ঢাকা ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাউনিয়ার বালাপাড়ায় সুলতানের দাম ১২ লাখ

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে ঘরে দেশীয় খাবার খেয়ে বড় হয় সাদ রঙ্গের সুলতান। ঘরের ভিতরে বিদ্যুতের আলোয় সে রং ঝিলিক দেয়। ঝালরের মতো গলার ঝুল। নাকের উপর দিয়ে দড়ি পরানো হয়েছে। গলাও প্যাঁচানো। এভাবে চারটি লম্বা দড়ি দিয়ে সে বাঁধা। বুক কেঁপে ওঠার মতো কালো দুটি চোখ। গম্ভীর মুখে বাদশাহি চালচলন। বিশাল সবল দেহের অধিকারী নাম তার সুলতান। এত বড় যে সুলতানের ওজন এখন প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কেজি। উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে ৮ ফুট।
হোলেস্ট্যান ফ্রিজিয়ান জাতের সুলতানের জন্ম রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের হরিচরনলস্কর বালাপাড়া গ্রামে এক দরিদ্র কৃষকের ঘরে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ভালোবেসে গরুটির মালিক তার নাম রেখেছেন সুলতান। মালিকের নাম নুরল আমীন। তিনি একজন কৃষক। বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই।
নুরল আমীনের প্রায় ৮ বছর আগে একটি গাভি ছিল। সেই গাভি থেকে সুলতানের জন্ম। এটির বয়স সাড়ে তিন বছর। ওই গাভির ২০ কেজি দুধ হতো। রাজাবাবুর জন্য লুৎফর রহমান দুধ বিক্রি করতেন না। দেশীয় খাবার পদ্ধতিতে গরুটি হৃষ্টপুষ্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সুলতানকে বড় করতে তার মাকে বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়া ঋণ করে প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যা করেন। ভালোবেসে নাম দেন সুলতান। দিনে দিনে ওজন বেড়ে গরুটি ৩৭ মণে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় সুলতানকে বিক্রি করা হবে। বিশাল শরীরের অধিকারী হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের লোকজন এটিকে দেখতে ভিড় করছেন। উপজেলার মধ্যে এটিই সব চেয়ে বড় গরু বলে দাবি করেন মালিক নুরল আমীন। তিনি সুলতানের দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, হরিচরনলস্কর বালাপাড়া গ্রামে তিস্তার মানস নদীর পাশে নুরল আমীনের বাড়ি। বসতবাড়ীতে তার একটি গরুর খামার ছিল। খামারের একটি ছোট্ট ঘর। সেখানেই মোটা রশিতে সুলতানকে বেঁধে রাখা হয়েছে। গরুটির ওপরে চলছে একটি ফ্যান। সুলতান ঘরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলে জানান নুরল আমীন। তাকে দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ভিড় করেছে।
গাজিরহাট এলাকা থেকে বিশাল দেহের গরুটি দেখতে এসেছেন জহির রায়হান নামের এক ব্যক্তি। তিনি গরুটির ছবি তুলে নিলেন। তিনি বলেন, গরুটি দেখতে অনেক সুন্দর। অনেক বড় গরু। এত বড় গরু এ উপজেলা মনে হয় আর নেই। গরুর নাম সুলতান শুনেই তিনি দেখতে আসছেন।
কৃষক নুরল আমীন বলেন, তার ২৬ শতাংশ বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমাজমি নেই। সাবলম্বী হওয়ার আশায় তিনি সহ দুই ছেলে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে প্রায় ১০ বছর আগে এই ছোট্ট খামার করি। সুলতান ছাড়াও এ খামারে ছিল ৭ টি গাভি ও ষাঁড় ছিল। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে খামারে গরু লালন পালন করতে তিনি ঋণগ্রস্থ হন। ঋণ পরিশোধে তিনি ইতিপুর্বে পাঁচটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কেজি ওজনের গরুটি ফিজিয়ান জাতের। এর খাদ্যতালিকায় রয়েছে আপেল, মাল্টা, কাঁচা ঘাস, খড়, গম, ধানের গুঁড়া, ভুসি, ভুট্টা ও খুদের ভাত। সব মিলিয়ে সুলতান প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টাকার খাবার খায়। তিনি আরও বলেন, সুলতানকে লালন-পালন করতে প্রাণিসম্পদ থেকে সুযোগ সুবিধা পাইনাই। এরপরও সুলতানকে আমার এবং পরিবারের সবার ভালোই লাগে। অন্যের খেতে কাজ শেষ করেই সুলতানের কাছে চলে আসি। পরিবারের সদস্যের মতো করে গরুটি পালন করেছি। গরুটির পেছনে অনেক শ্রম ছাড়াও প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। স্থানীয়ভাবে অনেক পাইকার এটির ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। তিনি বলেন, বেশি দাম চেয়ে লাভ কি। সুলতানকে এবার কোরবানীর ঈদে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইছেন তিনি।

 

 

 

ট্যাগ:-

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন :-

নিউজ বিজয়ের সম্পর্কে

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকছে না ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি

কাউনিয়ার বালাপাড়ায় সুলতানের দাম ১২ লাখ

প্রকাশিত সময়:- ০৯:৫৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে ঘরে দেশীয় খাবার খেয়ে বড় হয় সাদ রঙ্গের সুলতান। ঘরের ভিতরে বিদ্যুতের আলোয় সে রং ঝিলিক দেয়। ঝালরের মতো গলার ঝুল। নাকের উপর দিয়ে দড়ি পরানো হয়েছে। গলাও প্যাঁচানো। এভাবে চারটি লম্বা দড়ি দিয়ে সে বাঁধা। বুক কেঁপে ওঠার মতো কালো দুটি চোখ। গম্ভীর মুখে বাদশাহি চালচলন। বিশাল সবল দেহের অধিকারী নাম তার সুলতান। এত বড় যে সুলতানের ওজন এখন প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কেজি। উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে ৮ ফুট।
হোলেস্ট্যান ফ্রিজিয়ান জাতের সুলতানের জন্ম রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের হরিচরনলস্কর বালাপাড়া গ্রামে এক দরিদ্র কৃষকের ঘরে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। ভালোবেসে গরুটির মালিক তার নাম রেখেছেন সুলতান। মালিকের নাম নুরল আমীন। তিনি একজন কৃষক। বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই।
নুরল আমীনের প্রায় ৮ বছর আগে একটি গাভি ছিল। সেই গাভি থেকে সুলতানের জন্ম। এটির বয়স সাড়ে তিন বছর। ওই গাভির ২০ কেজি দুধ হতো। রাজাবাবুর জন্য লুৎফর রহমান দুধ বিক্রি করতেন না। দেশীয় খাবার পদ্ধতিতে গরুটি হৃষ্টপুষ্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সুলতানকে বড় করতে তার মাকে বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়া ঋণ করে প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যা করেন। ভালোবেসে নাম দেন সুলতান। দিনে দিনে ওজন বেড়ে গরুটি ৩৭ মণে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় সুলতানকে বিক্রি করা হবে। বিশাল শরীরের অধিকারী হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের লোকজন এটিকে দেখতে ভিড় করছেন। উপজেলার মধ্যে এটিই সব চেয়ে বড় গরু বলে দাবি করেন মালিক নুরল আমীন। তিনি সুলতানের দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, হরিচরনলস্কর বালাপাড়া গ্রামে তিস্তার মানস নদীর পাশে নুরল আমীনের বাড়ি। বসতবাড়ীতে তার একটি গরুর খামার ছিল। খামারের একটি ছোট্ট ঘর। সেখানেই মোটা রশিতে সুলতানকে বেঁধে রাখা হয়েছে। গরুটির ওপরে চলছে একটি ফ্যান। সুলতান ঘরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলে জানান নুরল আমীন। তাকে দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ভিড় করেছে।
গাজিরহাট এলাকা থেকে বিশাল দেহের গরুটি দেখতে এসেছেন জহির রায়হান নামের এক ব্যক্তি। তিনি গরুটির ছবি তুলে নিলেন। তিনি বলেন, গরুটি দেখতে অনেক সুন্দর। অনেক বড় গরু। এত বড় গরু এ উপজেলা মনে হয় আর নেই। গরুর নাম সুলতান শুনেই তিনি দেখতে আসছেন।
কৃষক নুরল আমীন বলেন, তার ২৬ শতাংশ বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমাজমি নেই। সাবলম্বী হওয়ার আশায় তিনি সহ দুই ছেলে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে প্রায় ১০ বছর আগে এই ছোট্ট খামার করি। সুলতান ছাড়াও এ খামারে ছিল ৭ টি গাভি ও ষাঁড় ছিল। গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে খামারে গরু লালন পালন করতে তিনি ঋণগ্রস্থ হন। ঋণ পরিশোধে তিনি ইতিপুর্বে পাঁচটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কেজি ওজনের গরুটি ফিজিয়ান জাতের। এর খাদ্যতালিকায় রয়েছে আপেল, মাল্টা, কাঁচা ঘাস, খড়, গম, ধানের গুঁড়া, ভুসি, ভুট্টা ও খুদের ভাত। সব মিলিয়ে সুলতান প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টাকার খাবার খায়। তিনি আরও বলেন, সুলতানকে লালন-পালন করতে প্রাণিসম্পদ থেকে সুযোগ সুবিধা পাইনাই। এরপরও সুলতানকে আমার এবং পরিবারের সবার ভালোই লাগে। অন্যের খেতে কাজ শেষ করেই সুলতানের কাছে চলে আসি। পরিবারের সদস্যের মতো করে গরুটি পালন করেছি। গরুটির পেছনে অনেক শ্রম ছাড়াও প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। স্থানীয়ভাবে অনেক পাইকার এটির ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। তিনি বলেন, বেশি দাম চেয়ে লাভ কি। সুলতানকে এবার কোরবানীর ঈদে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইছেন তিনি।