ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নে এক গৃহবধূর কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আইয়ুব আলী ছোটন চাইতেন প্রথম সন্তান ছেলে হোক। কিন্তুু স্ত্রীর কোলজুড়ে এলো ফুটফুটে কন্যা। আর তা নিয়েই ঝামেলা শুরু। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পর থেকে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে গৃহবধু শারমিন (২১) এর ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতনের স্টিম রোলার । এ নির্যাতনের স্টিম রোলার শেষ পর্যন্ত থামলো তালাকের মাধ্যমে। গৃহবধুর বাবা আব্দুল আলী আদরের মেয়েকে অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্বামীর বাড়ি থেকে জামাই ও তার পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিয়ে ছোট কন্যা শিশুটি সহ মেয়েকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে একাধিক বার সালিশ বৈঠক হলেও মন গলেনি ছোটনের । সালিশে তিনি সাফ জানিয়ে দেন- কন্যাসন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে চান না। এ নিয়ে উপস্থিত লোকজন তাকে ধিক্কার জানালেও সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়েননি আইয়ুব আলী ছোটন
গত বুধবার (২ নভেম্বর) গৃহবধু শারমিনের বাবার বাড়িতে হঠাৎ করে স্বামী কর্তৃক তালাকনামা প্রেরণ করেন স্বামী আইয়ুব আলী ছোটন। গিয়ে জানা গেছে, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল আলীর চতুর্থ সন্তান শারমিন বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী ভেলুমিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আবু কালাম মিধার ছেলে আইয়ুব আলী ছোটদের সাথে তিন বছর আগে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য শারমিনের উপর নির্যাতন করতে থাকেন তার স্বামী ছোটন। নির্যাতনের মাত্রা আরও তীব্র হয় কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায়।
শারমিনের অভিযোগ করে বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পর যখন বাচ্চা পেটে আসে তখন অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন আমাকে এলো পাতারি মেরে বাচ্চাটি নষ্ট করে দেয়। এরপর আমার পেটে আবারও সন্তান। সন্তান আসার আট মাসের সময় স্বামী আলট্রাসনোগ্রাম করতে বলে। আলট্রাসনোগ্রাম করাতে গিয়ে জানা গেল মেয়ে হবে। এ খবর শুনেই বদলে যায় ছোটন। এরপর থেকে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। আমাকে একনজর দেখলেই সে মাইরধর শুরু করতো। একপর্যায়ে সে আমাকে জানিয়ে দেয়, মেয়ে হলে তার মুখও দেখতে আসবেন না।
তার কিছুদিন পরেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শারমিন বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শারমিন বেগম বলেন, ভেবেছিলাম মেয়ের মুখ দেখে বাবার মন পাল্টে যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। মেয়ে হওয়ার পর আমার সঙ্গে আর ঘর করবে না বলে আমাকে তালাক দেয়।
শারমিনের বাবা আব্দুল আলী বলেন, কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় ছোটন মন খারাপ করে। ছোটন ব্যবসা করবে বলে তাকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু করে। মেয়ের শান্তির কথা চিন্তা করে অনেক কষ্ট করে ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করে ছোটনকে দেই। তার কিছুদিন পর ফার্নিচারের ব্যবসা করবে বলে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য মেয়ের উপর আবার ও পাশবিক নির্যাতন শুরু করে পাষণ্ড এ জামাই। বাধ্য হয়ে মেয়ের কথা চিন্তা করে আবারো তাকে তিন লক্ষ টাকা ব্যবসা করার জন্য দেই। কিন্তু তার পরও মেয়ের সংসার টিকাতে পারিনি।
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী। ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সহ স্থানীয় গণ্যমান্যরা সালিশে বসে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, নিষ্পাপ শিশুটির দিকে তাকিয়ে আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাদের কে মিলিয়ে দিতে। কিন্তু ছোটন একগুঁয়েমির কারণে সব চেষ্টা বিফলে যায়। তবে শারমিন নামে মেয়েটির উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
E-mail :- [email protected] । E-mail :- [email protected] মোবাইল- +৮৮০১৭১৩-৬৩৬৬৬১ । বার্তা বিভাগ :- +০১৭১৬-৯৮০০৮৮ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত NewsBijoy24.Com - Popular Online Newspaper of Bangladesh.