লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট এস সি স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান কামরুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ভাই নাম ভাঙ্গিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার এবং আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তার বিরুদ্ধে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার বসিয়ে টাকা আত্মসাত বিভিন্ন অনিয়ম,নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ চেয়েছেন এলাকাবাসী।
এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের সামনে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে গতকাল সোমবার দুপুরে স্কুল এলাকায় সংবাদ সন্মেলনে প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন,স্থানীয় এইচ এম ইদ্রিস আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল এই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়টাকে দুর্নীনীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন। বিদ্যালয়রের জমি-জমার লিজের টাকা,গাছ কর্তন,শিক্ষক থেকে শুরু করে ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারীদের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তুলেন। প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে এসব থেকে কোটি কোটি টাকা নিজেই আত্নসাৎ করেছেন বলে জানান। তার এসবের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। কেহ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ভয়ভীতি এবং চাকুরী থেকে অপসারনসহ জীবননাশের হুমকী প্রর্দশন করে থাকেন। কিছু হলেই স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের প্রভাব বিস্তার খাটিয়ে কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে নিজেই একাই সবই সিদ্ধান্ত নিতেন। গত বছর স্কুলের ব্রেঞ্চ নির্মানের কথা বলে কোন রেজুলেশন বা বন বিভাগের কোন অনুমোদন ছাড়াই নিজেই মুল্যবান বেশ কিছু ইউকেলিপটাস গাছ কর্তন করে। এদিকে বেঞ্চ নির্মান বাবদ ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট গ্রহন করে স্কুলের গাছ কর্তন করে তিনি তার বাসার কাজে ব্যবহৃত করে। ১১ বছর যাবত প্রধান শিক্ষক থাকাকালে গোপনে নিজের মনগড়া কমিটি দিয়ে যে সমস্ত পেপার এই জেলায় আসে না সে সমস্ত পেপার কাটিং করে নিজের মত করে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করে থাকে যা এলাকাবাসী বা শিক্ষক পর্যন্ত জানেন না। বলা যায় প্রধান শিক্ষক একনায়কতন্ত্রভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করত। কোন শিক্ষক,এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মামলা-হামলাসহ নানা ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে থাকত।
গত বছর স্কুলের ব্রেঞ্চ নির্মানের কথা বলে কোন রেজুলেশন বা বন বিভাগের কোন অনুমোদন ছাড়াই নিজেই মুল্যবান বেশ কিছু ইউকেলিপটাস গাছ কর্তন করে। এদিকে বেঞ্চ নির্মান বাবদ ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট গ্রহন করে স্কুলের গাছ কর্তন করে তিনি তার বাসার কাজে ব্যবহৃত করে।
বলা যায় প্রধান শিক্ষক একনায়কতন্ত্রভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করত। কোন শিক্ষক,এলাকবাসী প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মামলা-হামলাসহ নানা ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে থাকত। তার অন্যায়,অত্যাচার,অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক এসব বিষয়ে বিদ্যালয় গভর্ণিং বডির পরিচালনা কমিটি ও আদিতমারী ইউএনও নুর-ই-আলম সিদ্দিকীর বরাবরে প্রধান শিক্ষককের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। এদিকে রোববার ও সোমবার (১ ও ২ সেপ্টেম্বর) ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত ০২/১০/২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে মনোয়ারুল ইসলামে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ০৬/১০/২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে যোগদান করে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উক্ত পদটি এমপিওভুক্ত হয়। যাহা ইনডেক্স নম্বর – ১১৫৫১০২, ইআইআইএন নম্বর – ১২২৭১৯ । প্রধান কামরুল ইসলাম ওরফে কাজল তার বাসায় ১৩/০৯/২০১৯ উক্ত সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুলকর প্রধান শিক্ষক ডেকে নিয়ে এমপিওভুক্তির কাজের অজুহাতে তাহার নিকট হতে দুটি সাদা ফাঁকা কাগজে স্বাক্ষর গ্রহণ করেছিলেন। স্বাক্ষরিত ৬ টি ফাঁকা চেক নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন করে। নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখে তার অফিসে শিক্ষকের নিকট এমপিওভুক্তির খরচ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় বিধায় প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম উক্ত স্বাক্ষর সম্বলিত সাদা ফাঁকা কাগজ ব্যবহার করে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম ঘুষ স্বরূপ ১০ লক্ষ টাকা না পেয়ে কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়েই ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারীতে বই উৎসবের সামনে প্রধান শিক্ষক আমাকে সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সামনে অপমান করে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বের করে দেওয়ার সময় বলেছিলেন ” ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন স্কুলে তোমাকে দেখি অথবা বাড়াবাড়ি কর তাহলে জানে মেরে ফেলবো ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফেলবো এবং তোমার পরিবারের সদস্যদের ধ্বংস করবো। পরে তার নিরাপত্তার জন্য আমি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানায় সাধারণ ডায়রি করি। সাধারণ ডায়রি নং – ৯৭১ এবং তাং – ২৫/০১/২০২০ ইং।
বর্তমানে মেধাবী শিক্ষকটি চাকুরী হারিয়ে বেকার অবস্থায় মানবেতর অবস্থায় জীবন- যাপন করতেছে এবং চাকুরী ফিরিয়ে পেতে সবার দ্বারে,দ্বারে ঘুরতেছে।
পরিশেষে অনিয়ম,লুটতরাজ ও দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের অপসারনসহ প্রসাশনের মাধ্যমে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে একটি বিচারের প্রার্থনা করেন।
দশম শ্রেনীর ছাত্রীর বাবা মমিনুল নামের একজন অভিভাবক বলেন,স্কুলের বর্তমানে লেখাপড়ার মান নেই। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতি আর অনিয়মের ভরপুর। বিগতদিনে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম আর দুর্নীতি বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাইত না। তাই এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষককের অপসারনসহ বিচার প্রার্থনা করেন।
সংবাদ সন্মেলনে আসা স্থানীয় মাহবুব খান বাবু বলেন,বর্তমান প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়টিতে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরপুর।এই বিদ্যালয়ে এনটিআরসি এর মাধ্যমে একজন মনোয়ারুল ইসলামের নামের একজন মেধাবী শিক্ষক যোগদান করেছিল। তার কাছ থেকে ঘুষ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। আমরা উপস্থিত মধ্যস্তার মাধমে বিষয়টি সমাধা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রধান সেটা না মেনে ১০ লক্ষ টাকা না দেওয়ায় ঐ মেধাবী শিক্ষককে সাদা কাগজে সহির মাধ্যমে তাকে চাকুরীচূত করে। প্রধান শিক্ষককের অনিয়ম আর দুর্নীতির বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউএনও বরাবরে একটি লিখিত এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে সঠিক একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে প্রশাসনের নিকট হস্ত কামনা করেন।
এ বিষয়ে কুমড়ীরহাট এস সি স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র বর্মন দুঃখ ভারাক্ষান্ত হুদয়ে সাংবাদিকদের জানান, ৩৩ বছর যাবত এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেছি এর আগে অনেক প্রধান শিক্ষককের সাথে চাকুরী করেছি কিন্তু বর্তমান প্রধান শিক্ষক এমন একজন কাহারো কোন কথা,মতামত নেন না। তিনি যাহাই করেন একক সিদ্ধান্তেই করেন। বলা চলে একনায়কতন্ত্রভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। তিনি বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডি খুব গোপনে গঠন করে নিয়োগ বাণিজ্য করে এবং কোন শিক্ষক পর্যন্ত জানে না। বিদ্যলয়ের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন না।ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট সেশন ফি,পরিক্ষার ফি ও বেতন এগুলোর হিসাব আমরা জানি না। এই বিদ্যলয়ের জমির পরিমাপ প্রায় ১৩ একর। প্রতি বছর লিছের টাকা বিদ্যলয়ের নামে একান্টে জমা রাখে কি না সেটাও জানাই না।স্কুলে কিছু মহামুল্যবান গাছ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কেটেছে যাহা কোন টেন্ডার কমিটি পর্যন্ত তিনি করেন নাই। কোন আয় ব্যয়ের বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি উল্টো হুমকী-ধামকী দিয়ে বলে আমি হলাম প্রধান সবকিছুর মালিক কোথায় কোন কাজে আমি ব্যয় করব সে বিষয়ে আপনাদের নাক গলানোর দরকার নাই। প্রধান শিক্ষক ১১ বছর যাবত তার পদে থাকাকালে শিক্ষক/কর্মচারী ও ল্যাব এ্যাসিটেন্টসহ মোট ১৪ জন নিয়োগ প্রদান করেছে। এ সমন্ধে নিয়োগ প্রাপ্তরাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ নিয়েছি। হঠাৎ বিদ্যালয়ে এসে যোগদান করে। তিনি আরও বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে বলব এই বিদ্যালয়টি সকলের সন্মলিত প্রচেষ্টায় চললে ভাল হয়। শিক্ষকরা ও এলাকবাসীরা সন্তুষ্ট থাকবে।সবই সব কিছু জানতে পারবে। পরিশেষে তিনি বলেন,১১ বছর যাবত প্রধান শিক্ষক আমার সাথে কোন বিষয়ে সেয়ার পর্যন্ত করেনি। সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমের ভাই বলে প্রভাব খাটিয়ে একক বিস্তার করত।
এ বিষয়ে কুমড়ীরহাট এস সি স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান কামরুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিব করেন নি।
কুমড়ীরহাট এস সি স্কুল এন্ড কলেজের গভর্ণিং বডি পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুর-ই-আলম সিদ্দিকী সাংবাদিককে বলেন, প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে একটি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত রিপোর্ট আসলে পরিবর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার কথাও শুনেছি।
আরও পড়ুন>>আদিতমারীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে করলেন ইউপি সদস্য
নিউজবিজয়২৪/এফএইচএন