নওগাঁর বদলগাছীর ভান্ডারপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও ভান্ডারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সপ্তাহে দুই দিন বোরবার ও বৃহস্পতিবার বসে কাঁচামালের হাট। ওই দুই দিন হাটে আসা হাটের লোকজন ঠেলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হয়। হাটের লোকজনদের চিল্লাচিল্লিতে দুটি বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে আবার পাঠদানের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করতে পারে না।
দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, ভান্ডারপুর হাটের নির্ধারিত জায়গা থাকার পর বিদ্যালয় মাঠে কাঁচামালের হাট বসছে। বিদ্যালয় মাঠে হাট না বসাতে ইজারাদারকে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু কথা শুনছেন না ইজারাদার।
বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর বন্ধ করতে ইতিপূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেও কোনো কাজ হয়নি। প্রশাসনের কাছে বারবার বলার পরও কাজ না হওয়ায় তাঁরা আর বিদ্যালয় মাঠের হাট নিয়ে প্রতিবাদ করেন না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত রোববার ও বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে, ভান্ডারপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও ভান্ডারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই মাঠ। বিদ্যালয়ের মুল ফটকের পাশে কাঁচামালের বিশাল হাট বসেছে। স্কুল মাঠের ভেতর কয়েকটি ট্রাকও রয়েছে। মাঠের ভেতর চা এবং সিগারেট বিড়ির দোকানও রয়েছে।
দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাটের নির্ধারিত জায়গা থাকার পরও প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রোববার ও বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় মাঠে সকাল থেকে হাট বসে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও আজও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
ওই দুই দিন হাটের লোকজনদের ঠেলে তাদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়। বিদ্যালয় মাঠে হাট বসায় স্বাভাবিক পাঠদান ব্যবহত হয়। শিক্ষার্থীরা পাঠদানের বিরতিতে মাঠে খেলাধূলা করতে পারে না। বিদ্যালয় মাঠে হাট বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন, হাট ইজারাদারের লোকজন এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। উল্টো বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বিরাগভাজন হন। একারণে এখন বিদ্যালয় মাঠে বসা নিয়ে কোন কথা বলেন না তাঁরা।
নবম ও দশম শ্রেণির দুই জন শিক্ষার্থী বলে, হাটের দিনে ঠিকমতো পাঠদান হয় না। আমরা বিদ্যালয় মাঠে খেলতে পারি না। আমাদের বিদ্যালয় মাঠে হাট বসা বন্ধ করতে শিক্ষকদের বলেছি। কিন্তু স্যারেরা কি করে বিদ্যালয় মাঠের হাট বন্ধ হয় না। হাটের দিনে ঠেলাঠেলি করে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়।
ভান্ডারপুর দ্বি-মুখী উচ্চিবদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক বকুল হোসেন বলেন, আমি এখানে প্রধানশিক্ষক হিসেবে যোগদানের অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয় মাঠে হাট বসছে। সপ্তাহে দুই দিন বিদ্যালয় মাঠে হাট বসায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশে প্রভাব পড়ছে। আমরা চেষ্টা করেও বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানো বন্ধ করতে পারিনি।
ভান্ডারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোছাঃ তাহমিনা খাতুন ভান্ডারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বলেন, পাঠাদানের সমস্যা তেমন একটা হয় না। তবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সমস্যা হয়। আমরা বিষয়টি অনেক আগেই উপজেলা প্রাথমিক কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। ভান্ডারপুর উচ্চবিদ্যালয় পরির্দশন করেছি। সপ্তাহে দুদিন বিদ্যালয়ের মাঠে সকাল থেকে সবজির হাট বসে। হাটের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
ভান্ডারপুর হাট ইজারাদার তরিকুল ইসলাম বলেন, ভ্যাটসহ হাটটি ৪১ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। হাটের জায়গা রয়েছে। পাইকারী সবজি কেনাকাটা হয়। পাইকারদের ট্রাক লোড সুবিধার্থে সপ্তাহে দুদিন রোববার-বৃহস্পতিবার হাট বসে। আমরা নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার করি।
বদলগাছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীন বলেন, যদি কোথাও নিয়মিত হাট বসে সেই জায়গাটি হাট হিসেবে ধরা হয়। অনেক আগে থেকে ভান্ডারপুর দ্বি-মুখী উচ্চবিদ্যালয় ও ভান্ডারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাট বসছে বলে জেনেছি। যদি এলাকার লোকজন চায় তাহলে বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাট সরানো হবে।
নিউজবিজয়/এফএইচএন