লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় বিয়ের প্রলোভনের ধর্ষণের একটি ঘটনা তিন লাখ টাকার বিনিময়ে নিষ্পত্তি করে মেয়েকে দেড় লক্ষ টাকা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আমিনুর রহমান নামে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গতকাল (৮ জুলাই) রাত ১১ টার দিকে উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া ধওলাটারী এলাকার আজিজুল মওলানার বাড়িতে মিমাংসার এ ঘটনাটি ঘটে।
মিমাংসাকারী আমিনুর রহমান স্থানীয় গোতামারী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বলে জানা গেছে। আর মেয়েটি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। একজন পোশাক শ্রমিক।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৮ জুন) ওই উপজেলার দইখাওয়াহাটের পাশে ধওলাটারী এলাকার আমির আলীর বাড়ীতে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেন (১৮) বছরের এক পোশাক শ্রমিক। চারদিন অনশনের পর ইউপি সদস্য আমিনুর রহমানের সহযোগিতায় প্রেমিক মোস্তাকিনের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের একটি অভিযোগ দেন ওই প্রেমিকা। থানা পুলিশ ও সাংবাদিককে ম্যানেজ করে ঘটনাটি মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলে মোস্তাকিনের পরিবারের কাছে আমিনুর মেম্বার ৫০ হাজার টাকা নেয়ার পরও মেয়েটি মামলা করায় মোস্তাকিনের পরিবার আমিনুর মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির একটা অভিযোগ দেয়। এরপর থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ঐ ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান।
এমতাবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাতে বিষয়টি মিমাংসা করতে প্রেমিক মোস্তাকিনের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধাপে তিন লাখ টাকা নেয় ইউপি সদস্য আমিনুর। সেখান থেকে ঐ পোশাক শ্রমিককে দেড় লাখ টাকা দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করেন। তবে অর্থের বিনিময়ে নিষ্পত্তির বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ জানেনা বলে দাবি করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এই ঘটনায় ঐ এলাকা জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
অনশনকারী তরুণী জানান, আমিনুর রহমান মেম্বার তাকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে জোর করে মিমাংসার কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। মিমাংসা করে টাকা নেয়ার পরও ছেলের বাড়ির পাশে কেন, এ প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি বলেন, আমিনুর মেম্বার আমাকে এখানে থাকতে বলেছে। ঈদের পর ঢাকা যাওয়া হবে।
মিমাংসা করে টাকা নেয়ার পরও মেয়েটি ঢাকায় না গিয়ে ছেলের বাড়ির পাশে থাকায় দুঃচিন্তায় আছে ছেলের পরিবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ এলাকার অনেকেই বলেন, ঢাকা থেকে মেয়েটি এসে ছেলের বাড়িতে ওঠা, মেয়েটিকে দিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা আর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিমাংসা করে দেয়া, এই সবকিছু আমিনুর মেম্বার করেছে। সে একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকার যে ক্ষতিটা করলো সেটা মেনে নেয়ার মতো নয়।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, মিমাংসা হয়েছে। মেয়েটিকে দেড় লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতিতেই আমরা সমাধান করেছি। থানা পুলিশকে জাহিদ মেম্বারের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা কারা কারা ভাগবাটোয়ারা করে নিলেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
গোতামারী ইউপি চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন, মিমাংসার বিষয়ে কিছুই জানিনা। তবে শুনেছি ইউপি সদস্য আমিনুর নিজেই মিমাংসা করেছেন। আমি কখনই তাকে সমাধান করার জন্য বলিনি। অভিযোগ থানায় দেয়া হয়েছে। আইনে এর সঠিক বিচার হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি আমিনুর মেম্বার পুলিশ সাংবাদিককে দেয়ার কথা বলে ছেলের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। সে টাকা ফিরে দেয়ার কথা বললেও, মেম্বার সেটা এখনও ফিরে দেয়নি।
হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল আলম বলেন, মিমাংসার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।