চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে গণেশ পূজার প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার পথে মাদরাসা ছাত্রদের গরম পানি নিক্ষেপের গুজবে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার অভিযোগ-
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের গণেশ পূজা উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের কয়েকজন সদস্য কোতোয়ালী থানার ব্যাটারী গলি থেকে গণেশ প্রতিমা তৈরি করে চেরাগি পাহাড় হয়ে জেএমসেন হলের দিকে যাচ্ছেলেন। পথিমধ্যে কদম মোবারক মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা ভবনের উপর থেকে গণেশ প্রতিমা লক্ষ্য করে পানি ও ইট পাথর নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করা হয়।
এতিমখানার ছাত্রদের পানি ও ইট নিক্ষেপের কারণে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী আহত হন এবং গণেশ প্রতিমা নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রচারণা চালানো হয়। এ প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মানুসারী জমায়েত হলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘটিত হয়।
অনুসন্ধানে যা জানা গেছে, কদম মোবারক মাদরাসায় মোট ২৫ জন শিক্ষক ও ৩২৫ জন ছাত্র রয়েছে। ছাত্রদের সবাই ১৮ বছরের কম বয়সী।
ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, কোনো ভবন থেকে গরম পানি নিক্ষেপের বিষয় তারা দেখেননি।
তারা আরো জানায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গণেশ প্রতিমা বহনকারী ভ্যান মাদরাসার সামনে রেখে উচ্চস্বরে বাজনা বাজাতে থাকলে এতিমখানার ছাত্র মো. নয়নসহ (১৪) কয়েকজন ছাত্র তাদের উচ্চ শব্দে গান-বাজনা না করার অনুরোধ জানান। এতে হিন্দু লোকজন রাগান্বিত হয়ে ওঠে। এ সময় কয়েকজন অভিযোগ করে তাদের গায়ে গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়েছে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়।
সেনাতন ধর্মালম্বীদের কয়েকজন এ সময় এতিমখানার উপরে উঠে তল্লাশি করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
তল্লাশিকালে দুইজনকে মারধর করা হয় বলে দাবি করেছে সনাতন নেতারা।
উল্লেখ্য, ঐ সময় বহিরাগতদের মাদরাসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে এলাকার বাসিন্দা ও এতিমখানার ডোনার মো. আলাউদ্দিন এসে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং উভয় পক্ষকে শান্ত করার কিছু সময় পর আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মালম্বীরা ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর এসে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের একটি অপপ্রয়াস।
পরের দিন শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের ডিসি তার কার্যালয়ে কদম মোবারক মসজিদের এতিমখানার সদস্য এবং পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সমন্বয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস প্রদান করে এবং সনাতন নেতৃবৃন্দকে তাদের ঘোষিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করে। তারা বৈঠকে সম্মতি জানালেও পরবর্তীতে কর্মসূচি পালনের জন্য চেরাগী পাহাড় মোড়ে জড়ো হয় এবং বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভকালে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একজন মাদরাসা ছাত্রকে মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সনাতন ধর্মালম্বীদের ব্যানারে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু সনাতন ধর্মী নেতৃবৃন্দ সাম্প্রদায়িক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ওপর মাদরাসা ছাত্রদের পানি বা ইট নিক্ষেপের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাদরাসা এবং তার আশেপাশে এলাকা তল্লাশি করলেও সন্দেহজনক কিছু পায়নি।
সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন এর উসকানিতে কিছু সনাতন ধর্মালম্বী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট শৈবাল দাশ সুমনের অনুসারীরা চেরাগি পাহাড় এলাকায় হিন্দুদের সমবেত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল।
গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সংঘটিত ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছিরের ইন্ধনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের উপদেষ্টা সম্পাদক অয়ন শর্মা, ইসকন নেতা চিন্ময় কুমার দাস ব্রম্মচারী, সাংবাদিক সৌরভ ভট্টাচার্যসহ কিছু ব্যক্তি অপচেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নিউজবিজয়/এফএইচএন