ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যির মধ্যে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার। আজ শনিবার (১ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী।
আগামীকাল রোববার মহাসপ্তমী। সপ্তমী তিথীতে নবপত্রিকা স্নান ও সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে কলাবউ স্থাপন করা হবে। এইদিনেই প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃন্ময়ীতে। সোমবার মহা অষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবে। এইদিনই হবে সন্ধীপূজা। মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় দেবীর ৬ষ্ঠ রূপ ‘উমা’।
মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিতপূজা। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাত্ ১৬টি উপাদানে দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা।
সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। আকাশে-বাতাসে এখন শারদ উত্সবের বিন্দাস শিহরন। শিল্পী তার তুলির নিপুণ আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় উদ্ভাসিত করে তুলেছে মহিষমর্দিনীকে। কুমারটুলী থেকে প্রতিমার অধিষ্ঠান হয়েছে মণ্ডপে। বোধনে খুলে গেছে তার আয়ত চোখের পলক। অসুর বধে চক্র, গদা, তির, ধনুক, খড়্গ-কৃপাণ-ত্রিশূল হাতে মাতৃরূপেণ দেবী হেসে উঠেছেন। ধূপের ধোঁয়ায় আজ সায়ংকালে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর মন্দিরার চারদিক কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিতদের জলদকণ্ঠে :‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমঃ নমঃ’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দুর্গা পিতৃগৃহে আসবেন গজে। বিশুদ্ধ হিন্দু পঞ্জিকামতে—ফল-শস্যপূর্ণা হবে বসুন্ধরা।
‘সুদর্শন’ পঞ্জিকামতে, বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর ৫ অক্টোবর বুধবার বিজয়া দশমীতে দেবী বিদায় নেবেন নৌকায়। হিন্দু শাস্ত্র মতে—দেবীর নৌকায় গমনের মধ্য দিয়ে ফল—অতিবর্ষণ-বন্যা। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মোড় থেকে মন্দির প্রাঙ্গণের দিকে এগিয়ে যেতে চোখে পড়ছে লাল-নীল আলোর চোখ ধাঁধানো খেলা। মন্দিরের প্রবেশ তোরণ থেকে মন্দির জুড়েই বর্ণিল আলোকের রূপবিন্যাস। দেশের প্রতিটি মন্দির আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত করে তোলা হয়েছে। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে পূজার বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজার সাথে মিশে আছে চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আবহমানকাল ধরে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নানা উপচার ও অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছে। দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, সামাজিক উৎসবও।
বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশে আমরা সব ধর্মীয় উৎসব একসঙ্গে পালন করি। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সকলে মিলে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশ আমাদের সকলের।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। প্রত্যেকে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার উন্নয়ন করে যাচ্ছে। সব ধর্মের মানুষ সমভাবে উন্নয়নের সুফল উপভোগ করছে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
E-mail :- [email protected] । E-mail :- [email protected] মোবাইল- +৮৮০১৭১৩-৬৩৬৬৬১ । বার্তা বিভাগ :- +০১৭১৬-৯৮০০৮৮ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত NewsBijoy24.Com - Popular Online Newspaper of Bangladesh.