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সইয়ে হয়। আমরা শুধু দেখবো হাজিরা খাতায় উপস্থিত আছে কি না। যেহেতু প্রধান শিক্ষকের ঐ অপ্রীতিকর ঘটনার তদন্ত চলছে এটি শেষ হলে সহকারী প্রধান শিক্ষিকার বিষয়টিও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুলে না গিয়েও বেতন তোলেন সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া

প্রকাশিত সময় :- ০২:৫৬:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে যান না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে স্কুলের হাজিরা খাতায় তাকে নিয়মিত উপস্থিত দেখানো হয়। গত ছয় বছর ধরে মাসে দুই-তিন বার স্কুলে গিয়ে পুরো মাসের সই একবারে করেন তিনি। আবার কখনো সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহকারীর মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়েও সই করেন।
আর এভাবেই সরকারি কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে পাপিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহম্মেদ (মিঠু) তার স্বামী। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ. জ. ম. শফি মাহমুদের ছত্রছায়ায় পাপিয়া এ অনিয়মের সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ অন্য শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮৫ জন। এছাড়া শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ জন। গত ২০১৪ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন পাপিয়া সুলতানা। যোগদানের পাঁচ মাস পর কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ ও আর্থিক অনিয়মের কারণে তাকে দেড় বছর স্কুলের বাইরে থাকতে বলা হয়েছিল। পরবর্তী কমিটির সভাপতি পক্ষে থাকায় আবার স্কুলমুখী হন তিনি।
তবে নিয়মিত স্কুলে যান না পাপিয়া। মাসে দুই-তিনদিন স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় পুরো সপ্তাহের সই করে চলে আসেন। স্কুলে নিয়মিত না যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাকে ঠিকমতো চেনেও না। কিন্তু মাস শেষে বেতন বিলের কাগজে পুরো মাসের সই থাকে। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সইয়ে বেতন ওঠে। নিয়মিত স্কুলে না গিয়েও সরকারি কোষাগার থেকে বেতন তোলায় অন্য শিক্ষকসহ এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।
এক মাস আগেও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা মুখ খোলার সাহস পেতেন না। কিন্তু গত ৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহম্মেদ মিঠু ও একই স্কুলের সহকারী আরেক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্যকলাপের অভিযোগে ওই দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর পর থেকেই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়ার অনিয়ম নিয়ে অন্যরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসের ১ আগস্ট পাপিয়া সুলতানা স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করেন। পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে স্কুল থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর তিনি আর স্কুলে যাননি। তার সইয়ের জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। গত জুলাই মাসে ঈদের ছুটি থাকায় ১০ তারিখে স্কুল চালু হয়। তিন দিনের সই একবারে করেছেন তিনি। এরপর ১৩ তারিখ থেকে পরবর্তী তারিখগুলো ফাঁকা রয়েছে। ফাঁকা ঘরে যেন সই করতে না পারেন সেজন্য শিক্ষা অফিসার সেখানে লম্বা করে টান দিয়ে রেখেছেন। বিদ্যালয়ের ষষ্ট শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এ পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে তিনদিন স্কুলে আসতে দেখেছে তারা। তার একটা ক্লাসও করেছে। তারপর আর দেখা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহকারী আবু সাঈদ বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। আবার যখন স্কুলে আসেন পুরো মাসের অনুপস্থিতির জায়গায় একবারে সই করতেন। অনেক সময় আমাকে এবং সহকারী শিক্ষক জামিল হোসেনকে দিয়ে তাদের নওগঁা শহরের বাসায় খাতা নিয়ে সই করতেন। যদি আমাদের বেতন আটকিয়ে দেয় এই ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারতাম না।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুয়েল হোসেন বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষিকার স্বামী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। এ কারণে তার স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। তবে মাঝেমধ্যে আসেন এবং পুরো মাসের হাজিরা খাতায় সই করেন। এভাবে হাজিরা শিটে পুরো মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন তোলেন। স্কুলে না আসলেও তার বেতন বন্ধ থাকে না। কিন্তু আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি স্কুলে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে সভাপতি এখন পর্যন্ত স্কুলে আসেননি। স্কুলে পকেট কমিটি করে এসব অনিয়ম করা হচ্ছে।
এছাড়া বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মিঠুন কুমার, শাহনাজ সুলতানা ও মঞ্জুরুল আলমও একই অভিযোগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকাকে আমরা চাই না। নতুন মুখ দেখতে চাই। এতেকরে স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরিবারসহ নওগঁা শহরে বসবাস করছেন বর্তমান সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আবু সাদাত শামীম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ.জ. ম. শফি মাহমুদের উপড়ও সাধারণ শিক্ষক এবং এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত। প্রায় পাঁচ বছর থেকে স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন তিনি। বর্তমান যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার মেয়াদও ১ বছর পার হয়ে গেছে। এ সময়রে মধ্যে তিনি কখনো স্কুলে যাননি বলে অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি স্কুলে যাননি। এমনকি স্কুল বিষয়ে কোন আলোচনাও করেন না।
এ বিষয়ে বেগুনজোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আ.জ.ম. শফি মাহমুদ বলেন, স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত মিটিং করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা অসুস্থতার কারণে মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতেন না। বিষয়টি সাধারণ শিক্ষকরাও মেনে নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বেতন বিল তৈরি করেন আর আমি সই করি। তবে বেতন শিটে পুরো মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে সই করা হয়। অনুপস্থিত থাকার পরও বেতন শিটে কীভাবে পুরো মাসের উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করা হয়, এতে আপনার দায়ভার আছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও এক সহকারী শিক্ষিকার অপ্রীতিকর ঘটনার পর এই অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। এর আগে এ রকম কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা জানি সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সুলতানা নিয়মিত স্কুলে যান। স্কুলের হাজিরা খাতায় তার প্রমাণও রয়েছে। স্কুলের হাজিরা খাতায় তার সই থাকায় আমরা বুঝবো তিনি নিয়মিত স্কুলে যান। এছাড়া বেতনের বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সইয়ে হয়। আমরা শুধু দেখবো হাজিরা খাতায় উপস্থিত আছে কি না। যেহেতু প্রধান শিক্ষকের ঐ অপ্রীতিকর ঘটনার তদন্ত চলছে এটি শেষ হলে সহকারী প্রধান শিক্ষিকার বিষয়টিও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন