ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পার্বত্য শান্তি চুক্তি: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং অন্তরায়

প্রত্যাশা:-

পার্বত্য চট্টগ্রাম (বাংলাদেশের এক দশমাংশ) বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা কোনো পরিস্থিতিতেই আপোস করা যায় না। বাংলাদেশের কোনো অংশকেই বিদেশি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল করতে দেয়া যাবে না। একই সাথে দেশের অভ্যন্তরের কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে পাহাড়ি সন্ত্রাসী অথবা পার্শ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মিলাতে দেয়া যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, সামাজিক স্বত্তা রয়েছে। তাদের স্বত্তার শুধু স্বীকৃতি নয়, চর্চারও সুযোগ দিতে হবে। যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে তাদের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠি (পাহাড়ি-বাঙালি) মিলেমিশে থাকবে। প্রত্যেকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সকলের সমান অধিকার থাকবে। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী যে কোনো নাগরিকের যেমন বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যে কোনো সম্পদের মালিক হবার অধিকার আছে, বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের পার্বত্য অঞ্চলে বৈধভাবে সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া প্রতিটি জনগোষ্ঠি, প্রতিটি নাগরিক সম্ভাব্য সকল নাগরিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। উপজাতিদের মধ্যেও যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি তাদের সার্বিক উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। তা না হলে কেএনএফ এর মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কেএনএফ আবার পার্শ্ববর্তী দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠির সাথে হাত মিলিয়ে এ অঞ্চল অশান্ত করে তুলতে পারে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ক্ষুদ্র বা স্বীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে সকল আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষিত সমাজ, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, ধর্মীয় নেতাসহ সকল সচেতন নাগরিকের। প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য হওয়া দরকার, কীভাবে সবাই সবার সাথে হাত মিলিয়ে এ অঞ্চলের অবকাঠামোগত, সামাজিক, পরিবেশগত, প্রশাসনিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করা যায়।
এবং চুক্তিতে উল্লেখিত সংবিধান সংঘর্ষিত ধারা গুলো সংশোধন করতে হবে।
অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো  নিষিদ্ধ করতে হবে। বয়কট করতে হবে হীন স্বার্থ চরিতার্থকারীদের, চাঁদাবাজদের, সন্ত্রাসীদের, বৈষম্য সৃষ্টিকারীদের, উন্নয়নে বাধা সৃষ্টিকারীদের, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হরণে ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তিদের, শান্তি বিনষ্টকারীদের।
সাধারণ নিরীহ মানুষ অস্ত্রের ঝলকানি দেখতে চায় না। ঘুষ, চাঁদা দিতে চায় না। মুখ ফুটে তাদের মনের কথা বলতে চায়। স্বীয় উৎপাদিত পণ্য নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে, ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে চায়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পেতে চায় সকল নাগরিক সুবিধা।
তবেই হবে আমাদের শান্তির পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সোনার বাংলাদেশ।
★প্রাপ্তি:
স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস গঠন হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে পিসিজেএসএস শান্তিবাহিনী নামে সশস্ত্র শাখা গঠন করে এবং গোপনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তৎকালীন বিডিআর, পুলিশ, আনসারসহ অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে ১৯৭৬ সাল থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। যা একটি স্বাধীন দেশের ভিতরে থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ও দেশদ্রোহিতার শামিল। ফলে বহু দেশপ্রেমিক সেনা সদস্য, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, নিরাপরাধ বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের (আনুমানিক ৩০,০০০) প্রাণহানি ঘটে। এবং সত্তর ও আশির দশকে প্রায় লক্ষাধিক বাঙালিকে সমতল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের জন্য নিয়ে আসা হয়। তখন উপজাতিদের অসন্তোষ আরো বৃদ্ধি পায়।
শান্তিবাহিনী একদিকে যেমন স্থানীয় বাঙালি ও উপজাতিদের উপর জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজিতে মেতে ছিল, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নিজেদের বিপথে যাবার পথকে আরো সুগম করেছিলো। প্রাথমিকভাবে নব্য গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্গম অঞ্চলে অভিযান পরিচালনায় কম অভিজ্ঞতা, অতি দুর্বল অথবা শূন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, ম্যালেরিয়া, কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনের কম অভিজ্ঞতা ইত্যাদি কারণে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হতাহতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের সঠিক দিক নির্দেশনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের সমর্থন, এবং সর্বোপরি কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অভিযানে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও উপর্যোপরি আক্রমণের মুখে টিকে উঠতে না পেরে শান্তিবাহিনী সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। সরকারের সাথে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা পার্বত্যচুক্তি হিসেবে পরিচিত এবং  এই চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নয়ন হয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠি তাঁদের উৎপাদিত পণ্য শুধু স্থানীয় জেলা শহর নয়, ঢাকাসহ সারাদেশ এমন কি বিদেশেও রপ্তানি করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়াতে বিদ্যুৎ, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রসার ঘটেছে। সমতলের জনগোষ্ঠির সাথে পাহাড়ের জনগোষ্ঠির সংযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিতরেই তাঁদের সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখতো, আজ তাঁদের সকল কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে।এবং সশস্ত্র সংগ্রামের কিছুটা পরিসমাপ্তি ঘটে।
★অন্তরায়:
১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল সরকারের, যার অধিকাংশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। পক্ষান্তরে চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ২টি ধারা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। এক. সকল অস্ত্র জমা দেওয়া; দুই. সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা। দুটি শর্তের মধ্যে তারা একটি শর্তও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেনি এবং বিভিন্ন দলে ভিক্ত হলে আধিপত্য বৃদ্ধি করেছে । ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরের পর যে কোনো অস্ত্রধারী অবৈধ (যদিও তারপূর্বেও অবৈধই ছিল)। শান্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সংখ্যা কমে যাওয়াতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তার সুযোগ নিচ্ছে এই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর সশস্ত্র শাখা। সুযোগ পেলেই এক দলের সশস্ত্র শাখা অন্য দলের কর্মী সমর্থকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তিন পার্বত্য জেলাকে মোটামুটি তারা ভাগ করে নিয়েছে নিজ নিজ নিয়ন্ত্রিত এলাকা রূপে। নিরীহ সাধারণ পাহাড়ি বা বাঙালি তাঁদের স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা বা জীবিকা অর্জনে প্রতিনিয়ত বাধা অথবা বিপদে পড়ছে।
এই শান্তি চুক্তিতে সংবিধান সংঘর্ষিত ধারা গুলোর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে জাতিগত বৈষম্য।
পাহাড়ে বসবাস-রত সকল বাঙ্গালীদের সাংবিধানিক অধিকার। থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে ৫% উপজাতি কোটার মাধ্যমে পাহাড়ে বসবাস রত বাঙ্গালীদের শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া থেকে বাঙ্গালীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক ভাবে বাঙ্গালী দের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের কোনো উপজাতি ঠিকাদার দের সরকার কে ভ্যাট দিতে হয় না। কিন্তু একজন বাঙ্গালী  ঠিকাদার কে ভ্যাট দিতে হয়।
এই শান্তিচুক্তির সুবিধা নিয়ে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে অধিক পরিমানে চাঁদাবাজি করতেছে এবং তাদের অশস্ত্র বৃদ্ধিসহ আধিপত্য বিস্তার করতেছে।
যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে এক বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অপরাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশকে কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল স্বীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থে অশান্ত করে তুলেছে। অথচ, এখন হাঁটতে হবে উন্নয়নের পথে, হাটতে হবে সম্প্রীতির পথে। তবেই অর্জিত হবে প্রত্যাশিত লক্ষ্য।
★মূল কথা:
শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে পরিপূর্ণ শান্তি ফিরে আনতে হলে, চুক্তিতে সংবিধান সংঘর্ষিত ধারা বাতিল বা সংশোধন করতে হবে।
পাহাড়ে সকল অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রসী সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে।
চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
প্রত্যাহার কৃত সেনা ক্যাম্প পুন:স্থাপন করতে হবে
কোনো জাতিকে আদিবাসী না বলে সকলকে বাংলাদেশী বলে গণ্য করতে হবে।
সকল জাতির মধ্যে ভূমি অধিকার দিতে হবে এবং মালিকানা দিতে হবে।
তবেই পার্বত্য শান্তিচুক্তি কে প্রকৃত ভাবে শান্তিচুক্তি বলা যাবে।
★লেখক: মো.সাইদুর রহমান।
সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ ও বৈষম্য মুক্ত পাহাড় গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা।

সংবাদটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

ইতিহাসের এই দিনে: ৭ ফেব্রুয়ারি-২০২৫

পার্বত্য শান্তি চুক্তি: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং অন্তরায়

"নিউজ বিজয়: এক দশকের মাইলফলক" প্রকাশিত সময় : ০৩:০৪:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা:-

পার্বত্য চট্টগ্রাম (বাংলাদেশের এক দশমাংশ) বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা কোনো পরিস্থিতিতেই আপোস করা যায় না। বাংলাদেশের কোনো অংশকেই বিদেশি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল করতে দেয়া যাবে না। একই সাথে দেশের অভ্যন্তরের কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে পাহাড়ি সন্ত্রাসী অথবা পার্শ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মিলাতে দেয়া যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, সামাজিক স্বত্তা রয়েছে। তাদের স্বত্তার শুধু স্বীকৃতি নয়, চর্চারও সুযোগ দিতে হবে। যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে তাদের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠি (পাহাড়ি-বাঙালি) মিলেমিশে থাকবে। প্রত্যেকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সকলের সমান অধিকার থাকবে। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী যে কোনো নাগরিকের যেমন বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যে কোনো সম্পদের মালিক হবার অধিকার আছে, বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের পার্বত্য অঞ্চলে বৈধভাবে সম্পত্তি ক্রয়ের অধিকার রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী পিছিয়ে পড়া প্রতিটি জনগোষ্ঠি, প্রতিটি নাগরিক সম্ভাব্য সকল নাগরিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। উপজাতিদের মধ্যেও যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি তাদের সার্বিক উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। তা না হলে কেএনএফ এর মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কেএনএফ আবার পার্শ্ববর্তী দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠির সাথে হাত মিলিয়ে এ অঞ্চল অশান্ত করে তুলতে পারে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ক্ষুদ্র বা স্বীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে সকল আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষিত সমাজ, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, ধর্মীয় নেতাসহ সকল সচেতন নাগরিকের। প্রত্যেকের একটাই লক্ষ্য হওয়া দরকার, কীভাবে সবাই সবার সাথে হাত মিলিয়ে এ অঞ্চলের অবকাঠামোগত, সামাজিক, পরিবেশগত, প্রশাসনিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করা যায়।
এবং চুক্তিতে উল্লেখিত সংবিধান সংঘর্ষিত ধারা গুলো সংশোধন করতে হবে।
অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো  নিষিদ্ধ করতে হবে। বয়কট করতে হবে হীন স্বার্থ চরিতার্থকারীদের, চাঁদাবাজদের, সন্ত্রাসীদের, বৈষম্য সৃষ্টিকারীদের, উন্নয়নে বাধা সৃষ্টিকারীদের, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হরণে ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তিদের, শান্তি বিনষ্টকারীদের।
সাধারণ নিরীহ মানুষ অস্ত্রের ঝলকানি দেখতে চায় না। ঘুষ, চাঁদা দিতে চায় না। মুখ ফুটে তাদের মনের কথা বলতে চায়। স্বীয় উৎপাদিত পণ্য নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে, ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে চায়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পেতে চায় সকল নাগরিক সুবিধা।
তবেই হবে আমাদের শান্তির পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সোনার বাংলাদেশ।
★প্রাপ্তি:
স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস গঠন হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে পিসিজেএসএস শান্তিবাহিনী নামে সশস্ত্র শাখা গঠন করে এবং গোপনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তৎকালীন বিডিআর, পুলিশ, আনসারসহ অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে ১৯৭৬ সাল থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। যা একটি স্বাধীন দেশের ভিতরে থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ও দেশদ্রোহিতার শামিল। ফলে বহু দেশপ্রেমিক সেনা সদস্য, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, নিরাপরাধ বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের (আনুমানিক ৩০,০০০) প্রাণহানি ঘটে। এবং সত্তর ও আশির দশকে প্রায় লক্ষাধিক বাঙালিকে সমতল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের জন্য নিয়ে আসা হয়। তখন উপজাতিদের অসন্তোষ আরো বৃদ্ধি পায়।
শান্তিবাহিনী একদিকে যেমন স্থানীয় বাঙালি ও উপজাতিদের উপর জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজিতে মেতে ছিল, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নিজেদের বিপথে যাবার পথকে আরো সুগম করেছিলো। প্রাথমিকভাবে নব্য গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্গম অঞ্চলে অভিযান পরিচালনায় কম অভিজ্ঞতা, অতি দুর্বল অথবা শূন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, ম্যালেরিয়া, কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনের কম অভিজ্ঞতা ইত্যাদি কারণে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হতাহতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের সঠিক দিক নির্দেশনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের সমর্থন, এবং সর্বোপরি কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অভিযানে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও উপর্যোপরি আক্রমণের মুখে টিকে উঠতে না পেরে শান্তিবাহিনী সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। সরকারের সাথে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা পার্বত্যচুক্তি হিসেবে পরিচিত এবং  এই চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নয়ন হয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠি তাঁদের উৎপাদিত পণ্য শুধু স্থানীয় জেলা শহর নয়, ঢাকাসহ সারাদেশ এমন কি বিদেশেও রপ্তানি করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়াতে বিদ্যুৎ, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রসার ঘটেছে। সমতলের জনগোষ্ঠির সাথে পাহাড়ের জনগোষ্ঠির সংযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিতরেই তাঁদের সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখতো, আজ তাঁদের সকল কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে।এবং সশস্ত্র সংগ্রামের কিছুটা পরিসমাপ্তি ঘটে।
★অন্তরায়:
১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল সরকারের, যার অধিকাংশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। পক্ষান্তরে চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ২টি ধারা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। এক. সকল অস্ত্র জমা দেওয়া; দুই. সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা। দুটি শর্তের মধ্যে তারা একটি শর্তও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেনি এবং বিভিন্ন দলে ভিক্ত হলে আধিপত্য বৃদ্ধি করেছে । ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরের পর যে কোনো অস্ত্রধারী অবৈধ (যদিও তারপূর্বেও অবৈধই ছিল)। শান্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সংখ্যা কমে যাওয়াতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তার সুযোগ নিচ্ছে এই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর সশস্ত্র শাখা। সুযোগ পেলেই এক দলের সশস্ত্র শাখা অন্য দলের কর্মী সমর্থকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তিন পার্বত্য জেলাকে মোটামুটি তারা ভাগ করে নিয়েছে নিজ নিজ নিয়ন্ত্রিত এলাকা রূপে। নিরীহ সাধারণ পাহাড়ি বা বাঙালি তাঁদের স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা বা জীবিকা অর্জনে প্রতিনিয়ত বাধা অথবা বিপদে পড়ছে।
এই শান্তি চুক্তিতে সংবিধান সংঘর্ষিত ধারা গুলোর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে জাতিগত বৈষম্য।
পাহাড়ে বসবাস-রত সকল বাঙ্গালীদের সাংবিধানিক অধিকার। থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে ৫% উপজাতি কোটার মাধ্যমে পাহাড়ে বসবাস রত বাঙ্গালীদের শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া থেকে বাঙ্গালীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক ভাবে বাঙ্গালী দের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের কোনো উপজাতি ঠিকাদার দের সরকার কে ভ্যাট দিতে হয় না। কিন্তু একজন বাঙ্গালী  ঠিকাদার কে ভ্যাট দিতে হয়।
এই শান্তিচুক্তির সুবিধা নিয়ে উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন গুলো কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে অধিক পরিমানে চাঁদাবাজি করতেছে এবং তাদের অশস্ত্র বৃদ্ধিসহ আধিপত্য বিস্তার করতেছে।
যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে এক বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অপরাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশকে কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল স্বীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থে অশান্ত করে তুলেছে। অথচ, এখন হাঁটতে হবে উন্নয়নের পথে, হাটতে হবে সম্প্রীতির পথে। তবেই অর্জিত হবে প্রত্যাশিত লক্ষ্য।
★মূল কথা:
শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে পরিপূর্ণ শান্তি ফিরে আনতে হলে, চুক্তিতে সংবিধান সংঘর্ষিত ধারা বাতিল বা সংশোধন করতে হবে।
পাহাড়ে সকল অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রসী সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে।
চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
প্রত্যাহার কৃত সেনা ক্যাম্প পুন:স্থাপন করতে হবে
কোনো জাতিকে আদিবাসী না বলে সকলকে বাংলাদেশী বলে গণ্য করতে হবে।
সকল জাতির মধ্যে ভূমি অধিকার দিতে হবে এবং মালিকানা দিতে হবে।
তবেই পার্বত্য শান্তিচুক্তি কে প্রকৃত ভাবে শান্তিচুক্তি বলা যাবে।
★লেখক: মো.সাইদুর রহমান।
সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ ও বৈষম্য মুক্ত পাহাড় গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা।