মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষিকা ও ৬ ডাক্তারসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার টিম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাকসুদা আক্তার মালা (৫২), ডা. কে এম বশিরুল হক (৪৮), ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু (৩৩), জাকিয়া ফারইভা ইভানা (৩৫), সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী (২৫), জাকারিয়া আশরাফ (২৬) ও মৈত্রী সাহা (২৭)। তাদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গত রোববার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বুধবার বলেন, গত ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ১২ জন ডাক্তারসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১০ জন মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছে থেকে মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্য ও ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এছাড়াও এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড (মূল হোতা) জসীম উদ্দিন ভুইয়া মুন্নুর কাছ থেকে উদ্ধার করা একটি গোপন ডায়েরিতে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়।
আজাদ রহমান বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মূল হোতাসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া মাকসুদা আক্তার মালা ২০১৫ সালে নিজের মেয়ে ইকরাসহ আরও ৭ জন শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। এছাড়া ডা. কে এম বশিরুল হক থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক আসামির দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ডা. বশিরুল হকের নাম এসেছে। এ চক্রের মূলহোতা জসীমের গোপন ডায়েরিতেও তার নাম রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত ডা. অনিমেষ কুমার কুন্ডু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। তিনি ২০১৫ সালে ১০ জন শিক্ষার্থীকে ফাঁস কারা প্রশ্ন দিয়েছেন এবং এদের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
অপরদিকে, গ্রেপ্তারকৃত জাকিয়া ফারইভা ইভানা ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ৬০তম স্থান অর্জন করেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী রংপুর মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তারকৃত ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। আর গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া আশরাফ ও মৈত্রী সাহা ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এ দুজনও ডা. অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।