খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান হলো স্টার্চ। বাংলায় যাকে বলে শ্বেতসার। এটি কার্বোহাইড্রেট বা সুগার জাতীয় খাবার। প্রাণীদেহে শক্তির যোগান দেয় কার্বোহাইড্রেট। এটাই প্রাণীদেহে ক্যালোরির প্রধান উৎস। প্রাণীকুল কিন্তু নিজ থেকে কার্বোহাইড্রেট উৎপাদন করতে পারে না। এজন্য প্রাণীকে নির্ভর করতে হয় উদ্ভিদের উপর। সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের সহায়তায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং পানি থেকে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়ার নাম ফটোসিন্থেসিস। বাংলায় বলে সালোকসংশ্লেষণ। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত কার্বোহাইড্রেটকে উদ্ভিদ স্টার্চ হিসেবে জমা করে রাখে। স্টার্চ কার্বোহাইড্রেটের পলিমারিক রূপ।স্টার্চ মানুষ সহ যাবতীয় প্রাণীর দেহের শক্তির চাহিদা মেটায়। ধান, গম বা আলু থেকেই প্রধানত আমাদের স্টার্চের যোগান আসে। মোদ্দা কথা হলো, বেঁচে থাকার শক্তির জন্য মানুষসহ সকল প্রাণীকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভর করতে হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
এখন প্রশ্ন হলো, উদ্ভিদের সহায়তা ছাড়া পরীক্ষাগারে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে স্টার্চ তৈরি করা সম্ভব কিনা। স্টার্চ একটি জটিল পলিমার। কৃত্রিমভাবে এটি তৈরি করা মোটেও সহজ নয়। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই গবেষণা করে চলেছেন। সম্প্রতি চীন দেশের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। এই প্রক্রিয়ার নাম তাঁরা দিয়েছেন, Artificial Starch Anabolic Pathway সংক্ষেপে ASAP।
এই প্রক্রিয়ায় চীনা বিজ্ঞানীরা প্রথমে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে একটি অজৈব ক্যাটালিস্টের মাধ্যমে মিথানলে রূপান্তরিত করেছেন। তারপর সেই মিথানলকে বিশেষ ধরনের কিছু এনজাইমের মাধ্যমে তিন এবং ছয় কার্বন বিশিষ্ট সুগারে পরিবর্তন করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেই সুগারকে বেশ কয়েকটি ধাপে স্টার্চে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় মোট এগারোটি কেমিক্যাল রিএকশন রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো প্রক্রিয়াটাই করা হয়েছে ল্যাবরেটরীতে, কোনরকম উদ্ভিদের সহায়তা ছাড়াই। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত বিভিন্ন এনজাইমগুলো তৈরি করা হয়েছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে। এটাই হচ্ছে বিজ্ঞানীদের সাফল্য। তাঁরা দাবি করেছেন, এইসব বিশেষ ধরনের এনজাইমের মাধ্যমে উদ্ভিদের চেয়েও দক্ষতার সাথে স্টার্চের মূল উপাদান অ্যামাইলোজ এবং অ্যামাইলো পেকটিন তৈরি করা সম্ভব।
বলাই বাহুল্য, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এই আবিষ্কারটির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে অদূর ভবিষ্যতে মানুষের জন্য কৃষি উৎপাদন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তখন খাদ্যের জন্য মানুষকে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম পন্থা অবলম্বন করতে হবে । ASAP প্রক্রিয়ায় স্টার্চ উৎপাদন এ ব্যাপারে আগাম ভূমিকা রাখতে পারে।
নিউজ বিজয় ২৪.কম/মোঃ নজরুল ইসলাম