প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চা রপ্তানির অতীত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার রপ্তানি বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, চা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বৃহদায়তন বাগানের পাশাপাশি সমতলে ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। গত দুই দশকে দেশের উত্তরাঞ্চলে সমতলে চা আবাদে বিপ্লব ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের প্রসারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় চা আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও চা আবাদ শুরু হয়েছে। এসব জেলায় চা আবাদ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ‘জাতীয় চা দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আজ শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশে দ্বিতীয়বারের মতন ‘জাতীয় চা দিবস-২০২২’ উদযাপিত হতে যাচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘চা দিবসের সংকল্প, সমৃদ্ধ চা শিল্প’ যা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসেবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশের চা শিল্পে অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ঢাকার মতিঝিলে চা বোর্ডের কার্যালয় স্থাপিত হয়। চা শিল্পে জাতির পিতার অবদান এবং চা বোর্ডে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করতে ২০২০ সালের ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে জাতীয় চা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে।
চা শিল্পের উন্নয়েনে জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, কার্যকরী পদক্ষেপ ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে চা শিল্প আজ টেকসই এবং মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.৫১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুণগতমানের চা উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এছাড়া চায়ের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি, বিপণন প্রক্রিয়ায় আধুনিকায়ন এবং সর্বোপরি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি চায়ের নতুন বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি। আমরা চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের জন্য কল্যাণ তহবিল, শিক্ষা ট্রাস্ট ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করছি। চা বাগানের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাগানগুলোতে পর্যাপ্ত স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, চা শিল্পের প্রসার ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য চা শ্রমিক, চা গবেষক, চা উৎপাদনকারী, চা ব্যবসায়ীসহ সকলে একসাথে আন্তরিকভাবে কাজ করবে। তিনি ‘জাতীয় চা দিবস-২০২২’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।