বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ (৫ জুন, রবিবার)। ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বের একশটিরও বেশি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন’। এবারের জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। একই সঙ্গে বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলারও উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
এদিকে পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের তাদের পদ থেকে অপসারণসহ পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার আশপাশের চারটি নদীর দূষণে ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেছেন।
দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে খুদে বার্তা প্রেরণ ও ওয়েলকাম টিউন সংযোজন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, স্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার, রাউন্ড টেবিল আলোচনা, পরিবেশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম, পরিবেশ অধিদফতর সম্পর্কিত বুকলেটের পরিমার্জিত সংস্করণ প্রণয়ন ও প্রকাশ, ইটিপিবিহীন ও দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের জন্য সচেতনতামূলক সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন এবং একই সঙ্গে ৫ জুন হতে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন হতে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২ এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
নদী দূষণে ঢাকা ওয়াসা দায়ী ॥ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনজুর এ চৌধুরী বলেন উন্নত দেশের বিলাসী জীবনযাপনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ২২% মানুষ পরিবেশ শরণার্থী হতে পারে। তিনি ঢাকার ৪ নদী দূষণের জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন। কারণ তারা ঢাকার সকল বাসিন্দাকে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে নাই যার কারণে অনেক বাসা-বাড়ির বর্জ্য সরাসরি নদীতে চলে যায়। তিনি অক্ষেপ করে বলেন ঢাকার ৯৫ কিলোমিটারের মধ্যে এমন কোন খাল বিল নেই যেখানে মানুষ গোসল করতে পারে বা শিশুরা সাঁতার কাটতে পারে। আগামী ২৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চের মধ্যে ঢাকার ৪ নদীর দূষণ বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং এ ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণের বিষয় সকলকে অবহিত করেন। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেকে এটাকে অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আমি বলব ৯ মাসে যদি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যায়, তাহলে এ ৯ মাসে আমরা কেন নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে পারব না?
পরিবেশ অধিদফতরের প্রাক্তন ডিজি ড. সুলতান আহমেদ বলেন ইকো সিস্টেম সংরক্ষণ না করলে সব প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, আমাদের সকল কর্মকা- পরিবেশবান্ধব হতে হবে নতুবা বিপর্যয়ের সন্মুখীন হতে হবে। শুধু মানুষের অধিকার নয় সব প্রজাতির অধিকার নিয়ে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন ও আইন অমান্য করার বিষয় তুলে ধরে সরকারকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও শত শত জনস্বার্থের মামলায় আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনীহা বাংলাদেশকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে সে প্রেক্ষাপটে যথার্থই এ বছরের বিশ^ পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই জীবনযাপন।’
এইচআরপিবির ১০ দফা ॥ পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের তাদের পদ থেকে অপসারণসহ পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দাবিগুলো তুলে ধরেন। ১০ দফা দাবিগুলো হচ্ছে- পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের সঙ্গে জড়িত যে কোন জনপ্রতিনিধির ওই পদ থেকে অপসারণ এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার আইন প্রণয়ন করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করে কমিশনকে ক্ষমতায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং কমিশনকে সরাসরি ক্যাবিনেটের আওতায় পরিচালনা করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলায় প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া) সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধ করার আইন পাস করতে হবে।