চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা কেঁপে ওঠে। ডিপোর পাশের এলাকা সোনাইছড়ি। সেখানকার ভবনের জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের শব্দ ও ধাক্কা এতো তীব্র ছিল আশপাশের বাসিন্দাদের মনে হয়েছিল তাঁরা মরেই যাবেন। সেখানে দায়িত্বরত শিল্প পুলিশের এক কনস্টেবলের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহতদের মধ্যে ৪০ জন শিল্প পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। বিস্ফোরণ স্থল থেকে এখনো উঠছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত রোগী নিয়ে আসা আব্দুল করিম বলেন, ‘প্রথমে আগুন জ্বলতে দেখেছি। কয়েক মিনিট পর শক্তিশালী বিস্ফোরণ। আমার বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে। আশপাশের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা এই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে।’
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোর প্রবেশমুখের দু পাশের এক কিলোমিটারজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। ডিপোর ভেতরে এক একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে আর বেরোয়—আর মানুষ হই হই করে ছুটে যায় সেদিকে। পুলিশ লাঠিচার্জ করেও পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। সবার চেহারাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। তাঁরা এসেছেন স্বজনের খোঁজে। আতঙ্কিত মুখগুলো থেকে বেরোচ্ছে একটাই বাক্য—এমন বিকট শব্দ কখনো শুনিনি!
তবে স্বজন আর বন্ধুদের খোঁজে বহু মানুষ ডিপোর প্রবেশমুখে ভিড় করলেও ডিপোর দুপাশের বাসিন্দাদের বেশিরভাগই নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছেন। অনেক ঘরবাড়ির জানালা-দরজার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
রাত আড়াইটায় ঘটনাস্থলে এমন কয়েকজনকে পাওয়া যায়। কারও সঙ্গে কথা হয় ফোনে। ডিপোর উত্তরের সীমানা দেয়াল লাগোয়া কেশবপুর গ্রাম। বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ তারাকী পরিবারের চার সদস্য নিয়ে চলে গেছেন প্রায় এক কিলোমিটার দূরের আরেক গ্রামে। তারাকী বলেন, ‘৯টার দিকে আগুন লেগেছে শুনে ভেবেছি ছোটখাটো। সে জন্য পরিবার নিয়ে বাসায় ছিলাম। ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে কনটেইনার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। এরপর আতঙ্কিত হয়ে এক কিলোমিটার দূরের আরেকটি গ্রামে চলে এসেছি পরিবার নিয়ে।’
ডিপোর দক্ষিণপাশের কদমরসুল গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর নাঈম। বিস্ফোরণের শব্দে তাঁর বাড়ির দরজা-জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘বাসায় ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বাসার সব থাই গ্লাসের জানালা ভেঙে পড়ে। ভয়ে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কয়েক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বাসায় ফিরি।’
কেশবপুরের লালবেগ এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জোবায়েত। তাঁর আধপাকা বাড়িতে অবশ্য কাচের কোনো দরজা-জানালা নেই। ফলে তেমন ক্ষতি হয়নি।
জোবায়েত বলেন, ‘এমন শব্দ কখনো শুনিনি। যাদের ঘরে থাই জানালা-দরজা আছে বেশিরভাগই ভেঙে পড়েছে। অনেকে ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনেকে বাড়িতে ফিরলেও সেই শব্দ এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।’
বিএম ডিপো কনটেইনারের প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্বের ডাকবাংলো জামে মসজিদের কাচও ভেঙে পড়েছে। পাশের ফারুক স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘ডিপোর পাশের একটি হোটেলে ভাত খাচ্ছিলাম। এমন সময় কানে আসে বিস্ফোরণের শব্দ। এরপর আর কিসের ভাত! কোনোরকমে দৌড়ে পালিয়ে আসি। পরে এসে দেখি দোকানের পাশের মসজিদের কাচ ভেঙে পড়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এর মধ্যে ডিপোর কর্মীদের অনেকেই বেরিয়ে আসেন। তখনো ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎ কনটেইনারের বিস্ফোরণ ঘটে।এ ঘটনায় আড়াই শতাধিক আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।