◽একটুও কাঁদিনি◽
Ali Akhtar Golam Kibria
গত ২৯শে সেপ্টেম্বর আমাদের একমাত্র মেয়ে সিথি কিবরিয়ার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর দর্শক গ্যালারি থেকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে দেখলাম, আমার আদরের সিথি ওর বরের সঙ্গে স্টেজ থেকে নেমে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা গাড়িতে গিয়ে উঠবে। সিথি আজ সত্যি সত্যি আমাদের ছেড়ে আরেক সংসারে বধূবেশে চলে যাচ্ছে। কী আনন্দ কী বিষাদ সেই শুভযাত্রায়!
আমার অসতর্ক মুহূর্তের এ ছবিটি কে তুলেছে জানি না। সে মুহূর্তে নানা স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে উঠছিল। স্মৃতির পর স্মৃতি, তারপর আরও স্মৃতি। মনে পড়ছিল, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপর এই সিথিকে আমি পরম আদরে বুকে তুলে নিয়েছিলাম। কী সুন্দর ধবধবে এক পবিত্র শিশুকে আমি সেদিন অশ্রুসজল আনন্দে চুমুর পর চুমু দিয়েছিলাম। অতঃপর শিশুটি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠলো। আমার বুকে শিশুটি ঘুমাতো, আমার ছাড়াভাত না খেলে শিশুটির তৃপ্তি হতো না। সারাদিন সে অপেক্ষায় থাকতো আর মায়ের কাছে জানতে চাইতো, আব্বা কখন বাসায় ফিরে আসবে। আব্বা আসার পর সে লাফ দিয়ে কোলে উঠে আব্বার গলা জড়িয়ে ধরবে। শিশুটির আকাঙ্ক্ষা ছিল এতোটুকুই।
এরপর আপন গতিতে সময় গড়িয়ে গেল। শিশুশ্রেণি থেকে হাইস্কুল, এরপর কলেজ, কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি, মাস্টার্স শেষ করে থিসিস, এরই মধ্যে সিথি বিদায় নিয়ে চলে গেল শ্বশুরবাড়ি। মাঝখানে পড়ে থাকলো বাবা ও মাকে ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি। তবুও মেনে নিতে হয় যে, যাপিত জীবনের রোজনামচায় ফেলে আসা স্মৃতিগুলো ধূসর হতে হতে একদিন হারিয়ে যায়। আমি আমরা সবাই হারিয়ে যাবো।
ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি সেদিন স্মৃতির সাগরে নিমগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। স্মৃতির অতলে যেতে যেতে আমি সেদিন নিজেকে আর আবিষ্কার করতে পারিনি। এমনকি আমি সেদিন ওর মায়ের মতো কাঁদতেও পারিনি। কারণ দীক্ষাগুরু মোনাজাতউদ্দিন আমাকে কাঁদতে বারণ করে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, কাঁদতে হলে নিভৃতে যেয়ো – যাতে তোমার চোখের জল অন্য কেউ দেখতে না পায়। তাই আমি একটুও কাঁদিনি।