ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পরবর্তী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে, সাড়ে ৯ বছর আগে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে হত্যার অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ১৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
নিহতের বাবা ইয়াকুব আলী খিলগাঁও থানায় এ মামলা করেন। এতে সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৪৯ নেতাকেও আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি আছে আরো ২০ জন।
মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিবির সাবেক উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, খিলগাঁও থানার এসআই মো. আলাউদ্দিন, ডিবি রমনা জোনের এসআই দীপক কুমার দাস, ডিবির রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান আরাফাত, জাহিদুল হক তালুকদার, ডিবির পরিদর্শক ওহিদুজ্জামান, এস এম শাহরিয়ার হাসান, ডিবির এসআই শিহাব উদ্দিন, বাহাউদ্দিন ফারুকী, জাহাঙ্গির হোসেন, ডিবির কনস্টেবল মো. সোলাইমান ও আবু সায়েদ।
নিহত জনি খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি নিহত হন। এর আগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ২০১৫ সালের ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বেআইনিভাবে হেফাজতে রেখে নির্যাতন ও গুলি করে জনিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার বাবা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে থানায় গেলে তাকে মিথ্যা মামলা এবং ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখানো হয়। এছাড়া আসামিরা দীর্ঘদিন বাদীকে এবং তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে মামলা করতে পারেননি। তাই বিলম্বে মামলা দায়ের করা হলো।
উল্লেখ্য, আসাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে নিজের ও পরিবারের নামে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট, ছেলের নামে একটি বাড়ি এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরো ১৬৬ শতক জমি।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির উপর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের মালিকানায় ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। ইস্কাটনেও আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আরো একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমন্ডিতে। এর বাইরে সিদ্ধেশ্বরীতে আছাদুজ্জামানের মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে। এছাড়া আছাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। নিকুঞ্জ-১-এ আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলের নামেও একটি বাড়ি রয়েছে।
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন