বাবা-মা যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেন, তারা যত দিন জীবিত আছেন, তাদের ঋণ পরিশোধের দায়-দায়িত্ব মূলত তাদের ওপরই বর্তায়। বাবা-মায়ের ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া সন্তানদের ওপর আবশ্যক নয়। তাই বাবা- মায়ের ঋণ সন্তানদের কাছে দাবি করা যাবে না, সেজন্য তাদের দোষী করা যাবে না। তবে বাবা-মা যদি একান্ত নিরুপায় ও বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তাদের প্রতি সদচারের অংশ হিসেবে সন্তানদের উচিত যথাসাধ্য তাদের সাহায্য করা।
বাবা-মা যদি ঋণ রেখে মারা যান, তাহলে সন্তানদের কর্তব্য হলো পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে প্রথমত তাদের ঋণ পরিশোধ করা। এরপর তাদের কোনো অসিয়ত থাকলে ঋণ আদায়ের পর অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা পূরণ করা। ঋণ আদায় ও এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে অসিয়ত পূরণের পর অবশিষ্ট সম্পদ ওয়ারিসদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে বণ্টন করা।
কোরআনে মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন কীভাবে হবে তা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের আগে ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। মৃতের কোনো অসিয়ত থাকলে তা পালন করার আগে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। (দেখুন সুরা নিসা: ১১-১৪)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাহাবিদের জানাজা নামাজ পড়াতেন না, যদি তার ঋণ অপরিশোধিত থাকত। (সহিহ বুখারি: ২১৪৮)
মৃত বাবা-মায়ের যদি সম্পদ না থাকে তাহলে নিজের সম্পদ থেকে তাদের ঋণ পরিশোধ করা সন্তানদের ওপর ওয়াজিব নয়। যদিও জীবিত অবস্থার মতো এ ক্ষেত্রেও বাবা-মায়ের প্রতি সদাচারের অংশ হিসেবে তাদের আত্মার শান্তির জন্য সন্তানের উচিত সাধ্য থাকলে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি অহংকার, গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ ও ঋণ-এই তিন বিষয় থেকে মুক্ত অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে তিরমিজি: ১৫৭২, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৪১২)
ইসলাম অন্যের হক, আমানত, ওয়াদা, চুক্তি ইত্যাদি রক্ষা করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। আমানতের খেয়ানত করা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, মিথ্যা বলা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট। কোরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,
وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ لِاَمٰنٰتِهِمۡ وَ عَهۡدِهِمۡ رٰعُوۡنَ
আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকার রক্ষায় যত্নবান। (সুরা মুমিনুন: ৮)
কারো কাছ থেকে ঋণ নিলে তা যথাসময়ে পরিশোধ করা আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষার অন্তর্ভুক্ত। অযথা দেরি করা, ঘোরানো, টালবাহানা করা অত্যন্ত গর্হিত গোনাহের কাজ।
রাসুল (সা.) সব সময় ঋণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজের শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর আগে বিভিন্ন প্রার্থনা করার সময় ঋণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনাও করতেন। এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো ঋণ থেকে অনেক বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন। মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কারণ, মানুষ যখন ঋণগ্রস্ত হয়, তখন মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। (সহিহ বুখারি: ৮৩২, সহিহ মুসলিম: ৫৮৯)
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন