ঢাকা ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আ’লীগের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে জাপাসহ শরিকরা

  • নিউজ বিজয় ডেস্ক :-
  • প্রকাশিত সময় :- ০১:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ২৮৭ পড়া হয়েছে। নিউজবিজয় ২৪.কম-১৫ ডিসেম্বরে ৯ বছরে পর্দাপন

আ’লীগের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে জাপাসহ শরিকরা

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা), ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ কয়েকটি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন বা দলীয় প্রতীক পাবেন কিনা এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে ক্ষমতাসীন দলটির গত দেড় দশকের মিত্র এই দলগুলো আশা করছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচনী সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

যদিও জাতীয় পার্টির নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, যে সমঝোতা না হলেও তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চাইবেন এবং সেটি পেলে সরকারবিরোধী ভোট পেয়েই তাদের প্রার্থীরা অনায়াসে বিজয়ী হতে পারবেন। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ বা কথাবার্তা হয়নি এবং হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও আছে বলে তিনি মনে করেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তা নিয়ে ভাবছিও না। বরং ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে পারলে সরকারবিরোধী ভোট পেয়ে আমরা আগের চেয়ে ভালো করব।’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন এসব তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অবশ্য বলেন, নৌকা প্রতীক বা আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া নানা কারণেই নির্বাচন হবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। তবে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানান, খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদসহ জোটবদ্ধ দলগুলোর আলোচনা হবে এবং জোট প্রার্থী হিসেবে তারা নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবেন। এছাড়া জেপি ও বিকল্প ধারার মতো দলগুলোর, যাদের একাদশ সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল তারাও এখন তাকিয়ে আছে সরকারি দলের সিদ্ধান্তের দিকেই। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টি দলীয় সভাপতির হাতে উল্লেখ করে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে জাসদ, জেপি, তরিকত ফেডারেশন ও ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এবার আওয়ামী লীগ এককভাবেই ২৯৮টি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী দেয়নি দলটি। গত তিনটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেওয়ার পর মেনন এই আসনে মনোনয়ন পত্রই দাখিল করেননি।

এর পরিবর্তে বরিশাল-২ ও ৩ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। কিন্তু ওই দু’টি আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া দলটির কয়েকজন উভয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হয়েছেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নির্বাচনে অস্ত্র, পেশিশক্তি ও প্রশাসনের ব্যাপার আছে। আওয়ামী লীগ সরকারি দল এবং তাদের লোকজনও আছে। তাদের সমর্থন ছাড়া আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।’ তিনি জানান, আগের নির্বাচনী জোট থাকবে কিনা অর্থাৎ তিনিসহ তার দলের আগের এমপিরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন কিনা সে বিষয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোনো ইঙ্গিত তারা এখনো পাননি।

অন্যদিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগ নেতারা সেখানে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রেখেছেন। আবার জাসদের আরেক এমপি শিরিন আখতারের ফেনী-১ আসনে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক দীর্ঘকালীন মিত্র জেপির একমাত্র সংসদ সদস্য দলটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার পিরোজপুর-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস।

ফলে এসব আসনে জোট নেতারা সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কতটা সুবিধা নিতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে এসব দলের ভেতরেই। যদিও হাসানুল হক ইনু বলেছেন দ্রুতই এসব বিষয়ে সমাধান হবে জোটের মধ্যে।

পরপর তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্প ধারা, তরিকত ফেডারেশনের মতো দলগুলো সহজেই সংসদে আসন পেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে প্রার্থী দেয়ায় জোটের এসব দলগুলো কীভাবে অংশ নেবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এবার হাসানুল হক ইনুসহ জাসদের ৯১ জন, রাশেদ খান মেননসহ ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩ জন, বিকল্প ধারার ১৪ জন, তরিকত ফেডারেশনের ৪৭ জন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু নৌকা প্রতীক অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলে এই প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে কতটা সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে।

এবারও তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবেন মন্তব্য করে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘শিগগিরই বৈঠক করে এগুলো নিরসন করা হবে। জোট নেত্রী এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছেন বিষয়টি।’

এদিকে আবার জাতীয় পার্টি ২৮৬ আসনে প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারানোর সক্ষমতা তাদের কতজনের আছে তা নিয়েও নানা আলোচনা আছে। দলটির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেনন, ‘এমন সংকট নিয়ে আমি দ্বিমত করছি না। তবে এখনো আলোচনায় বসলে অনেক কিছুরই সম্ভাবনা আছে। সব নির্ভর করে মহাজোট নেত্রীর ওপর। দেখি সামনে কী হয়।’ যদিও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গোলাম মাসরুর মাওলা বলছেন, সমর্থন না দিলে সমস্যা নেই কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন ভালো হলে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট আমরাই পাব।’

গত তিন নির্বাচনের তথ্য : ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজেদের জন্য ২৬৪টি আসন রেখে বাকি আসনগুলোতে জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিছু আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। সে কারণে জাতীয় পার্টি মোট ৪৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৭টিতে বিজয়ী হতে পেরেছিল। অন্যদিকে জাসদের তিনজন ও ওয়ার্কার্স পার্টির দু’জন নৌকা প্রতীক নিয়েই বিজয়ী হয়েছিল।

মূলত ২০০৬ সাল থেকে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে মহাজোট গড়ে উঠেছিল তার আলোকেই আসন সমঝোতা করে তখন নির্বাচনে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনে একাই ২৩০ আসনে জিতে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। সেবার জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরকে মন্ত্রীও করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধীরা বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। এ নির্বাচনেও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে গেলেও পরে বিরোধী দল থেকেও কয়েকজন সরকারের মন্ত্রী হন। মন্ত্রী করা হয় রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকেও।

ওই সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, জাসদের পাঁচ, জেপির দু’জন এবং তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফের একজন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

এরপর ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নিলেও এ নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৬৬ আসনে, জাতীয় পার্টি ২২ আসনে এবং বিএনপি জোট ৭টি আসনে জয়ী। আর চারটি আসনে স্বতন্ত্র পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাসদ দু’টি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, বিকল্প ধারা দু’টি, তরীকত ফেডারেশন একটি আসনে জিতেছিল৷ এর বাইরে জেপি বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জিতেছিল।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

নিউজ বিজয় ২৪.কম/মোঃ নজরুল ইসলাম

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

রাজধানীতে রাত ১১টার পর চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির

আ’লীগের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে জাপাসহ শরিকরা

প্রকাশিত সময় :- ০১:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা), ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ কয়েকটি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন বা দলীয় প্রতীক পাবেন কিনা এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে ক্ষমতাসীন দলটির গত দেড় দশকের মিত্র এই দলগুলো আশা করছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচনী সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

যদিও জাতীয় পার্টির নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, যে সমঝোতা না হলেও তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চাইবেন এবং সেটি পেলে সরকারবিরোধী ভোট পেয়েই তাদের প্রার্থীরা অনায়াসে বিজয়ী হতে পারবেন। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ বা কথাবার্তা হয়নি এবং হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও আছে বলে তিনি মনে করেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তা নিয়ে ভাবছিও না। বরং ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে পারলে সরকারবিরোধী ভোট পেয়ে আমরা আগের চেয়ে ভালো করব।’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন এসব তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অবশ্য বলেন, নৌকা প্রতীক বা আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া নানা কারণেই নির্বাচন হবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। তবে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানান, খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদসহ জোটবদ্ধ দলগুলোর আলোচনা হবে এবং জোট প্রার্থী হিসেবে তারা নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবেন। এছাড়া জেপি ও বিকল্প ধারার মতো দলগুলোর, যাদের একাদশ সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল তারাও এখন তাকিয়ে আছে সরকারি দলের সিদ্ধান্তের দিকেই। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টি দলীয় সভাপতির হাতে উল্লেখ করে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে জাসদ, জেপি, তরিকত ফেডারেশন ও ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এবার আওয়ামী লীগ এককভাবেই ২৯৮টি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী দেয়নি দলটি। গত তিনটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে মনোনয়ন দেওয়ার পর মেনন এই আসনে মনোনয়ন পত্রই দাখিল করেননি।

এর পরিবর্তে বরিশাল-২ ও ৩ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। কিন্তু ওই দু’টি আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া দলটির কয়েকজন উভয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হয়েছেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নির্বাচনে অস্ত্র, পেশিশক্তি ও প্রশাসনের ব্যাপার আছে। আওয়ামী লীগ সরকারি দল এবং তাদের লোকজনও আছে। তাদের সমর্থন ছাড়া আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।’ তিনি জানান, আগের নির্বাচনী জোট থাকবে কিনা অর্থাৎ তিনিসহ তার দলের আগের এমপিরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন কিনা সে বিষয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোনো ইঙ্গিত তারা এখনো পাননি।

অন্যদিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগ নেতারা সেখানে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রেখেছেন। আবার জাসদের আরেক এমপি শিরিন আখতারের ফেনী-১ আসনে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক দীর্ঘকালীন মিত্র জেপির একমাত্র সংসদ সদস্য দলটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার পিরোজপুর-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস।

ফলে এসব আসনে জোট নেতারা সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কতটা সুবিধা নিতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে এসব দলের ভেতরেই। যদিও হাসানুল হক ইনু বলেছেন দ্রুতই এসব বিষয়ে সমাধান হবে জোটের মধ্যে।

পরপর তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্প ধারা, তরিকত ফেডারেশনের মতো দলগুলো সহজেই সংসদে আসন পেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে প্রার্থী দেয়ায় জোটের এসব দলগুলো কীভাবে অংশ নেবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এবার হাসানুল হক ইনুসহ জাসদের ৯১ জন, রাশেদ খান মেননসহ ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩ জন, বিকল্প ধারার ১৪ জন, তরিকত ফেডারেশনের ৪৭ জন বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু নৌকা প্রতীক অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলে এই প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে কতটা সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে।

এবারও তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবেন মন্তব্য করে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘শিগগিরই বৈঠক করে এগুলো নিরসন করা হবে। জোট নেত্রী এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছেন বিষয়টি।’

এদিকে আবার জাতীয় পার্টি ২৮৬ আসনে প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারানোর সক্ষমতা তাদের কতজনের আছে তা নিয়েও নানা আলোচনা আছে। দলটির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেনন, ‘এমন সংকট নিয়ে আমি দ্বিমত করছি না। তবে এখনো আলোচনায় বসলে অনেক কিছুরই সম্ভাবনা আছে। সব নির্ভর করে মহাজোট নেত্রীর ওপর। দেখি সামনে কী হয়।’ যদিও দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গোলাম মাসরুর মাওলা বলছেন, সমর্থন না দিলে সমস্যা নেই কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন ভালো হলে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট আমরাই পাব।’

গত তিন নির্বাচনের তথ্য : ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিজেদের জন্য ২৬৪টি আসন রেখে বাকি আসনগুলোতে জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিছু আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। সে কারণে জাতীয় পার্টি মোট ৪৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৭টিতে বিজয়ী হতে পেরেছিল। অন্যদিকে জাসদের তিনজন ও ওয়ার্কার্স পার্টির দু’জন নৌকা প্রতীক নিয়েই বিজয়ী হয়েছিল।

মূলত ২০০৬ সাল থেকে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে মহাজোট গড়ে উঠেছিল তার আলোকেই আসন সমঝোতা করে তখন নির্বাচনে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনে একাই ২৩০ আসনে জিতে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। সেবার জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরকে মন্ত্রীও করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধীরা বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়েছিলেন। এ নির্বাচনেও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে গেলেও পরে বিরোধী দল থেকেও কয়েকজন সরকারের মন্ত্রী হন। মন্ত্রী করা হয় রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুকেও।

ওই সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, জাসদের পাঁচ, জেপির দু’জন এবং তরিকত ফেডারেশন ও বিএনএফের একজন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

এরপর ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নিলেও এ নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২৬৬ আসনে, জাতীয় পার্টি ২২ আসনে এবং বিএনপি জোট ৭টি আসনে জয়ী। আর চারটি আসনে স্বতন্ত্র পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাসদ দু’টি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, বিকল্প ধারা দু’টি, তরীকত ফেডারেশন একটি আসনে জিতেছিল৷ এর বাইরে জেপি বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জিতেছিল।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

নিউজ বিজয় ২৪.কম/মোঃ নজরুল ইসলাম