ঈদের দিন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন ফাঁকা। দিনের বেলায় কোনো ট্রেনের শিডিউল না থাকায় চেনা রেলস্টেশনও হয়ে উঠেছে অচেনা।
ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে তবে ২ এপ্রিল থেকে। সেদিন থেকেই পুরোদমে ট্রেন চলবে।
শিডিউল না জানার কারণে কিছু যাত্রী স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন। তারা বলছে, ঈদের দিন ট্রেন চলবে না, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যাত্রীদের সুবিধার্থে যদি আগে থেকেই ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতো, তাহলে তাদের এই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।
সোমবার (৩১ মার্চ) কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, দুই একটি লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলেও প্ল্যাটফর্মগুলো ফাঁকা। টিকিট কাউন্টার তালাবদ্ধ। ঈদযাত্রার কয়েকদিনের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল না।
অন্য সময়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও গাড়ির যে সারি দেখা যায়, তা আজ চোখে পড়েনি। বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েক যাত্রী এলেও তারা ট্রেন থাকায় চলে যাচ্ছেন।
স্টেশন থেকে বেরিয়েই কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন তিনি। ঝামেলা এড়াতে বেছে নেন ঈদের দিনটিকে। কিন্তু কপাল মন্দ। চলছে না ট্রেন।
তিনি মিডিনয়াকে বলেন, কমলাপুর এসে শুনি, আজ দিনে কোনো ট্রেন নেই। নারায়ণগঞ্জ থেকে ৮০০ টাকা সিএনজি নিয়ে সরাসরি এখানে চলে এসেছি। আগে জানলে বাসেই চলে যেতাম। এখানে এসে পরিবার নিয়ে সেই ঝামেলাতেই পড়তে হলো।
আরও পড়ুন>>উৎসবের আমেজে সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন
রাজধানীর সদরঘাটের কাপড়ের ব্যবসায়ী মো. সুজন মোল্লা। ঈদের বেচা কেনা শেষ হয় গত রাতে। তাই আজ সকালেই গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য কমলাপুর আসেন। এসে শুনতে পান দিনে কোনো ট্রেন নেই।
তিনি বলেন, ভেবেছিলাম ঈদের দিন সকালে বাড়ি চলে যাব। বাড়ি গিয়ে নামাজ পড়বো। শেষ পর্যন্ত এখানেই ঈদের নামাজ পড়লাম। পরিবারের সঙ্গে আর ঈদের নামাজ পড়া হলো না।
ট্রেন না পেয়ে কিছুটা হতাশ সুজন বলেন, যাই হোক, এখন বাস স্ট্যান্ডে যাব। সেখান থেকে কোনো একটা বাসে করে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি যাব। ঈদের দিন ট্রেন চলবে না, বিষয়টি আগে থেকে যদি প্রচার করা হতো, তাহলে অনেকেই এই বিড়ম্বনার হাত থেকে বেঁচে যেতেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঈদে বহু যাত্রী ট্রেনে যাত্রা করেন। এবার আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৭১টি ট্রেন চলাচল করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদের ফিরতি যাত্রায় ঢাকামুখী ৩০ হাজার ৪৯১টি টিকিট বিক্রি করছে। গত কদিন কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা অভিমুখী ৯টি ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকামুখী ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী ট্রেনের টিকিট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঈদযাত্রা নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উৎসবমুখর করতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদযাত্রার শুরু থেকে টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্মসহ সব জায়গায় র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যের পাশাপাশি রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আনোয়ার হোসেন মিডিয়াকে বলেন, আজ ঈদের দিন আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনের বেলা সবাই ছুটিতে রয়েছেন। রাতে আমাদের দুটি ট্রেন চলবে। ভাওয়াল এক্সপ্রেস রাত ৮টা ৩০ মিনিটে দেওয়ানগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, আজ শুধু এই দুই ট্রেনই চলবে। আগামীকালও কিছু কম চলবে। ৭১টি ট্রেনের মধ্যে ৪৫টি ট্রেন দিনের বিভিন্ন সময় ছেড়ে যাবে। ২ এপ্রিল থেকে আমাদের ফিরতি ইদযাত্রা শুরু হবে। সেদিন থেকে আগের শিডিউল মেনে ট্রেন যথারীতি সব রুটে চলবে।
রাজধানীতে বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। এবারের ঈদুল ফিতরে সরকারি ছুটি নয়দিন।
নিউজ বিজয় ২৪ডট কম/এফএইচএন