ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে একই উপজেলায় পাঁচটি সাগর মন মুগ্ধকর করেছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীদের

দিনাজপুর শহর ঘেঁষে পাঁচটি ‘সাগর’। বছরের প্রায় সব সময় এসব ‘সাগর’পাড়ে কমবেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে চলেছে পাঁচ ‘সাগরের’ স্বচ্ছ নীল জল। ‘সাগরের’ কথা মনে ভাসতেই সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শো শো আওয়াজ কানে অনুভূত হয়। কিন্তু এই পাঁচ ‘সাগরের’ পাড়ে সেই আওয়াজ নেই। উল্টো আছে নৈঃশব্দ্য। সঙ্গে বাহারি পাখির গুঞ্জন ।এই পাঁচ ‘সাগরের’ দেখা মিলবে উত্তরের প্রাচীন জনপদ দিনাজপুর সদর উপজেলায়। এগুলোর হলো শুকসাগর, মাতাসাগর, রামসাগর, আনন্দসাগর ও জুলুমসাগর।কৃষিনির্ভর দিনাজপুর রাজা-মহারাজাদের ইতিহাসে যেমন সমৃদ্ধ; তেমনই মন্দির, মসজিদ, বৌদ্ধবিহার, রাজবাটী আর কৃত্রিম সাগরগুলো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।সাগরগুলো নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নানা জনশ্রুতি আছে। কেউ বলেন, প্রচণ্ড খরা থেকে বাঁচতে প্রজাদের কথা চিন্তা করে তৎকালীন রাজা সাগরগুলো খনন করেছিলেন। কারও মতে, অলৌকিকভাবে সাগর তৈরি হয়েছে। আবার কারও ভাষ্য, রাজ্য চালাতে গিয়ে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব সাগর খনন করা হয়েছে। এসব সাগরের পেছনের গল্পই তুলে ধরা হলো।১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে মেজর শেরউইলের জরিপসংক্রান্ত বিবরণ থেকে দিনাজপুরে ১৫ হাজার প্রাচীন দিঘি ও পুকুরের কথা জানা যায়। এসব রাজ-জমিদারি এস্টেটের প্রাচীন কীর্তি। এফ ডব্লিউ স্ট্রং রচিত ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার দিনাজপুর (১৯১২)’–এর তথ্যমতে, রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন শুকদেব রায়। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ, দেবদ্বিজ ভক্ত, সৎকর্মশীল ও উদার মানসিকতার। ১৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে প্রজাদের জন্য এবং স্মৃতিস্বরূপ একটি দিঘি খনন করা হয়েছিল। পরে সেটি নামকরণ করা হয় শুকসাগর।শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে রাজবাটী এলাকায় শুকসাগরের অবস্থান। উত্তর-দক্ষিণ বরাবর সাগরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯৫ মিটার। জলভাগের আয়তন প্রায় ২২ দশমিক ৬৩ একর, আর পাড়ের আয়তন ২২ দশমিক ৯৯ একর। সাগরের উত্তর প্রান্তে রাজা ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে সেটির অস্তিত্ব নেই। সাগরের তিন পাশে আছে নানা গাছগাছালি। সম্প্রতি সাগরপাড়ে ইকোপার্ক তৈরি করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন রাইড, বসার ছাউনি, বে , টি স্টল ও রেস্টহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। সাগরের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে থাকে নানা প্রজাতির মাছ। অতিথি পাখিদের সঙ্গে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যাও। সাগরপাড়ে বনভোজন কিংবা চড়ুইভাতির আয়োজনও করেন ভ্রমণপিপাসুরা।দিনাজপুর শহরের পাশে ঐতিহ্যবাহী মাতাসাগর। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবিতে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরাদিনাজপুর শহরের পাশে ঐতিহ্যবাহী মাতাসাগর। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবিতে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের মতো লাগে। কাছে এলে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাতাসাগরে বাতাসে দুলছে টলটলে জল। সকালে কিংবা বিকেলে এই সাগরে সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন দর্শনার্থীরা। ধবধবে সাদা বক মাছ ধরে উড়ে যাচ্ছে। দল বেঁধে আকাশে ভেসে বেড়ায় পরিযায়ী পাখি। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মাতাসাগর অবস্থিত। এটির দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে গড়ে ৫০০ মিটার, আর প্রস্থ ১৭০ মিটার। সাগরের জলভাগের আয়তন ২১ দশমিক ১৪ একর। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। আয়তন ২৪ দশমিক ৪৬ একর।জানাযায় , দিনাজপুরের প্রথম রাজা শুকদেবের ছিল দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তান রামদেব ও জয়দেব। দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র পুত্রের নাম ছিল প্রাণনাথ। শুকদেবের মৃত্যুর পর নিয়মানুযায়ী সিংহাসনে বসেন জ্যেষ্ঠ পুত্র রামদেব। বছরখানেকের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হলে রাজ্য চালনার ভার পড়ে জয়দেবের ওপরে। ১৬৮২ সালে জয়দেবেরও মৃত্যু হয়। ১৬৭৭-৮২, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে ২ ভাইয়ের মৃত্যু হলে সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র পুত্র প্রাণনাথ। ৪০ বছর রাজত্ব করে রাজবংশের শ্রেষ্ঠ নৃপতিও হন তিনি।এদিকে পরপর দুই সন্তানের মৃত্যুতে মর্মাহত ও শোকাতুর হয়ে পড়েন প্রাণনাথের মা। মায়ের কষ্ট দূর করতে ব্রত পালন ও নানা সামাজিক কাজ করেন প্রাণনাথ। সে সময় এ অ লে সুপেয় পানির কষ্ট ছিল মানুষের। অবশেষে জীবের জন্য জলদানের উদ্দেশ্যে রাজবাটীর দক্ষিণ প্রান্তে একটি দিঘী খনন করেন। মাকে দিয়ে সেই দিঘির উদ্বোধন করেন। পরে সেটির নাম হয় মাতাসাগর। সাগরের পূর্ব পাড়ে স্থাপন করা হয় মা মনসার ঘাট।
নিউজবিজয়/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

রাজধানীতে রাত ১১টার পর চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির

দিনাজপুরে একই উপজেলায় পাঁচটি সাগর মন মুগ্ধকর করেছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীদের

প্রকাশিত সময় :- ০২:৪২:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

দিনাজপুর শহর ঘেঁষে পাঁচটি ‘সাগর’। বছরের প্রায় সব সময় এসব ‘সাগর’পাড়ে কমবেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে চলেছে পাঁচ ‘সাগরের’ স্বচ্ছ নীল জল। ‘সাগরের’ কথা মনে ভাসতেই সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শো শো আওয়াজ কানে অনুভূত হয়। কিন্তু এই পাঁচ ‘সাগরের’ পাড়ে সেই আওয়াজ নেই। উল্টো আছে নৈঃশব্দ্য। সঙ্গে বাহারি পাখির গুঞ্জন ।এই পাঁচ ‘সাগরের’ দেখা মিলবে উত্তরের প্রাচীন জনপদ দিনাজপুর সদর উপজেলায়। এগুলোর হলো শুকসাগর, মাতাসাগর, রামসাগর, আনন্দসাগর ও জুলুমসাগর।কৃষিনির্ভর দিনাজপুর রাজা-মহারাজাদের ইতিহাসে যেমন সমৃদ্ধ; তেমনই মন্দির, মসজিদ, বৌদ্ধবিহার, রাজবাটী আর কৃত্রিম সাগরগুলো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।সাগরগুলো নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নানা জনশ্রুতি আছে। কেউ বলেন, প্রচণ্ড খরা থেকে বাঁচতে প্রজাদের কথা চিন্তা করে তৎকালীন রাজা সাগরগুলো খনন করেছিলেন। কারও মতে, অলৌকিকভাবে সাগর তৈরি হয়েছে। আবার কারও ভাষ্য, রাজ্য চালাতে গিয়ে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব সাগর খনন করা হয়েছে। এসব সাগরের পেছনের গল্পই তুলে ধরা হলো।১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে মেজর শেরউইলের জরিপসংক্রান্ত বিবরণ থেকে দিনাজপুরে ১৫ হাজার প্রাচীন দিঘি ও পুকুরের কথা জানা যায়। এসব রাজ-জমিদারি এস্টেটের প্রাচীন কীর্তি। এফ ডব্লিউ স্ট্রং রচিত ‘ইস্টার্ন বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার দিনাজপুর (১৯১২)’–এর তথ্যমতে, রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন শুকদেব রায়। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ, দেবদ্বিজ ভক্ত, সৎকর্মশীল ও উদার মানসিকতার। ১৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে প্রজাদের জন্য এবং স্মৃতিস্বরূপ একটি দিঘি খনন করা হয়েছিল। পরে সেটি নামকরণ করা হয় শুকসাগর।শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে রাজবাটী এলাকায় শুকসাগরের অবস্থান। উত্তর-দক্ষিণ বরাবর সাগরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯৫ মিটার। জলভাগের আয়তন প্রায় ২২ দশমিক ৬৩ একর, আর পাড়ের আয়তন ২২ দশমিক ৯৯ একর। সাগরের উত্তর প্রান্তে রাজা ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে সেটির অস্তিত্ব নেই। সাগরের তিন পাশে আছে নানা গাছগাছালি। সম্প্রতি সাগরপাড়ে ইকোপার্ক তৈরি করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন রাইড, বসার ছাউনি, বে , টি স্টল ও রেস্টহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। সাগরের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে থাকে নানা প্রজাতির মাছ। অতিথি পাখিদের সঙ্গে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যাও। সাগরপাড়ে বনভোজন কিংবা চড়ুইভাতির আয়োজনও করেন ভ্রমণপিপাসুরা।দিনাজপুর শহরের পাশে ঐতিহ্যবাহী মাতাসাগর। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবিতে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরাদিনাজপুর শহরের পাশে ঐতিহ্যবাহী মাতাসাগর। চারপাশে উঁচু পাহাড়ের মতো ঢিবিতে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের মতো লাগে। কাছে এলে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাতাসাগরে বাতাসে দুলছে টলটলে জল। সকালে কিংবা বিকেলে এই সাগরে সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন দর্শনার্থীরা। ধবধবে সাদা বক মাছ ধরে উড়ে যাচ্ছে। দল বেঁধে আকাশে ভেসে বেড়ায় পরিযায়ী পাখি। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মাতাসাগর অবস্থিত। এটির দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে গড়ে ৫০০ মিটার, আর প্রস্থ ১৭০ মিটার। সাগরের জলভাগের আয়তন ২১ দশমিক ১৪ একর। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। আয়তন ২৪ দশমিক ৪৬ একর।জানাযায় , দিনাজপুরের প্রথম রাজা শুকদেবের ছিল দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তান রামদেব ও জয়দেব। দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র পুত্রের নাম ছিল প্রাণনাথ। শুকদেবের মৃত্যুর পর নিয়মানুযায়ী সিংহাসনে বসেন জ্যেষ্ঠ পুত্র রামদেব। বছরখানেকের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হলে রাজ্য চালনার ভার পড়ে জয়দেবের ওপরে। ১৬৮২ সালে জয়দেবেরও মৃত্যু হয়। ১৬৭৭-৮২, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে ২ ভাইয়ের মৃত্যু হলে সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র পুত্র প্রাণনাথ। ৪০ বছর রাজত্ব করে রাজবংশের শ্রেষ্ঠ নৃপতিও হন তিনি।এদিকে পরপর দুই সন্তানের মৃত্যুতে মর্মাহত ও শোকাতুর হয়ে পড়েন প্রাণনাথের মা। মায়ের কষ্ট দূর করতে ব্রত পালন ও নানা সামাজিক কাজ করেন প্রাণনাথ। সে সময় এ অ লে সুপেয় পানির কষ্ট ছিল মানুষের। অবশেষে জীবের জন্য জলদানের উদ্দেশ্যে রাজবাটীর দক্ষিণ প্রান্তে একটি দিঘী খনন করেন। মাকে দিয়ে সেই দিঘির উদ্বোধন করেন। পরে সেটির নাম হয় মাতাসাগর। সাগরের পূর্ব পাড়ে স্থাপন করা হয় মা মনসার ঘাট।
নিউজবিজয়/এফএইচএন