ঘূর্ণিঝড় হামুন’র আঘাতের ফলে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৩৭ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি ঘর-বাড়ি । এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩২ হাজারের বেশি ঘর। জেলার ৯ উপজেলার ৭০ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভায় অন্তত ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। যার কারণে এখনো অন্ধকারে রয়েছে কক্সবাজার। তবে বুধবার সন্ধ্যায় সদরের কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে। কক্সবাজারে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও দুদিন সময় লাগবে।
গত (২৪ অক্টোবর) রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুন’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো কক্সবাজার। দিনের বেলায় ক্ষতের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। গাছপালা ও বিদ্যুৎতের খুটি উপড়ে পড়েছে। পুরো জেলায় ২৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। সেই সাথে মোবাইল নেটওয়ার্কের জটিলতাও দেখা দিয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ জনগণ। গতকাল ২৪ অক্টোবরের ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় তিনজন নিহত এবং আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।
নিহতদের মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভায় দেয়াল চাপায় একজন, মহেশখালী ও চকরিয়ায় গাছ চাপায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। মৃতরা হলেন কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে আবদুল খালেক (৪০), মহেশখালী এলাকার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া বদরখালী এলাকার জাফর আহমদের ছেলে আসকর আলী (৪৭)।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে উপড়ে গেছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খুঁটি। তার ছিঁড়ে রাস্তা-ঘাট ও বসতিতে পড়ে রয়েছে। এখন হঠাৎ করে বিদ্যুতের সংযোগ দিলে প্রাণহানি ঘটতে পারে। সেজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩টি সাব স্টেশন চালু করা হয়েছে। এরপর প্রধান সড়কগুলোতে কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। পুরো কক্সবাজারে বিদ্যুৎ সচল হতে অন্তত দুদিন সময় লাগবে।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ অতীশ চাকমা বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে হাজার হাজার গাছ উপড়ে গেছে। যার কারণে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করে এসব মহাসড়ক ও সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। শহরের সড়কগুলো থেকে উপড়ে পড়া গাছ কেটে, তা সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারের ৫ হাজারের বেশি কাঁচাঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ভেঙে গেছে ৩২ হাজার ঘর। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ৩৩ কে.ভি লাইনের ১৭৪টি, ১১ কে.ভি লাইনের ১৮০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ২৩টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৪৯৬টি স্পটে তার ছিঁড়ে গেছে। ১ হাজার ৮৩৮টি মিটার নষ্ট হয়েছে। ৮০০টি স্পটে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পিডিবি ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কক্সবাজার পৌরসভা/কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফলে উক্ত উপজেলাসমূহের সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতাধীন পেকুয়া উপজেলার সাতটি ঘরের টিন সম্পূর্ণ উড়ে গেছে এবং চকরিয়া উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত একটি ব্রিজ সম্পূর্ণ বেঁকে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।