কুল চাষে নিজের ভাগ্য বদলে দিয়েছে লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ এলাকার কৃষক দুলাল মিয়া নামের এক সফল কুল চাষী।সে ১৯ বছর যাবত কুল চাষ প্রতি বছর সে লাখ,লাখ টাকা উপার্জন করে নিজেকে একজন সফল চাষি হিসেবে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। পাশাপাশি এলাকায় কুল চাষ করে বেশ তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সে এখন কোটিপতি।
কাশমিরী আপেল কুল,ভারত সুন্দরী কুল,বল সুন্দরী কুল প্রভূতি জাতের কুল চাষ করে থাকে। এই জাতের কুলটি আগাম ফল হিসেবে মাঘ মাসে রোপন করা হয়। ভাদ্র মাসে ফুল আসে আর আশ্বিন মাস থেকে ফল শুরু হয়ে ফাল্গুন শেষ হয়। ভারত সুন্দরী ওরফে বল সুন্দরী এই জাতের কুলটি ফলন বেশি, রসালু ফল খেতে বেশ সুস্বাদু,আগাম ফল হিসেবে বাজারে যথেষ্ট চাহিদা থাকায় দামও বেশি পাওয়া যায়। লাগানোর ১ বছরেই অতি অল্প সময়ে ফল ধরে, এবং একটি লাভজনক ফল হিসেবে চাষ করে থাকে।
গত বছরে কুল চাষী দুলাল মিয়া বড় কমলাবাড়ী বটতলা এলাকার কৃষক ক্ষিতীশ চন্দ্রের কাছ থেকে ৪ (চার) একর জমি ৬ বছরের জন্য ৬ লক্ষ টাকা কনটাক/লিচ নিয়ে সেই জমিতে আগাম ফল, বাজারে চাহিদা এবং দামও বেশি লাভের আশায় ঐ জমিতে ভারত সুন্দরী ওরফে বল সুন্দরী জাতের কুল বাগানে ১৪০০ টি গাছের চারা রোপন করে থাকেন। আবার সেই জমিতে কুল গাছ বড় হওয়ার আগ মুহুূর্তে মাঝ খানের ফাকে জায়গায় ধুম চাষ হিসেবে একই খরচে প্রথমে ৩ মাস মেয়াদী বাদম চাষ করে থাকেন। ঐ ফসল থেকে একটা মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করে থাকে। বাদাম উঠে যাওয়ার কুল চাষের উপর ঝুকে পড়েন। চলতি বছরে কুল চাষে শ্রমিক,বাশ,নেট,সুতলীসহ খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মত আর মন প্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা দরে কুল বিক্রি করে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার মত পেয়েছেন। এখন কুল গাছ ২ ফুটের মত রেখে বাকী কেটে ফেলে আবার কুলের মাঝের ফাকা জায়গায় একই খরচে সাথী ফসল হিসেবে আবার বাদাম রোপন করবে। এর ফলে জমি উর্বর থাকে এবং পরবর্তি ফসলের জন্য সার,কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয় না। এভাবে ঐ জমিতে ৬ বছর কুল ও বাদাম চাষ করা হবে। ফলে কোটি টাকার মত একটা বড় পুঁজি আসবে বলে সে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। এদিকে তার নিজস্ব জমিতে ১ একর জমিতে একই জাতের কুল চাষ করে সেখান থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মত পেয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুল বাগানটিতে সে নিরাপত্তার জন্য চারপাশে নেটের বেড়া, গাছকে শক্তভাবে আকড়ে রাখতে বাঁশেরর খুটি এবং ফলকে যাতে বিভিন্ন প্রকার পশুপাখি নষ্ট না করতে পারে তার জন্য উপড়ে নেট ঝাল দ্বারা বেষ্টিত করে রাখছে।
কুল চাষী দুলাল মিয়া জানান,লেখাপড়া করে চাকরী না করে নিজেকে স্বাবলম্বি করার জন্য বিকল্প উপায়ে কুল চাষে ঝুঁকে পড়ি। যেহেতু এলাকা দরিদ্র ও ব্যাকারের সংখ্যা বেশি তাদেরকে কিভাবে আত্নকর্মসংস্থানের পদ সৃষ্টি করা যায় ছোট বেলায় থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার মনে স্বপ্ন ছিল। তার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে থাকে এবং কুল চাষে ঝুঁকে পড়ে। দেখা যায় যে এটি একটি বিশাল লাভ জনক ফসল। তখন আর লেখা-পড়া বেশিদুর পাড়ি না দিয়ে কুল চাষে ঝুঁকে পড়ে। সম্প্রতি ২০১২ সালে হাজিগঞ্জ উদীয়মান বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর প্রথমত তার পিতা হারিচ উদ্দিনের ১ একর জমিতে নিজ প্রযুক্তিতে সময়মত সার,কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে কুল চাষ করে একটা মোটা অংকের পরিমান অর্থ আসে। সেই অর্থ দিয়ে আরও বেশি করে লাভের আশায় কুল চাষের জন্য অন্য মানুষের জমি লিচ বা কনটাক নিয়ে শুরু করেন বৃহৎ আকারের কুলের বাগান করে। ঝুঁকে পড়েন কুল চাষে শুরু হয় তার সাফল্য এবং বদলে যায় জীবন-যাপন। কুল চাষ করে সে পুরো জেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন বাগান থেকে নিজ জেলাসহ বাহিরের জেলা থেকে পাইকাররা কুল নিয়ে যায়। অন্যদিকে এলাকার শত,শত শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পদ সৃষ্টি করছে।তিনি আরও জানান, একটি কুল বাগানে প্রথম বছরে যে খরচ হয় পরবর্তি বছরে সে খরচ হয়না। এজন্য এজন্য এটি লাভজনক ফসল। ১৯ বছর যাবৎ কুল বাগানের ব্যাবসা করেছেন অনেক জায়গা-জমি আর অর্থ জমিয়েছেন। সেই অর্থ দিয়ে তার পরিবার এখন স্বাচ্ছন্দ্যভাবে জীবন- যাপন করছে। এই ব্যবসা করে তিনি নিজেকে একজন সফল উদ্দোগতা হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত।
প্রদীপ নামের শ্রমিক জানান, ছয় বছর যাবত দুলালের কুল বাগানে কাজ করছি। প্রতিদিন ৫ শত টাকা হাজিরা পাই সেটা দিয়ে আমার পরিবারের সংসার চলে। কুলের চাহিদা থাকায় প্রতিদিন অনেক দুর-দুরান্ত থেকে পাইকাররা এসে কুল নিয়ে যায়।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বলেন, কুল একটি লাভজনক ফল, এর গুনগত মান খুবই ভাল,বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও প্রচুর। এটি বছরে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা অর্থ আসে। তাছাড়া কুলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসলের চাষবাদ করা যায়। বর্তমানে প্রায় সব জায়গাতে কুল চাষ করা হয়ে থাকে।
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন