নাম শুনে যারা বুঝতে পারছেন না ম্যান্দা কী, তাদের বলি, এটা জামালপুর জেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার। স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে সুস্বাদু আর জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় এটি অন্যতম।
ম্যান্দা কিন্তু প্রতিদিনের খাবার নয়। কারও মৃত্যু বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে এ খাবার পরিবেশন করা হয়। অনেকে আবার এটাকে ‘মিলি’ নামেও ডাকেন। কেউ ডাকেন পিঠালি বলে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এ খাবার জামালপুরবাসীর প্রিয়। খেলেই শুধু বোঝা যায়, কেন এই ম্যান্দার নাম শুনলে জিভে পানি চলে আসে।
যেভাবে পাকাবেন ম্যান্দা
প্রথমে হাঁড়িতে সয়াবিন ও সরিষার তেল দিতে হবে। বলে রাখা ভালো, সরিষার তেল ছাড়া কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ম্যান্দার স্বাদ আসবে না। তারপর এক এক করে পেঁয়াজ, আদা, রসুন কুচির সাথে সবরকমের মসলা দিয়ে গরুর মাংসকে হাত দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। 'বজের গুঁড়া' নামের একধরনের হলুদের গুঁড়ার মতো মসলা, রাধুনিপাতার সস ও মৌরি/মিষ্টি সস ব্যবহার করা হয় রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে।
তারপর পরিমাণমতো পানি দিতে হবে এবং মাংস হাঁড়িতে দেওয়ার পর থেকে ১ ঘণ্টা ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। তা না হলে মাংসে কাঁচা গন্ধ থেকে যেতে পারে। রান্নার মাঝে নাড়াচাড়া দেওয়ার সময় একটু একটু করে বারবার গরম মসলা মেশাতে হবে। মাংস ভালোভাবে কষিয়ে নেওয়া হয়ে গেলে অল্প অল্প করে চালের গুঁড়া মেশাতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে চালের গুঁড়া যেন কোনোভাবে দলা বেঁধে না যায়, তাই মেশানোর সময় বারবার নাড়তে হবে। মূলত চালের গুঁড়ার সঠিক ঘনত্বই এই খাবারের স্বাদের মূল কারণ।
সবশেষে আগে থেকে ভেজে রাখা পেঁয়াজ, রসুন, জিরা দিয়ে বাগাড় দিতে হবে এবং রান্নার শেষে হালকা গরম মসলা মেশাতে হবে ঘ্রাণের জন্য। ব্যস, তারপর সুস্বাদু এই ম্যান্দার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। ৫০ জন লোকের রান্নার জন্য ১০ কেজি মাংসের সাথে ৩/৪ কেজি চালের গুঁড়া প্রয়োজন হয়। কেউ চাইলে অল্প পরিমাণে মাসকালাইয়ের ডালের গুঁড়া মেশাতে পারে।
স্বাভাবিক ঝালের তুলনায় ম্যান্দা-তে একটু বেশি করেই ঝাল দিয়ে রান্না করা হয়। আগের দিনে মহিষের মাংস ব্যবহার করা হতো ম্যান্দা রান্নায়। বর্তমানে গরুর মাংস দিয়েই বেশিরভাগ সময় রান্না করা হলেও মাঝে মাঝে খাশির মাংস দিয়েও রান্না করা হয়।
এমনকি কিছু কিছু জায়গায় ম্যান্দায় শাক ও চিংড়ি দিয়েও রান্না হয়। এই রান্নার ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চর্বিযুক্ত মাংস এখানে বেশি ব্যবহার করা হয়। আগে কলাপাতায় ভাতের সাথে ম্যান্দা খেতে দেওয়া হতো, কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন আর কলাপাতার ব্যবহার হয় না।
মৃত্যুর ৪০ দিন পর যে দোয়ার আয়োজন করা হয়, তাকে এই জেলায় বেপার বলে। প্রায় আট দশ বছর আগে সব শ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে বসে কলাপাতায় ভাতের সঙ্গে গরম গরম ম্যান্দা খেতে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর কলাপাতায় খেতে দেখা যায় না। এখন প্লেটে ব্যবস্থা করে থাকেন। এলাকার মুসলমানেরা বিয়ে, আকিকা, খতনাসহ নানা উৎসবে মিল্লির আয়োজন করেন। এছাড়া, স্থানীয়রা নিজেদের বাড়িতেও ম্যান্দা রান্না করে খেতে পছন্দ করেন।
ঠিক কখন থেকে জামালপুরবাসী ম্যান্দার সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন, তার সুস্পষ্ট কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, শত বছরের বেশি সময় ধরে জামালপুরবাসী ম্যান্দার ঐতিহ্য লালন করছেন।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
E-mail :- [email protected] । E-mail :- [email protected] মোবাইল- +৮৮০১৭১৩-৬৩৬৬৬১ । বার্তা বিভাগ :- +০১৭১৬-৯৮০০৮৮ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত NewsBijoy24.Com - Popular Online Newspaper of Bangladesh.