ঘড়ির কাটায় দুপুর ১২টা দেখা নেই সূর্যের বইছে হিমেল হাওয়া। ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁয়। কনকনে ঠান্ডার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলের নাজেহাল অবস্থা।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে বাড়ছে শিশু ও বয়স্কদের বিভিন্ন রোগের উপদ্রপ। নওগাঁর বদলগাছীতে আজ রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ডিগ্রি সেলসিয়াস তবুও নওগাঁর বদলগাছীতে সকল কিন্ডারগার্ডেন,প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রেখে চলছে পাঠদান। তীব্র শীত অপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা ও আসছে শিশু এবং শিশুদের অভিভাবকেরা।আবার অনেক বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে নওগাঁর বদলগাছীতে গত ১৭ই জানুয়ারি বুধবার ও ১৮ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো খোলা ছিল।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা যাবে।
আজ রবিবার (২১ জানুয়ারি) নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বদলগাছি আবহাওয়া অধিদপ্তরের টেলিপ্রিন্টর আরমান হোসেন সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাড়ে ১২টার দিকে জানতে চাইলে আরমান হোসেন বলেন, এখন তাপমাত্রা ১৩দশমিক ৫ডিগ্রি। যেটা আমরা অফিসিয়ালভাবে কাউকে জানাই না। আমরা সর্বনিন্ম সকাল ৯টায় আর সর্ব্বোচ্চ সন্ধ্যা ৬টায় রেকর্ড করি। তবে এরপর শিক্ষা অফিসারকে সকাল ৯টার তাপমাত্রা জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সর্বনিন্ম ও সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে থাকি প্রতি তিন ঘন্টা পরপর। আজ সকাল ৬ থেকে ৯ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের অফিসিয়ালভাবে রেকর্ড হয় সকাল ৯টায় সর্বনিন্ম এবং সন্ধ্যা ৬টায় সর্ব্বোচ্চ। এছাড়া আমাদের উর্দ্ধমূখী তাপমাত্রা রেকর্ডের জন্য আরেকটি মেশিন আছে যেটা শুধুমাত্র সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিমাপ করবে। তবে সেটা আনঅফিসিয়াল। শুধুমাত্র আমাদের জানার জন্য।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে নওগাঁ জেলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা দিলেও বিকেল থেকে হিমেল হাওয়া ও সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকায় নওগাঁ জেলাসহ বদলগাছীর সর্বত্র তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষ।।শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে বাড়ছে শিশু ও বয়স্কদের জ্বর,সর্দি,ডাইরিয়া এবং নিউমোনিয়া রোগ।
এ সময় প্রয়োজন ছাড়া শিশু ও বয়স্কদের বাহিরে না চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা পঃপঃ কর্মকর্তা কানিজ ফারহানা।
বদলগাছীর বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় গিয়ে দেখাযায়, শীতের তীব্রতা থাকায় বিদ্যালয় খোলা থাকলেও উপস্থিতির হার খুবই কম।
বদলগাছী লাবণ্যপ্রভা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় ছাত্রীরা আসছে না। আর আজ রবিবার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
কিন্ডারগার্ডেনে আসা শিশু সোহার মা বলেন, গতকাল শনিবার থেকে আমার বাচ্চাকে নিয়ে কিন্ডার গার্ডেনে আসছি। আমার বাচ্চা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে আজ রবিবার সকাল থেকেই প্রচন্ড ঢান্ডা স্কুল ছুটি দেয় নি তাই নিয়ে আসা। তীব্র শীতে বাচ্চাকে নিয়ে আসা খুব বিরক্তিকর পরিস্থিতি।
ফয়জাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানালেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণীকার্যক্রম শুরু হয় সকাল দশটায়। আর জাতীয় সঙ্গিত ও শরীর চর্চার জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে হয় সাড়ে নয়টার দিকে। আর সাড়ে নয়টার দিকে উপস্থিত হতে হলে সেই সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বের হতে হয় নয়টার দিকে। আবার কোনো শিক্ষার্থীদের তারও আগে বাড়ি থেকে বের হতে হবে। তাহলে তো স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেই পড়ছে তারা। তার মতো একইভাবে বলেন জেলার একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবকগণ।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে পাঠদানের ব্যপারে বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন, উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের ছুটির কোন নির্দেশনা না থাকায় ছুটি দেওয়া হয়নি।
এ ব্যপারে বদলগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধের কোন নির্দেশনা না থাকায় পাঠদান দেওয়া হচ্ছে।
আজকের তাপমাত্রা ১০ডিগ্রির নিচে জানিয়ে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করবেন কিনা মোবাইলে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এখনও আবহাওয়া অফিস থেকে জানতে পারিনি। আপনার বিদ্যালয় কখন থেকে শুরু হয় জানতে চাইলে তিনি নয়টার কথা বলেন। তাহলে নয়টার সময় দশের নিচে এক্ষেত্রে কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি সেটা থাকে তাহলে বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে জেলার মাধ্যমিক ও মাদরাসা বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে এখনও নেওয়া হয়নি কোনো সিদ্ধান্ত। আজকে তাপমাত্রা ৯দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিদ্যালয় বন্ধ দিয়েছেন কিনা মোবাইলে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান বলেন, এটা সকাল ৬টা থেকে ৯টায় রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৯টার পর আমি আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়েছি ১১ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমার প্রতিষ্ঠান শুরু হয় ১০টায়, তাহলে কিভাবে বন্ধ দিতে পারি। এরকমই ইঙ্গিত দিলেন তিনি। এবং তিনি আরও বলেন, এখন খোঁজ নিয়ে দেখেন ১৪ ডিগ্রি হয়ে গেছে।
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন