ঢাকা ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রদ্ধায় ও স্মৃতিতে বাবা হাফিজ উদ্দিন: আজ তার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

আজ আমার বাবার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের এই দিনে, ঠিক বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে আমি আমার বাবাকে চিরতরে হারাই। সে সময় আমি হাসপাতালে উপস্থিত ছিলাম না, কারণ ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন বাবাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তাই আমি বাসায় টাকা আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে একটি ফোন কল আসে—বাবার অবস্থা ভালো নয়! ছুটে গিয়ে দেখি, ডাক্তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছেন, কিছুক্ষণ পরই বলে দিলেন—তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। সেই মুহূর্তের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বাবা আর নেই। সকালে প্রতিদিনের মতো আমার অনলাইন নিউজ পোর্টাল newsbijoy24.com-এ নিউজ আপলোড করছিলাম, তখনই বাবা আমাকে বললেন, “ফারুক, আমার নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, ওষুধ আনতে হবে।” দেরি না করে দ্রুত ওষুধ নিয়ে এলাম, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছিল না। তখন বাবা বললেন, “আমার ছোট ভাই ফজলুকে ডাক, আমাকে আমতলা বাজারে আশরাফ প্রফেসরের ছেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চল।” সাথে সাথে রিকশায় করে বাবাকে ডা. তৌফিকের চেম্বারে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার কিছু ইনজেকশন দিলেন, তাতেও বাবার অবস্থার উন্নতি হলো না। তার শরীর ঘামছিল, পানি ঝরছিল ফোঁটা ফোঁটা। তখন ডাক্তার বললেন, “তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।”

বাবাকে নিয়ে যাই হাতীবান্ধা সরকারি হাসপাতালে। সেখানে অক্সিজেন দেওয়া হলেও ডাক্তার দ্রুত রংপুর মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দেন। তাই টাকা আনতে বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু ফেরার আগেই সেই দুঃসংবাদটি পাই। হাসপাতালে পৌঁছে বাবার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকি, কিন্তু ডাক্তার জানিয়ে দেন—তিনি আর নেই। মুহূর্তের মধ্যে আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাবার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, আর পরদিন শুক্রবার সকাল ৯:৩০ মিনিটে দ্বিতীয় জানাজার পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আজ বাবার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মনে পড়ছে। তার স্নেহ, তার ভালোবাসা, তার আদর আজও আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। ছোটবেলায় বাবার কাঁধে চড়ে বাড়ি ফেরার স্মৃতিগুলো আজও মনে জ্বলজ্বল করে। বাবার ছায়ায়ই বড় হয়েছি, আর আজ সেই ছায়াহীন পৃথিবীতে হাঁটছি। বাবার সঙ্গে অনেক কথা বলার ছিল, কিন্তু সেসব আর বলা হলো না।

যাদের বাবা আছেন, তারা হয়তো বুঝবেন না বাবার ছায়াটা কতটা মূল্যবান। কিন্তু যাদের বাবা নেই, তারাই বোঝেন এই শূন্যতার কষ্ট কতটা গভীর। এক সময় বাবার পরামর্শ ছাড়া কিছুই করা সম্ভব ছিল না, আর আজ বাবাকে ছাড়া প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বাবার স্মৃতি, তার উপদেশ, তার শেখানো কথাগুলো আজও অন্তরে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

অনেক স্বপ্ন, আশা আর পরিকল্পনা অপূর্ণ রয়ে গেল। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন

নিউজবিজয়২৪.কম
ছেলে: মো. ফারুক হোসেন

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন :-

নিউজ বিজয়ের সম্পর্কে

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

শ্রদ্ধায় ও স্মৃতিতে বাবা হাফিজ উদ্দিন: আজ তার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত সময়:- ১২:০০:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

আজ আমার বাবার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের এই দিনে, ঠিক বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে আমি আমার বাবাকে চিরতরে হারাই। সে সময় আমি হাসপাতালে উপস্থিত ছিলাম না, কারণ ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন বাবাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তাই আমি বাসায় টাকা আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে একটি ফোন কল আসে—বাবার অবস্থা ভালো নয়! ছুটে গিয়ে দেখি, ডাক্তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছেন, কিছুক্ষণ পরই বলে দিলেন—তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। সেই মুহূর্তের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বাবা আর নেই। সকালে প্রতিদিনের মতো আমার অনলাইন নিউজ পোর্টাল newsbijoy24.com-এ নিউজ আপলোড করছিলাম, তখনই বাবা আমাকে বললেন, “ফারুক, আমার নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, ওষুধ আনতে হবে।” দেরি না করে দ্রুত ওষুধ নিয়ে এলাম, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছিল না। তখন বাবা বললেন, “আমার ছোট ভাই ফজলুকে ডাক, আমাকে আমতলা বাজারে আশরাফ প্রফেসরের ছেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চল।” সাথে সাথে রিকশায় করে বাবাকে ডা. তৌফিকের চেম্বারে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার কিছু ইনজেকশন দিলেন, তাতেও বাবার অবস্থার উন্নতি হলো না। তার শরীর ঘামছিল, পানি ঝরছিল ফোঁটা ফোঁটা। তখন ডাক্তার বললেন, “তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।”

বাবাকে নিয়ে যাই হাতীবান্ধা সরকারি হাসপাতালে। সেখানে অক্সিজেন দেওয়া হলেও ডাক্তার দ্রুত রংপুর মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দেন। তাই টাকা আনতে বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু ফেরার আগেই সেই দুঃসংবাদটি পাই। হাসপাতালে পৌঁছে বাবার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকি, কিন্তু ডাক্তার জানিয়ে দেন—তিনি আর নেই। মুহূর্তের মধ্যে আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাবার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, আর পরদিন শুক্রবার সকাল ৯:৩০ মিনিটে দ্বিতীয় জানাজার পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আজ বাবার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মনে পড়ছে। তার স্নেহ, তার ভালোবাসা, তার আদর আজও আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। ছোটবেলায় বাবার কাঁধে চড়ে বাড়ি ফেরার স্মৃতিগুলো আজও মনে জ্বলজ্বল করে। বাবার ছায়ায়ই বড় হয়েছি, আর আজ সেই ছায়াহীন পৃথিবীতে হাঁটছি। বাবার সঙ্গে অনেক কথা বলার ছিল, কিন্তু সেসব আর বলা হলো না।

যাদের বাবা আছেন, তারা হয়তো বুঝবেন না বাবার ছায়াটা কতটা মূল্যবান। কিন্তু যাদের বাবা নেই, তারাই বোঝেন এই শূন্যতার কষ্ট কতটা গভীর। এক সময় বাবার পরামর্শ ছাড়া কিছুই করা সম্ভব ছিল না, আর আজ বাবাকে ছাড়া প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বাবার স্মৃতি, তার উপদেশ, তার শেখানো কথাগুলো আজও অন্তরে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

অনেক স্বপ্ন, আশা আর পরিকল্পনা অপূর্ণ রয়ে গেল। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন

নিউজবিজয়২৪.কম
ছেলে: মো. ফারুক হোসেন