আজ ছাব্বিশে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় একটি দিন। পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে এই দিনে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছিল।
অবশেষে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পুব আকাশে উদিত হয় বিজয়ের লাল সূর্য।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান পার্লামেন্টের ৩০০ আসনের মধ্যে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আসন ছিল ১৬২টি। এর মধ্যে দুটি আসন বাদে ১৬০টিতেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।
আর পশ্চিম পাকিস্তানে আসন ছিল ১৩৮টি। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুযায়ী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলটিকে সরকার গঠন করতে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকরা শুরু করে গড়িমসি। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে এবং নানা দুরভিসন্ধি চালাতে থাকে।
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের সমাবেশ ঘটাতে থাকে। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমিয়ে থাকা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। রক্তে রঞ্জিত হয় সারা দেশ। ক্রমে শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে পাক বাহিনীর অত্যাচার। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে থাকে।
নারীদের ধরে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে। বেছে বেছে হত্যা করা হয় জাতির বিবেক বুদ্ধিজীবীদের। তাদের সহযোগিতায় নামে রাজাকার-আলবদর নামে কিছু কুলাঙ্গার বাঙালি। মুহূর্ত বিলম্ব না করে বাঙালি জাতির সূর্যসন্তানরা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাশে পায় বাঙালি সৈনিকদের। পাশে পায় তৎকালীন ইপিআর, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের। অবশেষে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী।
দুঃখের বিষয়, সেদিন বাঙালি জাতি যে আশা নিয়ে নিজের জীবন তুচ্ছ করে যুদ্ধ করেছিল, সেই আশা অনেকাংশেই পূরণ হয়নি। অতীতে দেশ শাসনের নামে প্রায়শ চলেছে অপশাসন। চলেছে লুটপাট। ফলে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। লুটেরারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্থলে স্বৈরাচারী শাসন চলেছে। বিভিন্ন সময়েই জাতি এসব অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বদল এনেছে। কিন্তু সে বদল টেকসই হয়নি। আশার কথা, জাতি সর্বশেষ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন প্রত্যয়ে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহীদকে স্মরণ করবে বিনম্র শ্রদ্ধায়। লাখো কণ্ঠে ঘোষিত হবে, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের পথে প্রিয় বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নেবই। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের স্বপ্নপূরণে আমরা সফল হবই।
নিউজ বিজয় ২৪ডট কম/এফএইচএন