ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না এসপি জসীম, তুলতেন নিয়মিত মাসোহারা

 
   NewsBijoy24.Com সর্বশেষ খবর পেতে টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অবৈধ পথে আয়-রোজগার করে টাকার কুমির হয়েছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে ঝিলপাড় ২ নম্বর সড়কের ২৯৯/৯ নম্বর বাড়িটি জসীম উদ্দীন মোল্লার মালিকানাধীন। সেই ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নিয়ে ডুপ্লেক্সে তিনি পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলার ছয় ফ্ল্যাটে রয়েছেন ভাড়াটিয়ারা।

বর্তমানে ওই বাড়ির প্রধান ফটকে একটি ‘টু-লেট’ ঝুলছে। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুস সাত্তার জানান, কেবল নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়িটির কোনো ফ্ল্যাট খালি নেই।

এই বাড়ি ছাড়াও ঢাকায় এবং গোপালগঞ্জে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার আরও কিছু সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। মিরপুর বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালে অধীনস্থ থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, জসীম উদ্দীন অর্থ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না এবং নিয়মিত মাসোহারা সংগ্রহ করতেন। রাজনৈতিক তদবিরে আসামিদের ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিতেন।

জানা গেছে, টুঙ্গিপাড়া মৌজায় জসীম উদ্দীনের অন্তত ২৫ কাঠার জমি আছে, যার মূল্য ৫০ লাখ টাকার ওপরে। এছাড়া কান্দিলাল শাপলার বিলে তার একটি ১২ বিঘার মাছের ঘের রয়েছে, যা প্রায় দেড় কোটি টাকা দামের। ঢাকার মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীতে এবং পূর্বাচলে তার আরও দুটি ফ্ল্যাট এবং জমি রয়েছে। এই সম্পদগুলো বেশিরভাগ সময় মিরপুর বিভাগে থাকা অবস্থায় অর্জিত হয়। তার পরিবারের জন্য একটি প্রাইভেট কারও রয়েছে। এছাড়াও তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জসীম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবা লাল মিয়া পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করতেন। এলাকাবাসীর দাবি, লাল মিয়া মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন এবং সেই সুবিধা নিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন জসীম।

টুঙ্গিপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, উপজেলার ৪১৮ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২২ জন ভুয়া বলে অভিযোগ রয়েছে, যেখানে লাল মিয়ার নামও রয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জসীম উদ্দীন ২০০৫ সালে ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার পদে চাকরি শুরু করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ডিএমপিতে কাটিয়েছেন, বিশেষত ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় বিভিন্ন পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর জসীমকে মিরপুর থেকে ডিএমপি সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২১ আগস্ট তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলি করা হয়।

মিরপুরে দায়িত্ব পালনকালীন সাবেক ও বর্তমান একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জসীম উদ্দীন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করতেন। এক পর্যায়ে মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অন্তত ৩৫টি মামলার আসামি হন।

গত ৩০ অক্টোবর রংপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর প্রথম আসামি হিসেবে সেদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয় জসীম উদ্দীনকে। পরে বিচারিক প্যানেল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাবন্দি থাকায় তার বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।
নিউজবিজয়২৪ডট কম/এফএইচএন

👉 নিউজবিজয় ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন ✅

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন।

NewsBijoy24.Com

নিউজবিজয়২৪.কম একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎসর্গ করলাম আমার বাবার নামে, যাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যের পরশ পরিবারের সুখ-দু:খ,হাসি-কান্না,ব্যথা-বেদনার মাঝেও আপার শান্তিতে পরিবার তথা সমাজে মাথা উচুঁ করে নিজের অস্তিত্বকে মেলে ধরতে পেরেছি।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত

অর্থ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না এসপি জসীম, তুলতেন নিয়মিত মাসোহারা

প্রকাশিত সময় :- ০৪:০১:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
 
   NewsBijoy24.Com সর্বশেষ খবর পেতে টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অবৈধ পথে আয়-রোজগার করে টাকার কুমির হয়েছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে ঝিলপাড় ২ নম্বর সড়কের ২৯৯/৯ নম্বর বাড়িটি জসীম উদ্দীন মোল্লার মালিকানাধীন। সেই ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নিয়ে ডুপ্লেক্সে তিনি পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলার ছয় ফ্ল্যাটে রয়েছেন ভাড়াটিয়ারা।

বর্তমানে ওই বাড়ির প্রধান ফটকে একটি ‘টু-লেট’ ঝুলছে। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুস সাত্তার জানান, কেবল নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়িটির কোনো ফ্ল্যাট খালি নেই।

এই বাড়ি ছাড়াও ঢাকায় এবং গোপালগঞ্জে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার আরও কিছু সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। মিরপুর বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালে অধীনস্থ থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, জসীম উদ্দীন অর্থ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না এবং নিয়মিত মাসোহারা সংগ্রহ করতেন। রাজনৈতিক তদবিরে আসামিদের ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিতেন।

জানা গেছে, টুঙ্গিপাড়া মৌজায় জসীম উদ্দীনের অন্তত ২৫ কাঠার জমি আছে, যার মূল্য ৫০ লাখ টাকার ওপরে। এছাড়া কান্দিলাল শাপলার বিলে তার একটি ১২ বিঘার মাছের ঘের রয়েছে, যা প্রায় দেড় কোটি টাকা দামের। ঢাকার মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীতে এবং পূর্বাচলে তার আরও দুটি ফ্ল্যাট এবং জমি রয়েছে। এই সম্পদগুলো বেশিরভাগ সময় মিরপুর বিভাগে থাকা অবস্থায় অর্জিত হয়। তার পরিবারের জন্য একটি প্রাইভেট কারও রয়েছে। এছাড়াও তার আরও সম্পদ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জসীম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবা লাল মিয়া পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করতেন। এলাকাবাসীর দাবি, লাল মিয়া মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন এবং সেই সুবিধা নিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন জসীম।

টুঙ্গিপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, উপজেলার ৪১৮ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২২ জন ভুয়া বলে অভিযোগ রয়েছে, যেখানে লাল মিয়ার নামও রয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জসীম উদ্দীন ২০০৫ সালে ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার পদে চাকরি শুরু করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ডিএমপিতে কাটিয়েছেন, বিশেষত ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় বিভিন্ন পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর জসীমকে মিরপুর থেকে ডিএমপি সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২১ আগস্ট তাকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলি করা হয়।

মিরপুরে দায়িত্ব পালনকালীন সাবেক ও বর্তমান একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জসীম উদ্দীন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করতেন। এক পর্যায়ে মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অন্তত ৩৫টি মামলার আসামি হন।

গত ৩০ অক্টোবর রংপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর প্রথম আসামি হিসেবে সেদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয় জসীম উদ্দীনকে। পরে বিচারিক প্যানেল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাবন্দি থাকায় তার বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।
নিউজবিজয়২৪ডট কম/এফএইচএন