কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য অধিকার এবং কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রণীত জাতীয় কর্মকৌশলের ব্যয় পরিকল্পনা (কস্টেড প্ল্যান) অনুমোদনের আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা। দাবী করেন সমন্বিত উদয়গের মাধ্যমে বাজেটের সুস্থ বাস্তবায়নের।
জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র ২০১৭-২০৩ এর জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত বাজেট-এর বার্ষিক বিশ্লেষণ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন আহ্বান উঠে আসে।
বক্তারা আরো জোর দেন গণমাধ্যমে গণপ্রচারণার মধ্য দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার উপরও।
সিডা’র অর্থায়নে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর ওয়াই মুভস প্রকল্পের আওতায় এই আলোচনা সভাটি আয়োজিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে অপরাজেয় বাংলাদেশ। যুব সংগঠন হিসেবে সহায়তা করছে ইয়েস বাংলাদেশ এবং ইউথ ফর চেঞ্জ।
আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, কিশোর-কিশোরী, বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির ক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এবং পারিবারিক অনুপ্রেরণা প্রয়োজন। পাশাপাশি জরুরি কমিউনিটি পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বাগ্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং উদ্যোগগুলো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
মাননীয় ডেপুটি স্পিকার আরো বলেন, বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের হাতে।
গবেষণায় নিযুক্ত প্রধান কন্সাল্টেন্ট সায়েমা চৌধুরী প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে চলেছে। আমাদের এই বার্ষিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় এখনো কম, পাশাপাশি বরাদ্দকৃত বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় কর্মপরিকল্পনার কস্টেড প্ল্যান এর দ্রুত অনুমোদন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ৭ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হলেও সিংহভাগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। মূল বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ বরাদ্দ প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি- এই তিন খাতে।
নিউজ বিজয়ের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন।
কোভিড এই জাতীয় কর্মপরিকল্পনাকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। ২০২১ এবং ২০২২ সালে সেই সংকট কাটিয়ে আমরা অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশ সরকার সারাদেশে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। তবে জনবলের অভাব রয়েছে। এছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ের কেন্দ্রগুলোকে পুরোপুরি সক্রিয় করার জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিতে একটি রিসোর্স শেয়ারিং মেকানিজম তৈরির সুপারিশও উঠে আসে এই বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ট্র্যাকারের অনুকরণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়ন স্ট্যাটাস পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ট্র্যাকিং মেকানিজম তৈরির কথাও উঠে আসে সুপারিশের মধ্য দিয়ে।
সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, কোভিড-কালে যেসকল কিশোরীরা ঝরে পড়লো, কিশোরী বয়সে মা হলো- তাদের বিষয়গুলোও আমাদের বিশ্লেষণে তুলে আনতে হবে। কোভিড এর প্রকোপ কমে আসলেও এই সকল ঝরে পড়া কিশোরী মেয়েদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিতে রয়েছে।
এককভাবে মেকানিজম তৈরি সম্ভব না, এই কাজে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি যুক্ত করেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, বাংলাদেশে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র, ২০১৭-২০৩০ একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কিশোর-কিশোরী এবং যুবদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে দেশের নানা প্রান্তে কাজ করে চলেছে। সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার নানা অংশ অংশীদারীদের মধ্যে বন্টনের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত সম্ভব। কমিউনিটি লিডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি জনসচেতনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, এই গবেষণা মূল উদ্দেশ্য হলো বার্ষিক মূল্যায়নের মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করা।
আলোচনায় মুক্ত প্রশ্ন-উত্তর পর্ব সঞ্চালনা করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর এসআরএইচআর প্রধান ড. ফেরদৌসি বেগম।
মঞ্জুর, বিপদাপন্ন কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য অধিকারের বিষয়টি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনায় থাকলেও এই বিষয়টিকে সমস্ত নীতিমালায় এবং সমস্ত জায়গায় প্রাধান্য দিতে হবে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
জনাব মোঃ মাহমুদুর রহমান, পরিচালক (এমসিএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কাজ করতে চাইলে আমাদের কাউন্সেলিং এর উপর জোর দিতে হবে। ঝরে পড়া মেয়ে শিশুদের মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন বিবাহপূর্ব কাউন্সেলিং এবং গর্ভধারণ পূর্ব কাউন্সেলিং এবং সন্তান জন্মদান পরবর্তী কাউন্সেলিং। যাতে করে একটি মেয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুত কি না, গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত কিনা, একটি শিশু জন্মদানের পর আরেকটি শিশু জন্মদানের জন্য প্রস্তুত কিনা এসকল বিষয় নিশ্চিত করা যায় এবং তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হয়।
তিনি আরো বলেন, জনবলের অভাবে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পুরোদমে সক্রিয় হতে পারছে না।
পাঠ্যসূচিতেও কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক কারিকুলামের অন্তর্ভুক্তির আহবান উঠে আসে আলোচনা থেকে।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইমপ্লিমেন্টেশন ডিরেক্টর আফরোজ মহল। এছাড়া সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, আরমা দত্ত, জাকিয়া পারভীন খানম, সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও আদিবা আনজুম মিতা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নীলিমা ইয়াসমিন, ওয়াই মুভস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাজিয়া সুলতানা, অপরাজেয়-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু এবং ইয়েস বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক শামিম আহমেদ সহ গণমাধ্যম কর্মী।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
E-mail :- [email protected] । E-mail :- [email protected] মোবাইল- +৮৮০১৭১৩-৬৩৬৬৬১ । বার্তা বিভাগ :- +০১৭১৬-৯৮০০৮৮ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত NewsBijoy24.Com - Popular Online Newspaper of Bangladesh.