ঢাকা ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করল, পানিবন্দি ২৫ হাজার পরিবার

উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বিজ্ঞাপন

এর আগে গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বামতীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। প্রতিমুহুর্তে বাড়ছে এর সংখ্যা। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমের উৎপত্তিস্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি এককভাবে ব্যবহার করছে ভারত সরকার।

বর্ষাকালে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তারা তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়। এই উজানের ঢল ও ভা্রী বর্ষণে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষীরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। মারাত্ম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। শনিবার রাতভর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর উপর দিয়ে অভার ফ্লো প্রবাহিত হয়। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার। পরে রাতের দিকে স্থানীয়রা বালু ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা করে।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার মানুরা বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রীজ অংশের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় বাঁধ কাঁপতেছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন/সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্ধ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেয়া হবে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ৩ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎ সীমার ২ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেয়া হবে। একই সাথে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয় সেটা নজরদারী করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিস্তা নদী বিপৎ সীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
নিউজবিজয়২৪ডট কম/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

এই প্রথম বাংলাদেশে আনন্দের সঙ্গে দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে: গয়েশ্বর

তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করল, পানিবন্দি ২৫ হাজার পরিবার

প্রকাশিত সময় :- ০১:০৮:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বিজ্ঞাপন

এর আগে গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বামতীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। প্রতিমুহুর্তে বাড়ছে এর সংখ্যা। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তিস্তাপাড়ের মানুষ।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতে সিকিমের উৎপত্তিস্থল থেকে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়া হয়। একইভাবে শুষ্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি এককভাবে ব্যবহার করছে ভারত সরকার।

বর্ষাকালে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তারা তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেয়। এই উজানের ঢল ও ভা্রী বর্ষণে তিস্তার পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোড়ে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষীরা। একই সাথে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। মারাত্ম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। শনিবার রাতভর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর উপর দিয়ে অভার ফ্লো প্রবাহিত হয়। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার। পরে রাতের দিকে স্থানীয়রা বালু ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষা করে।

সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার মানুরা বলেন, রাতে পানির গর্জনে ঘুমাতে পারিনি। সলেডি স্প্যার বাঁধে ব্রীজ অংশের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় বাঁধ কাঁপতেছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে, স্প্যার বাঁধ বুঝি ভেসে যায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধে বস্তা ফেলে রক্ষা করেছে। বন্যার সময় নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের মানুষদের।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে তিন/সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুকনো খাবার এখন পর্যন্ত বরাদ্ধ আসেনি। বরাদ্দ এলে পৌঁছে দেয়া হবে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ৩ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধগুলো রক্ষায় সাধারণ মানুষদের নিয়ে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎ সীমার ২ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেয়া হবে। একই সাথে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয় সেটা নজরদারী করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিস্তা নদী বিপৎ সীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা বাড়লে তা মোকাবিলা করতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
নিউজবিজয়২৪ডট কম/এফএইচএন