বিয়ের আগে দীর্ঘদিন ধরে নবগৃহবধুকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন একই এলাকার যুবক শাহ আলম ও হাসেন আলী। গ্রামের মাতাব্বরদের ও উলিপুর ফাঁড়ি থানায় অভিযোগ করেও সুবিচার মেলেনি। এসপির ভাতজী জামাতা বলে কথা। উত্ত্যক্ত, নির্যাতন, ধর্ষণ ও বিষ মিশানো পানি খাওয়ানোর ঘটনায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর নৌকা যোগে কুড়িগ্রাম জেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে রাত আনুমানিক ৪ ঘটিকার সময় মৃত্যু হয় শাবনুর (২০)। এ ঘটনায় তার বাবা শাহজামাল বাদী হয়ে একই এলাকার মৃত কছিম উদ্দিন শিকদারের ছেলে শাহ আলম শিকদার (৩৮) ও ছমেদ আলীর ছেলে হাছেন আলী (২১) দুই জনের বিরুদ্ধে উলিপুর ফাঁড়ি থানায় একটি হত্যা মামলার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শাবনুর উলিপুর উপজেলার গেন্দার আলগা ফাঁড়ি থানার চর ঘুঘুমারি গ্রামের শাহজামালের মেয়ে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাবনুরকে দীর্ঘদিন যাবত উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন শাহ আলম শিকদার ও হাসেন আলী। এ বিষয়ে একই গ্রামের মাতাব্বর এছাক প্রামানিক এর ছেলে কাদের প্রামানিক, মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে বিন্নত আলী, আনোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুস সাত্তারসহ আরো অনেকের কাছে বিচার চেয়েছিলেন পরিবারগণ। মাতাব্বরগণ কোন সুরাহা না করলে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্যাতিত অসহায় দরিদ্র পরিবার হওয়ায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কালুয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা রাশেদুল ইসলামের সাথে বিবাহ দেয় শাবনুরকে।
নব গৃহবধু শাবনুর বেগম বিবাহের ২৩ দিন পর স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চর ঘুঘুমারিতে আসে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পরিবারের লোকজন কেউ বাড়িতে না থাকায় সুযোগে শাহ আলম ও তার সঙ্গী হাসেন আলী শাবনুরের ঘরে প্রবেশ করেন। শাবনুরকে ডেকে বাড়ির বাহিরে নেয়ার চেষ্টা করে। না যেতে চাইলে টানা হেচরা করিতে থাকে। এক পর্যায়ে শাবনুরকে মাটিতে লুটিয়ে বুকের উপর বসিয়ে চাপাচাপি করে দুই হাতে গলা টিপে ধরে পানির সাথে বিষাক্ত পয়জন জোরপুর্বক মুখে ঢেলে খাওয়াইয়া দেয়। পরে ছোট বোন সাবানা এমন অবস্থা দেখতে পেলে জমিতে থাকা বাবা মাকে খবর দিলে দৌড়ে এসে শাবনুরকে অজ্ঞান ও বি-বস্ত্র অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে থাকা দেখতে পায়। পরে অবস্থার বেগতিক দেখে রাত্রি ২ টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নৌকা যোগে রওনা হলে অনন্তপুর ঘাটে যাওয়ার আগে রাত্রি আনুমানিক ৪ ঘটিকার সময় মৃত্যু হয়। লাশ বাড়িতে ফিরিয়ে এনে উলিপুর ফাঁড়ি থানা পুলিশকে খবর দিলে পরের দিন বিকাল ৪ ঘটিকার সময় এসে মুত্যুর সুরুতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে লাশটি মর্গে প্রেরণ করেন। পরে শাবনুরের পিতা শাহজামালের কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, রহস্যজনক, উক্ত কাগজ দ্বারা অস্বাভাবিক মামলা দায়ের করে রাখেন। যাহার মামলা নম্বর ৪৬/২০২১।
মামলার বাদী শাহজামাল ও প্রত্যক্ষদর্শী শাবনুরের খালু সুরুতজ্জামান জানান, শাবনুরের এমন ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের আসায় সাহেবের আলগা ফাঁড়ি থানায় কর্মরত ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক ও এস আই ফজলার রশিদ আসামী, মাতাব্বরদের সাথে ও খুনি চক্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা করে ঘুরাইতে থাকে এবং বলেন স্থানীয় এসপির ভাজতি জামাতার নামে কোন প্রকার অভিযোগ গ্রহন করা হবে না। পরবর্তিতে সঠিক বিচারের আসায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ জেলা আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যাহার মামলা নম্বর ২৮/২২।
মামলার তদন্ত কর্মকতা উলিপুর ফাঁড়ি থানার এসআই ফজলার রশিদকে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু। শাবনুর বেগম এর ডায়রিয়া ও আমাশয় জনিত রোগ দেখা দেয়। পরে স্থানীয় ভাবে কোন প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে না পারায় কুড়িগ্রাম হাসপাতালে নিতে নৌকার মধ্যেই মারা যায়। এটা নির্যাতন বা ধর্ষণের কোন ঘটনা নয়।
উলিপুর ফাঁড়ি থানার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ অভিযোগের তৎক্ষনাত এজাহার ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্তাধীন রয়েছে। তবে প্রাথমিক সুরুতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং একটি রিপোর্ট এসেছে যা সঠিক হয়নি। সঠিক রিপোর্টের জন্য আর একটি পরিক্ষা নিরিক্ষা দেয়া হয়েছে। এ রিপোর্টটি আসলে জানা যাবে যে, কিভাবে মৃত্যু হয়েছে। এ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আসামী পক্ষকে কোন কিছু বলা যাবে না। বাদী পক্ষকে অপেক্ষা করতে হবে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
E-mail :- [email protected] । E-mail :- [email protected] মোবাইল- +৮৮০১৭১৩-৬৩৬৬৬১ । বার্তা বিভাগ :- +০১৭১৬-৯৮০০৮৮ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত NewsBijoy24.Com - Popular Online Newspaper of Bangladesh.