থিসিসের কাজে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রী। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু শাহরিয়ার আলম। সারা দিন সেখানে কাজ করে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে করে ফিরে যাচ্ছিলেন সদরঘাটে। সন্ধ্যার দিকে বাসটি কারওয়ান বাজার এসে জ্যামে আটকে পড়ে। তখন বাসের জানালার পাশে বসে মোবাইলে বোনের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই ছাত্রী। হঠাৎ এক ছিনতাইকারী বাইরে থেকে মোবাইলটি টান দিয়ে দৌড় দেয়।
মুহূর্তের মধ্যেই বাস থেকে নেমে ওই ছাত্রী ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করেন কিন্তু ধরতে পারেননি। মুঠোফোনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র হারিয়ে কারওয়ান বাজারের মূল সড়কের পাশে ইত্তেফাকের গলিতে এসে কাঁদছিলেন। ঠিক তখনই দুই ছিনতাইকারী আরেকজনের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছিল। পেছন থেকে একজন বলছিলেন, ধরেন ধরেন। চিৎকার শুনে ওই ছাত্রী এক ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরেন।
নিজের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া ছিনতাইকারীকে ধরতে না পারলেও আরেক ছিনতাইকারীকে ধরে ক্ষুব্ধ ওই শিক্ষার্থী ছিনতাইকারীকে ধরে কিল-ঘুসি দিতে থাকেন। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে জড়ো হন অনেক মানুষ।
ওই ছাত্রী ছিনতাইকারীর পকেট তল্লাশি করে একটি মোবাইল ফোন পান। তবে সেটি তার নয়। পরে ওই ছিনতাইকারীকে দিয়ে ফোন করে তার সহযোগীকে ডেকে আনেন। এরপর দুই ছিনতাইকারীকে তেজগাঁও থানা-পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
কীভাবে অসীম সাহসিকতায় দুই ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করলেন, তা জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী।
তিনি বলেন, আমি রাজধানীর মিরপুর থেকে আসছিলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা (বন্যপ্রাণী) বিভাগে মাস্টার্স করছি। আমি হাতি নিয়ে গবেষণা করছি। দীর্ঘ এক বছর ধরে থিসিসের কাজে যত কিছু ছিল সব কিছু আমার ফোনেই ছিল। আমি ডাটা নিয়ে তানজিল বাসে আসছিলাম। কারওয়ান বাজার সিগন্যালে বাস জ্যামে আটকায়। তখন আমি ফোনে কথা বলছিলাম আমার বোনের সাথে, জানালার পাশে। হাঠৎ করে বাস ছেড়ে দেওয়ার একটু আগে ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে আমার ফোনটা নিয়ে যায়। ফোনের সাথে আমার হেডফোনও লাগানো ছিল। সাথে সাথে আমি চিৎকার করে উঠলাম। চাচ্ছিলাম, বাসের জানালা দিয়ে বের হয়ে যাই। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। দেখছিলাম, লোকটা সামনে চলে যাচ্ছে। পরে বাস থেকে নেমে যেতে যেতে দেখি ছিনতাইকারী উধাও হয়ে গেছে। রাস্তা পার হয়ে অপর পাশেও যাই, খুঁজি। কিন্তু আমি তাকে (ছিনতাইকারীকে) পাইনি।
না পাওয়ার পর আমি ফিরে আসি। আমার ফ্রেন্ড নেমে যায় বাস থেকে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমার ফ্রেন্ড বাসেই আছে। আবার তানজিল বাসটি ধরার জন্য সামনে চলে যাই। বাসটি ধরার পরে তারা বলেন- আপনার ফ্রেন্ড নেমে গেছে। তখন আমি আবার ফিরে আসি ইত্তেফাক গলির কাছে। ওখানে খুঁজি, আমার ফ্রেন্ডকে খুঁজি। কান্নায় ভেঙে পড়ছিলাম, অস্থির হয়ে পড়ছিলাম।
কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, আপু কী হয়েছে? বললাম, আমার ফোন নিয়ে গেছে। পরে আমার ফ্রেন্ডকে পাই। তখন ইত্তেফাকের গলির সামনে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। তখন দোকানদাররা বলছিলেন, এখানে প্রতিদিনই অহরহ ছিনতাই হচ্ছে। আপনি ফোন পাবেন না। জিডি করেও কোনো লাভ নেই, আপনি ফোন পাবেন না।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আমি চিন্তা করছিলাম বাসায় চলে যাব। এমন সময় দেখি দুজন ছেলে দৌড়ে আসছে। একজন পেছন থেকে বলছে, ধরেন ধরেন, ফোন নিয়ে গেছে।