জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই। তিস্তা উত্তরের ৫ জেলার কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন। লাইফ লাইন বা জীবন রেখা। এক সময়ের প্রমত্তা ক্ষরস্রোতা তিস্তা এখন মৃতপ্রায় একটি সরু খালে রুপ নিয়েছে। জন্ম থেকে জন্মান্তরে বয়ে চলা ছন্দময় তিস্তা এখন উত্তরের মানুষের দুঃখ। যেদিকে চোখ যায় শুধু রুপালি বালুকাময় বিস্তৃত চর। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি। পায়ে হেঁটে মানুষ নদী পার হচ্ছে।
উত্তরের ৫ জেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারী ২ দিন ব্যাপি জনতার সমাবেশ পালিত হবে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে লালমনিরহাটের মিশন মোড়স্থ হামার বাড়ী বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তিস্তা নদী রক্ষায় দুইদিন ব্যাপি গণজমায়েত উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রধান সমন্বয়ক, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন লালমনিরহাট এর আসাদুল হাবীব দুলু বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, যে তিস্তা নদী এক সময় সুখ-সমৃদ্ধির উৎস ছিল তা আর নেই, তিস্তা এখন উত্তরাঞ্চলের দুঃখের কারন। উচ্ছল জলধারার এই নদীর পানি এখন হাটুর নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারত এর একতরফা পানি প্রত্যাহার এবং নদীর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের উত্তরের ৫ টি জেলার কোটি মানুষের জীবন, জীবিকা, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যকে দারুণ ভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিস্তা তীরের মানুষজনের একসময় গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু ছিল। অর্থবৈভব আর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই তিস্তার কারনে এখনকার মানুষ বর্ষায় যেমন বন্যা-নদীভাঙনে নিঃস্ব হয় তেমনি শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধুধু বালুময় বিরান ভূমিতে পরিনত হয়।
এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা অনিবার্য মরুকরণের দিকে ধাবিত হবো একসময়। তাই তিস্তা নদী ও এর অববাহিকার মানুষকে রক্ষায় পানির ন্যায্য হিস্যা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে, পরিহাস করেছে। তাই তিস্তা অঞ্চলের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ নদী রক্ষায় এবং এই উত্তরবঙ্গের অর্থ সামাজিক উন্নতির জন্য সমস্বরে দাবী জানাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুস সালাম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদীর অববাহিকা জুড়ে কয়েক লক্ষ মানুষের গণজমায়েত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’। দুইদিনের লাগাতার কর্মসূচিতে সেমিনার, আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই” এই স্লোগানে ওই দুইদিন সেখানে তিস্তা নদীর কাউনিয়া সেতু, মহিপুর সেতু এবং তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট সহ বিভিন্ন পয়েন্টে তাবু করে এই সমাবেশ করা হবে। দেশের বিশিষ্টজনরা ছাড়াও নদী গবেষক সহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেকে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা রয়েছে।
নিউজ বিজয় ২৪ডট কম/এফএইচএন