দফায় দফায় তিস্তা-ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী গ্রাম ও চরাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা ও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে তিস্তা-ধরলা তীরবর্তী প্রায় ১৫ হাজার পানিবন্দি পরিবারের মানবেতর দিন কাটছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার দুপুর ১২ টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ২৮ সেঃমিঃ ও ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬ সেঃমিঃ রেকর্ড করা হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে নদীর পানির তীব্র স্রোত ও ভাঙ্গন। উজানের ভারত অংশে গজলডোবায় গতকাল (২০জুন)সোমবার লাল সংকেত জারী করেছে কর্তৃপক্ষ। ভারতীয় সময় সকাল ৬টায় দো-মহনী পয়েন্টে ৮৫.৯৫ বিপদসীমা অতিক্রম করে ৮৫.৯৮ মিটার যা ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ধেয়ে আসছে তিস্তার পানি।
সোমবার দুপুর ১২ টায় তিস্তা অববাহিকায় দোয়ানি পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৮ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৬টায় বাংলাদেশ অংশে তিস্তা ডালিয়ায় বিপদসীমার (৫২.৬০) ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ও সকাল ৯টায় হঠাৎ পানি হ্রাস পেয়ে ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টা মধ্যে হঠাৎ করে বিপদসীমার ২৮ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫ টি উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাতীবান্ধার ডাউয়াবাড়ি আলহাজ আছের মাহমুদ সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল সম্পূর্ণ তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী পাড়ের গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন মাদ্রাসা, কুলাঘাট ইউনিয়নে বোয়ালমারী বাঁশপচাই আদর্শ একাডেমী স্কুলে বন্যার পানি গলা পর্যন্ত হয়ে আছে। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বানভাসিদের আপদকালীন সরকারি সহায়তা হিসেবে নগদ ১১ লাখ টাকা ও ১৫০মেট্রিক টন ত্রাণের চাল বরাদ্দ করেছে জেলা প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপকহারে পানি বৃদ্ধিতে হুহু করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় তিস্তা নদীর ভাটিতে থাকা নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরে বসবাসরত মানুষজনকে নিরাপদস্থানে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে লোকজন ও গবাদি পশু, হাঁস মুরগী নিরাপদে সরিয়ে নিতে বলা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরও জানা যায়, দুপুরে ধরলা নদীর পানি ৬ সেঃমিঃ বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা পাড়ের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারী কমিশন নাজিয়া নওরিন জানান, বন্যা কবলিত এসব পরিবারকে সহায়তা করতে ১৫০.৫০ মেঃটন জিআর চাল, শিশু খাদ্য ক্রয় করতে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, গো খাদ্য কিনতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও জিআর নগদ অর্থ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নিউজ বিজয়/মোঃ নজরুল ইসলাম