ঢাকা ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

https://www.newsbijoy24.com/

ভারতের বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা কেন, প্রশ্ন রিজভীর

ভারতের বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা কেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিবৃতিতে রিজভী বলেন, দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে কুখ্যাত গণতন্ত্রের ঘাতক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের স্বস্তি-শান্তির অভাবনীয় স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হয়েছে। দেশের চতুর্দিকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় জন-উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দেড় দশকের জগদ্দল পাথর অপসারণ হয়েছে মানুষের স্কন্ধ হতে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন, তখন বাংলাদেশের দেড় দশকের সন্ত্রাসী মাফিয়া লীগের রক্তাক্ত তাণ্ডবে সুষুপ্তিতে থাকা ভারত সরকার সর্বস্ব হারানোর বেদনাবিদ্ধ অস্থিরতা আর অস্বস্তি বিস্ময়কর রকমের প্রকট হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের করতলে নেয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে।

রিজভী বলেন, ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট গল্প প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ও হাসিনার যৌথ ইন্ধনে ভারতীয় কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী গণমাধ্যম এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে।

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান বয়ান মিথ্যার ধোঁয়াজাল দিয়ে ঘেরা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভারত অন্তর্গত দিক থেকেই বাংলাদেশ বিদ্বেষী। এদের মধ্যে মানবিক নৈতিকতার ছিটেফোঁটাও নেই। এই কারণে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বাভাবিক বিকাশে বিশ্বাসী দেশের জনগণ ও জাতীয় নেতাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে।

বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, দু-তিন দশকে আগে এ দেশের এক মহান জাতীয়তাবাদী নেতা ও স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-‘R&AW’ একটি ফাইল ইনিশিয়েট করে। এর কিছুদিন পর সরকার পরিবর্তিত হয়ে শ্রী মোরার্জী দেশাইয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তিনি ফাইলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। পরে আবার শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাসীন হলে ফাইলটির কার্যক্রম চালু হয় এবং এর কিছুদিন পর ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হন।

ভারতেরই একটি পত্রিকা সানডে-তে এর ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক সুব্রামনিয়ম প্রতিবেদনটি রচনা করেন। সুতরাং আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই ভালো চোখে দেখে না ভারত।

বাংলাদেশে ঐতিহাসিক কাল ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রীতি ও শুভেচ্ছার বন্ধনে আবদ্ধ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের কোনো কারণের অভ্যুদয় হয়নি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হাইপার প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার জন্য ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে দুঃশাসনের অবসান হওয়া, হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি তাদের মনে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে লাঞ্ছিত করতে, দুর্দশায় ফেলতে, অবমাননা করতে চলছে অতিকথন আর অপপ্রচারের বিরতিহীন ধারাভাষ্য। তথাপিও যাবতীয় ভয়, হুমকি ও দুর্বিপাকের মধ্যেও বাংলাদেশিরা মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্পে সকল চক্রান্তকে প্রতিহত করবে।

প্রতিদিন বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারত সরকার এবং উগ্রবাদী বিজেপির নেতারা বক্তব্য-বিবৃতি হুংকার এবং বায়বীয় অভিযোগ করে চলেছে দাবি করে রিজভী বলেন, কলকাতায় আমাদের উপহাইকমিশনে উগ্রবাদী হিন্দুরা আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে ভারতীয় গোয়েন্দারা আওয়ামী লীগ ও বিশেষ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে কীভাবে ব্যবহার করছে সেই পরিকল্পনার ছক প্রকাশ্যে এসেছে।

তিনি বলেন, তাদের বক্তব্যের যে কোনো ভিত্তি নেই, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) করা একটি জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই জরিপ বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান করেনি। বিদেশি প্রতিষ্ঠান করেছে। ফলে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকার কোনো অবকাশ নেই। বরং ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলা যায়। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা নিপীড়ন-নির্যাতন, এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে। বাড়ি-ঘর-স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু মুসলমানই নয়, দেশটির খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা হয়, তার তথ্য তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আসামে খ্রিষ্টিয়ান ফোরাম বলেছে, আসামে কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ভারত সরকার তার প্রতিবাদ বা প্রতিকার করে না। মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের উপাসনালয় ধ্বংস করা হয়েছে। ২৫০টিরও বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভারতের অহিন্দু জনগোষ্ঠী মুসলিম, খ্রিষ্টান ও শিখ সম্প্রদায় যৌথভাবে সাম্প্রদায়িকতার হুমকির সম্মুখীন।

ভারতের শাসক গোষ্ঠী বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার নীতি হলো সহিংসতা, বৈষম্য, সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়নের মাধ্যমে ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা দাবি বরে তিনি বলেন, বিজেপি ও আরএসএসের পৃষ্ঠপোষকতায় এই নীতিগুলোর চর্চা করা হচ্ছে। একেবারে খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে জায়গা দেয়ার মতো বিষয়কে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে।

রিজভী বলেন, হিসাব করলে দেখা যাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতে। তারাই আবার বড় গলায় বলছে বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রবাদে আছে: ‘আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে।’

ভারত তার নিজের দেশের যেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের এত মাথা ব্যথা কেন? বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে অনবরত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।

অপপ্রচারে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার সহযোগীরাও মেতেছে দাবি করে এ নেতা বলেন, ভারতের আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি। বিতর্কিত ধর্মীয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী হিন্দু জঙ্গিরা তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী হিন্দু জঙ্গিরা আইন অমান্য করেছে, আদালত অবমাননা করেছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। ভারত সরকার এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেনি।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর, জমিজমা দখলে ভারতকে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি দাবি করে রিজভী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিএনপির যে লাখ লাখ নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে, গুম, খুন, অপহরণ, জেল-জুলুম করেছে, অরাজনৈতিক বিরোধী মতকে দমন করেছে, তা নিয়েও টুঁ শব্দ করেনি। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড, তিনটি ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনসহ কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ ভারত করেনি। বরং এসবের বৈধতা ও সমর্থন দিয়েছে ভারত।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এ দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু বসবাস করে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং চাকমা, মারমা, গারো, মুরংসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আবহমানকাল ধরে একটা দৃঢ় ও নিবিড় যোগসূত্র বয়ে এনেছে। তারা একসঙ্গে মিলেমিশে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সহমর্মী হয়েই শান্তিতে বসবাস করছে। এখানে এক দেশ, এক জাতি, আমরা সবাই বাংলাদেশি। অথচ, ভারত সকল বাংলাদেশির স্বার্থে কথা না বলে, সব সময় শুধু একটি সম্প্রদায়ের স্বার্থে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কথা বলে। ভারতের এই আচরণ ভারতকে সর্বজনীন না করে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বী করেছে। ভারতের এসব আচরণ এ দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নেয়নি। এ দেশের মানুষ কঠিন সময়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে জানে। প্রতিরোধের দুর্ভেদ্য দেয়ালও প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলতে পারে। এ দেশের হিন্দুদেরও বৃহদাংশ ভারতের এই নীতি সমর্থন করে না। আজ এই বাস্তবতা ভারতকে বুঝতে হবে। অসূয়া শক্তির কখনো জয় হতে পারে না।

নিউজবিজয়২৪ডট কম/এফএইচএন

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

এবার মোবাইল ইন্টারনেট নিয়ে সুখবর দিলো বিটিআরসি

ভারতের বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা কেন, প্রশ্ন রিজভীর

প্রকাশিত সময় :- ১১:৪৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারতের বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা কেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বিবৃতিতে রিজভী বলেন, দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে কুখ্যাত গণতন্ত্রের ঘাতক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের স্বস্তি-শান্তির অভাবনীয় স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হয়েছে। দেশের চতুর্দিকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় জন-উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দেড় দশকের জগদ্দল পাথর অপসারণ হয়েছে মানুষের স্কন্ধ হতে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন, তখন বাংলাদেশের দেড় দশকের সন্ত্রাসী মাফিয়া লীগের রক্তাক্ত তাণ্ডবে সুষুপ্তিতে থাকা ভারত সরকার সর্বস্ব হারানোর বেদনাবিদ্ধ অস্থিরতা আর অস্বস্তি বিস্ময়কর রকমের প্রকট হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের করতলে নেয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে।

রিজভী বলেন, ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট গল্প প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ও হাসিনার যৌথ ইন্ধনে ভারতীয় কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী গণমাধ্যম এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে।

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান বয়ান মিথ্যার ধোঁয়াজাল দিয়ে ঘেরা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভারত অন্তর্গত দিক থেকেই বাংলাদেশ বিদ্বেষী। এদের মধ্যে মানবিক নৈতিকতার ছিটেফোঁটাও নেই। এই কারণে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বাভাবিক বিকাশে বিশ্বাসী দেশের জনগণ ও জাতীয় নেতাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে।

বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, দু-তিন দশকে আগে এ দেশের এক মহান জাতীয়তাবাদী নেতা ও স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-‘R&AW’ একটি ফাইল ইনিশিয়েট করে। এর কিছুদিন পর সরকার পরিবর্তিত হয়ে শ্রী মোরার্জী দেশাইয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তিনি ফাইলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। পরে আবার শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাসীন হলে ফাইলটির কার্যক্রম চালু হয় এবং এর কিছুদিন পর ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হন।

ভারতেরই একটি পত্রিকা সানডে-তে এর ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক সুব্রামনিয়ম প্রতিবেদনটি রচনা করেন। সুতরাং আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই ভালো চোখে দেখে না ভারত।

বাংলাদেশে ঐতিহাসিক কাল ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রীতি ও শুভেচ্ছার বন্ধনে আবদ্ধ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের কোনো কারণের অভ্যুদয় হয়নি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হাইপার প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার জন্য ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে দুঃশাসনের অবসান হওয়া, হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি তাদের মনে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে লাঞ্ছিত করতে, দুর্দশায় ফেলতে, অবমাননা করতে চলছে অতিকথন আর অপপ্রচারের বিরতিহীন ধারাভাষ্য। তথাপিও যাবতীয় ভয়, হুমকি ও দুর্বিপাকের মধ্যেও বাংলাদেশিরা মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্পে সকল চক্রান্তকে প্রতিহত করবে।

প্রতিদিন বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারত সরকার এবং উগ্রবাদী বিজেপির নেতারা বক্তব্য-বিবৃতি হুংকার এবং বায়বীয় অভিযোগ করে চলেছে দাবি করে রিজভী বলেন, কলকাতায় আমাদের উপহাইকমিশনে উগ্রবাদী হিন্দুরা আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে ভারতীয় গোয়েন্দারা আওয়ামী লীগ ও বিশেষ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে কীভাবে ব্যবহার করছে সেই পরিকল্পনার ছক প্রকাশ্যে এসেছে।

তিনি বলেন, তাদের বক্তব্যের যে কোনো ভিত্তি নেই, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) করা একটি জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই জরিপ বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান করেনি। বিদেশি প্রতিষ্ঠান করেছে। ফলে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকার কোনো অবকাশ নেই। বরং ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলা যায়। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা নিপীড়ন-নির্যাতন, এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে। বাড়ি-ঘর-স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু মুসলমানই নয়, দেশটির খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা হয়, তার তথ্য তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আসামে খ্রিষ্টিয়ান ফোরাম বলেছে, আসামে কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ভারত সরকার তার প্রতিবাদ বা প্রতিকার করে না। মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের উপাসনালয় ধ্বংস করা হয়েছে। ২৫০টিরও বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ভারতের অহিন্দু জনগোষ্ঠী মুসলিম, খ্রিষ্টান ও শিখ সম্প্রদায় যৌথভাবে সাম্প্রদায়িকতার হুমকির সম্মুখীন।

ভারতের শাসক গোষ্ঠী বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার নীতি হলো সহিংসতা, বৈষম্য, সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় নিপীড়নের মাধ্যমে ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা দাবি বরে তিনি বলেন, বিজেপি ও আরএসএসের পৃষ্ঠপোষকতায় এই নীতিগুলোর চর্চা করা হচ্ছে। একেবারে খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে জায়গা দেয়ার মতো বিষয়কে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে।

রিজভী বলেন, হিসাব করলে দেখা যাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতে। তারাই আবার বড় গলায় বলছে বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রবাদে আছে: ‘আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে।’

ভারত তার নিজের দেশের যেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের এত মাথা ব্যথা কেন? বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে অনবরত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।

অপপ্রচারে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার সহযোগীরাও মেতেছে দাবি করে এ নেতা বলেন, ভারতের আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি। বিতর্কিত ধর্মীয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী হিন্দু জঙ্গিরা তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী হিন্দু জঙ্গিরা আইন অমান্য করেছে, আদালত অবমাননা করেছে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। ভারত সরকার এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেনি।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর, জমিজমা দখলে ভারতকে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি দাবি করে রিজভী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিএনপির যে লাখ লাখ নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে, গুম, খুন, অপহরণ, জেল-জুলুম করেছে, অরাজনৈতিক বিরোধী মতকে দমন করেছে, তা নিয়েও টুঁ শব্দ করেনি। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড, তিনটি ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনসহ কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ ভারত করেনি। বরং এসবের বৈধতা ও সমর্থন দিয়েছে ভারত।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এ দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু বসবাস করে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং চাকমা, মারমা, গারো, মুরংসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আবহমানকাল ধরে একটা দৃঢ় ও নিবিড় যোগসূত্র বয়ে এনেছে। তারা একসঙ্গে মিলেমিশে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সহমর্মী হয়েই শান্তিতে বসবাস করছে। এখানে এক দেশ, এক জাতি, আমরা সবাই বাংলাদেশি। অথচ, ভারত সকল বাংলাদেশির স্বার্থে কথা না বলে, সব সময় শুধু একটি সম্প্রদায়ের স্বার্থে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কথা বলে। ভারতের এই আচরণ ভারতকে সর্বজনীন না করে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বী করেছে। ভারতের এসব আচরণ এ দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নেয়নি। এ দেশের মানুষ কঠিন সময়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে জানে। প্রতিরোধের দুর্ভেদ্য দেয়ালও প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলতে পারে। এ দেশের হিন্দুদেরও বৃহদাংশ ভারতের এই নীতি সমর্থন করে না। আজ এই বাস্তবতা ভারতকে বুঝতে হবে। অসূয়া শক্তির কখনো জয় হতে পারে না।

নিউজবিজয়২৪ডট কম/এফএইচএন