২০২৩ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেলেন ক্যাটালিন কারিকো ও ড্রু উইসম্যান। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কার্যকর এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনের বিষয়ে আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পেলেন তারা।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার (২ অক্টোবর) দুপুরে চিকিৎসায় সর্বোচ্চ পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনে আবিষ্কারে এই পুরস্কার পেলেন তারা। কাতালিন ক্যারিকো হাঙ্গেরিয়ান-মার্কিনী বিজ্ঞান এবং ড্র ওয়াইজম্যান মার্কিন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী।
তারা যেই প্রযুক্তিটি আবিষ্কার করেছেন করোনা মহামারীর আগে পরীক্ষামূলক ছিল। এখন তা ব্যবহার করে বহু মানুষকে প্রাণঘাতী করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্নার করোনা টিকা এমআরএনএ প্রযুক্তির। একই প্রযুক্তি ক্যানসারের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণা কাজেও ব্যবহার হচ্ছে।
ঘোষণার আগে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বা সংক্ষিপ্ত তালিকা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। বরাবরের মতোই পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে নোবেল কমিটি।
BREAKING NEWS
The 2023 #NobelPrize in Physiology or Medicine has been awarded to Katalin Karikó and Drew Weissman for their discoveries concerning nucleoside base modifications that enabled the development of effective mRNA vaccines against COVID-19. pic.twitter.com/Y62uJDlNMj— The Nobel Prize (@NobelPrize) October 2, 2023
করোনা টিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম ম্যাসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ। মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার করোনা টিকা এমআরএনএ প্রযুক্তির। এই প্রযুক্তিতে টিকা প্রস্তুতে মৃত বা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত জীবাণু ব্যবহার করা হয় না। বরং ব্যবহার করা হয় এক ধরনের প্রোটিন, যা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহের সহজাত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। পরে সাধারণভাবে এই ভাইরাসটি পরিচিতি পায় নতুন বা নভেল করোনাভাইরাস নামে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল উহানেই।
১৯০১ সাল থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১১৩ জন এই খাতে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল জিতেছেন। এই নোবেলজয়ীদের মধ্যে ১২ জন নারী।
এই শাখায় নোবেলজয়ীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানীর নাম ফ্রেডরিখ জি. ব্যান্টিং। ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার জন্য অতি জরুরি উপকরণ ইনসুলিনের আবিষ্কারের সুবাদে ১৯২৩ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে নোবেল জেতেন ব্যান্টিং।
আর সবচেয়ে বেশি বয়সে এই শাখায় নোবেলজয়ীর নাম পিটন রাউস। দেহে টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাস শনাক্তের সুবাদে ১৯৬৬ সালে যখন পিটন নোবেল পুরস্কার জয় করেন, সে সময় তার বয়স ৮৭ বছর।
এ বছর ২ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ঘোষণা করা হবে নোবেল বিজয়ীদের নাম। সোমবার (২ অক্টোবর) জানা যাবে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পদার্থে, বুধবার (৪ অক্টোবর) রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সাহিত্যে এবং শুক্রবার (৬ অক্টোবর) শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম জানা যাবে। দুদিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।
১৯০১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১৩ বার মোট ২২৫ জনকে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। গত বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জিতেছিলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী সুভান্তে প্যাবো। আদিম মানুষের জিনোম উদঘাটন ও মানব বিবর্তনের জিনোম সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
তার আগের বছর (২০২১ সাল) তাপমাত্রা ও স্পর্শের রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড জুলিয়াস ও আর্ডেম প্যাটাপৌসিয়ান।
ডিনামাইট আবিষ্কারক সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। প্রথম পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সালে। সেময় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সফল, অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তি। যদিও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।
এ বছর অর্থমূল্য বাড়ছে নোবেল পুরস্কারের। গতবারের চেয়ে এ বছরের বিজয়ীরা ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বেশি পেতে চলেছেন।
নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়িয়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।