নিজ দেশে মূল্য নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে গম রফতানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ভারত। শুক্রবার (১৩ মে) ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা। শুক্রবার ভারত সরকার জানিয়েছে, ইতোমধ্যে যেসব ঋণপত্র (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলোই শুধু রফতানি করতে দেওয়া হবে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকার দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং প্রতিবেশী ও অন্যান্য অরক্ষিত দেশগুলোর চাহিদাকে সমর্থনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব রপ্তানি চালানের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বিজ্ঞপ্তির আগে ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো যেতে দেওয়া দেওয়া হবে। এছাড়া সরকারি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে অন্য দেশেও গম রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক হলেও বৈশ্বিক রপ্তানিতে তাদের অংশ মাত্র এক শতাংশের মতো। পরিমাণ ও মূল্য উভয় দিক থেকে ভারতীয় গমের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের জন্য আশার কথা, নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ও খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে গম রপ্তানি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের মোট গম রপ্তানির ৫৪ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশে। ওই বছর ভারতীয় গমের শীর্ষ ১০ ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, ওমান ও মালয়েশিয়া।
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৯ শতাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্যের বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে। হু হু করে দাম বেড়েছে গমেরও।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক হলেও রপ্তানিতে তাদের অংশ মাত্র এক শতাংশের মতো। পরিমাণ ও মূল্য উভয় দিক থেকে ভারতীয় গমের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের মোট গম রপ্তানির ৫৪ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশে। ওই বছর ভারতীয় গমের শীর্ষ ১০ ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, ওমান ও মালয়েশিয়া।
এদিকে ভারতে মার্চের তীব্র তাপপ্রবাহ ফসল উৎপাদনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি ৭.৭৯ শতাংশে উঠে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণে মারাত্মক চাপে রয়েছে ভারত সরকার। এরই জেরে গম রফতানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
তবে এই মাসের শুরুতে ভারতের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সরকার গম রফতানি সীমিত করতে চাইছে না। ওই সময়ে খাদ্য সচিব শুধাংশু পাণ্ডে বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত গমের মজুত থাকায় গম রফতানি সীমিত করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’
সম্প্রতি জার্মানি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় অভিবাসীদের এক আয়োজনে বলেন, বিশ্ব জুড়ে গম সংকট দেখা দেওয়ায় বিশ্বের মানুষের খাবার যোগান দিতে এগিয়ে এসেছে ভারতের কৃষকেরা। তিনি বলেন, ‘মানবতা যখন সংকটের মুখোমুখি হয়, ভারত তখন সমাধান নিয়ে আসে।’
টানা পাঁচ বছর রেকর্ড উৎপাদনের পর ভারত এই বছর তীব্র গরমের কারণে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনে। তাপপ্রবাহের প্রভাব ফসলের মাঠে পড়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১১১.৩ মিলিয়ন টন থেকে নামিয়ে ফেব্রুয়ারিতে ১০৫ মিলিয়ন টন নির্ধারণ করে ভারত।