তাক লাগানো শ্যামল
👓
ফেসবুক থেকে- Ali Akhtar Golam Kibria
লালমনিরহাটের জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আমার যৎকিঞ্চিৎ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সেটা আপনাদের অনেকের কাছে বাহুল্য মনে হবে বা কারও কারও কাছে বাহুল্য মনে হবে না। আপনারা জানেন, অতি সম্প্রতি লালমনিরহাটে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।
এই নির্বাচনে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল – যে শ্যামল লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তথা হাতীবান্ধা–পাটগ্রাম আসনের এমপি জনাব মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন ; সেই আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জয়লাভ করেছেন। যেন তাক লাগিয়ে দিলেন শ্যামল!
জনাব শ্যামল হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে তিনি হয়ে গেলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন।
শুনেছি, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগের জেলা ও কেন্দ্রের বিশিষ্ট নেতা অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমী। যদি এটা দলীয় মনোনয়ন হয়ে থাকে, তাহলে তিনি আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার মধ্যম সারির নেতার কাছে হেরে গেছেন। অর্থাৎ ধরে নিতে পারি যে, মনোনয়ন যথাযথ ছিল না। এদিকে হেরে গিয়েও তিনি ধৈর্য হারাননি। বোঝা গেল, আল্লাহ তাঁকে যথেষ্ট ধৈর্যশক্তি দিয়েছেন। এজন্য আমি জনাব রুমীর প্রশংসা করি।
কিছুটা অবাকই লেগেছে যে, অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমী এমপি ছিলেন। সেই তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নামলেন কেন! সিনিয়র সচিবের উপরের পদমর্যাদার একদিনের এই মানুষটি ডেপুটি সেক্রেটারি পদমর্যাদার চেয়ারম্যান পদের জন্য আত্মাহুতি দিতে গেলেন কেন?
সফুরা বেগম রুমী সম্ভবত নিজেকে বুঝতে পারেননি। হাতির চোখ ছোট, তাই সে নিজের চেহারা বুঝতে পারে না। জনাব রুমীর বেলায় তেমন কিছু ঘটেছে কি না, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। নাহলে এমপি হওয়া মানুষটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চাইবেন কেন!
অন্যদিকে, জেলা ও কেন্দ্রের নেতা হয়েও তিনি উপজেলার একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে হেরে গেলেন। ভাবতে গেলে আমারই কষ্ট হয়। কিন্তু জনাব রুমী টলেননি। আমি তাঁর মানসিক শক্তিকে সম্মান করি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমার অতি পছন্দের মানুষ।
সফুরা বেগম রুমী দলীয় প্রার্থী হলে বা লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হলে তাঁর এই পরাজয় জেলা আওয়ামী লীগের জন্য চরম অপমান, লজ্জা ও ব্যর্থতার স্মারক হয়ে থাকবে।
তাহলে ব্যর্থতার এই দায়ভার লালমনিরহাট জেলার তিন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপির ঘাড়ে বর্তাবে কি না, এই দায়ে জেলা কমিটি বিলুপ্ত হবে কি না, দায়ী উপজেলা কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়া হবে কি না..সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আদার বেপারী হয়ে আমার মতো মানুষের অমন জাহাজের খবর নেওয়া উচিত নয়।
এবার ভোলা প্রসঙ্গ।
জনাব নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন সম্পাদক ছিলেন, বর্তমানে সহ-সভাপতি। তিনি নাকি একটি ভোটও পাননি। ইন্নালিল্লাহ! ঘটনা সত্য হলে এরপর তিনি মুখ দেখাবেন কেমন করে? জনসম্মুখে তিনি আদৌ মুখ দেখাবেন কি না, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। মুখ যার, অধিকার তার।
সামগ্রিক অবস্থাদৃষ্টে আমার পর্যবেক্ষণ হলো, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ নেতারা নমিনেশন কেনাবেচার নামে যে লুটপাট করেছে, এসব তারই প্রতিফল। সামনের দিনে এই প্রতিফলের গ্যাঁড়াকলে হয়তো এমপিরা পড়বেন, মন্ত্রীরা পড়বেন, আওয়ামী লীগের অনেকেই পড়বেন। নয়তো কেউই পড়বেন না। এগুলো অহেতুক অনুমান। তাই আমার মতো দুই পয়সার মানুষের এসব কথা বলা বাহুল্য, না বলাও বাহুল্য।
[ছবিটি গতকালের। এক দোয়া ও ইফতার মাহফিলে বক্তব্য উপস্থাপন করছেন লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল, পাশে বসে রয়েছেন আওয়ামী লীগ অর্থ বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য, তিন ব্যাংকের সাবেক এমডি এন্ড সিইও, খ্যাতিমান ব্যাংকার জনাব আতাউর রহমান প্রধান।]
আরও পড়ুন>>রাজধানীতে এখন কোনো যানজট নেই : সেতুমন্ত্রী
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন